দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ
প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
অধ্যায়-মানচিত্র পঠন ও ব্যবহার
প্রশ্ন : বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ভূগোল ক্লাসে বাংলাদেশের একটি প্রশাসনিক মানচিত্র দেখানো হলো। মানচিত্রের নিচে রেখাচিত্রের সাহায্যে স্কেল অঙ্কিত ছিল। শিক্ষক ছাত্রদের স্কেল সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য সেন্টিমিটারে এবং ইঞ্চিতে রেখাচিত্রের সাহায্যে স্কেল এঁকে দেখালেন এবং বর্ণনা করলেন।
ক. মানচিত্র কাকে বলে?
খ. একটি মানচিত্রের মধ্যে কী ধরনের তথ্য থাকে তা কিসের উপর নির্ভর করে?
গ. শ্রেণিতে প্রদর্শিত বাংলাদেশের একটি অনুরূপ মানচিত্র অঙ্কন করে বিভাগীয় শহর চিহ্নিত কর।
ঘ. উদ্দীপকের শিক্ষকের বর্ণিত স্কেল অঙ্কন পদ্ধতি উদাহরণসহ আলোচনা কর।
উত্তর :
ক. প্রচলিত সাংকেতিক চিহ্ন, নির্দিষ্ট স্কেল ও অভিক্ষেপের সাহায্যে সমতল কাগজের ওপর অঙ্কিত সমগ্র পৃথিবী বা এর অংশবিশেষের প্রতিরূপকে মানচিত্র বলে।
খ. একটি মানচিত্রের মধ্যে কী ধরনের তথ্য থাকবে তা নির্ভর করে- ক. স্কেল, খ. অভিক্ষেপ, গ. কনভেনশনাল সাইন, ঘ. মানচিত্র অঙ্কনকারীর দক্ষতা এবং ঙ. মানচিত্র অঙ্কনের ধরনের উপর। একটি বৃহৎ স্কেলের মানচিত্রের মধ্যে একটি স্থানকে বেশি তথ্য দিয়ে দেখানো যায়। এভাবে তথ্য সন্নিবেশিত করে মানচিত্র অঙ্কন করতে দক্ষতার প্রয়োজন হয়।
গ. শ্রেণিতে বাংলাদেশের প্রশাসনিক মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। বাংলাদেশের একটি প্রশাসনিক মানচিত্র অঙ্কন করে বিভাগীয় শহর চিহ্নিত করতে হবে। চিত্র : বাংলাদেশের প্রশাসনিক মানচিত্র (বিভাগীয় শহর)
ঘ. রেখাচিত্রের সাহায্যে কোনো একটি রেখাকে প্রয়োজনীয় ইঞ্চি ও ইঞ্চির ক্ষুদ্র অংশে বা সেন্টিমিটারের ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করে প্রতি ভাগের মান লিখে মানচিত্রের স্কেল প্রকাশ করা হয়। যেমন-১ সেন্টিমিটারে ১০ কিলোমিটার বর্ণনাটিকে রেখাচিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হলে প্রথমে ৫ সেন্টিমিটার একটি রেখা নিয়ে একে ৫ ভাগ করতে হবে; এর প্রতিটি ভাগ ১০ কিলোমিটার। বাম পাশ ১টি ঘর ছেড়ে দিয়ে যথাক্রমে ০, ১০, ২০, ৩০, ৪০ লিখে এর পাশে কিলোমিটার লিখতে হবে। বাম পাশের ঘরটিকে আবার ১০ ভাগে ভাগ (কারণ ১০ কিলোমিটারের ক্ষুদ্র ভাগ দেখাতে হবে) করে প্রতিটি ক্ষুদ্র ভাগের মান লিখতে হবে।
রেখাচিত্রের সাহায্যে ইঞ্চি স্কেলের ক্ষেত্রে একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। ১ ইঞ্চিতে ৪ মাইল বর্ণনাটিকে চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করার সময় প্রথমে ৩ ইঞ্চি একটি রেখা নিয়ে একে তিন ভাগ করতে হবে। বাম দিকের একটি ঘর ছেড়ে দিয়ে যথাক্রমে ০, ৪, ৮ মাইল লিখতে হবে। বাম পাশের ঘরটিকে আবার ৪ ভাগে (কারণ ১ ইঞ্চিতে ৪ মাইল) ভাগ করতে হবে। শূন্য থেকে বাম দিকে যথাক্রমে ১, ২, ৩, ৪ মাইল লিখতে হবে। যেমন :চিত্র : রৈখিক স্কেল
প্রশ্ন : অচিনপুর বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্ররা শিক্ষা সফরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের শ্রেণির দেয়ালে ঝুলানো মানচিত্র থেকে
কোনো তথ্য না পেয়ে তারা ভূগোল শিক্ষকের কাছে বাংলাদেশের পর্যটন স্পট সম্বন্ধে ধারণা নিতে যায়। শিক্ষক বাংলাদেশের একটি মানচিত্র দেখালেন যাতে পাহাড়, বনভূমি, নদী ইত্যাদি চিহ্নিত ছিল। সেই সাথে সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যও দেখানো ছিল। এর স্কেল ছিল ১:১০০,০০০।
ক. ভূচিত্রাবলি মানচিত্রকে ইংরেজিতে কী বলে?
খ. মানচিত্র স্কেল অনুসারে আঁকা হয় কেন?
গ. শ্রেণিতে ঝুলানো মানচিত্রের অনুরূপ মানচিত্র এঁকে দেখাও।
ঘ. ভূগোল শিক্ষক যে মানচিত্র ছাত্রদের দেখান এর বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।
উত্তর :
ক. ভূচিত্রাবলি মানচিত্রকে ইংরেজিতে কোরোগ্রাফিক্যাল বা এটলাস মানচিত্র বলে।
খ. কোনো অঞ্চলের মানচিত্র তৈরির সময় এর আয়তনকে কমিয়ে ক্ষুদ্র করে আঁকতে হয়। একে স্কেল অনুসারে আঁকা বলে। যেহেতু ক্ষুদ্র সমতল কাগজে ভূমির প্রকৃত আয়তন পুরোপুরি তুলে ধরা সম্ভব নয়, তাই স্কেল ব্যবহার করে অপেক্ষাকৃত বৃহৎ আয়তনের ভূমিকে ক্ষুদ্র সমতল কাগজে দেখানো হয়। স্কেল থেকে বোঝা যায় কোন আয়তনকে কতটুকু কমানো হয়েছে। স্কেল যত ছোট হবে মানচিত্রে তত বেশি আয়তন দেখানো যাবে।
গ শ্রেণিতে ঝুলানো মানচিত্রটি দেখে বাংলাদেশের একটি দেয়াল মানচিত্র আকঁতে হবে। চিত্র : বাংলাদেশের দেয়াল মানচিত্র
ঘ. শিক্ষকের দেখানো মানচিত্র ছিল ভূসংস্থানিক মানচিত্র। উদ্দীপকে উলেস্নখ করা হয়েছে মানচিত্রটিতে প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সন্নিবেশিত। যা ভূসংস্থানিক মানচিত্র নির্দেশ করে। এই মানচিত্রগুলো প্রকৃত জরিপকার্যের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। সাধারণত এর মধ্যে প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক দুই ধরনের উপাদান দেখতে পাওয়া যায়। এই মানচিত্রগুলোতে জমির সীমানা দেখানো হয় না। ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে পাহাড়, মালভূমি, সমভূমি, নদী, উপত্যকা, হ্রদ প্রভৃতি দেখানো হয়। অন্যদিকে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য হিসেবে রেলপথ, হাটবাজার, পোস্ট অফিস, সরকারি অফিস, খেলার মাঠ, মসজিদ, মন্দির প্রভৃতি নিখুঁতভাবে দেখানো হয়। বর্তমান যুগে বিমান থেকে ছবি তোলার মাধ্যমে এই মানচিত্রের নবযুগের সূচনা হয়। এই মানচিত্রের স্কেল ১ : ২০,০০০ হলে ভালোভাবে বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ পায়। বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন স্কেলে এই মানচিত্র তৈরি করে। সবচেয়ে আদর্শ ও জনপ্রিয় হচ্ছে ব্রিটিশদের তৈরি করা মানচিত্র যার স্কেল ১ : ২৫,০০০ থেকে ১ : ১০০,০০০ এবং আমেরিকাতে এই মানচিত্রের স্কেল থাকে সাধারণত ১ : ৬২, ৫০০ এবং ১ : ১২৫,০০০। বাংলাদেশে সাধারণত ব্রিটিশ স্কেলটি অনুসৃত হয়।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়