অধ্যায়-মানচিত্র পঠন ও ব্যবহার
অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে জেনে রাখি
মানচিত্র : সমগ্র পৃথিবী অথবা এর কোনো অংশের প্রতিকৃতি নির্দিষ্ট স্কেলে অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার সাহায্যে সমতল কাগজের ওপর আঁকা হলে তাকে মানচিত্র বলে। ইংরেজি 'গধঢ়' শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ মানচিত্র। ল্যাটিন ভাষায় 'গধঢ়ঢ়ধ' থেকে 'গধঢ়' শব্দটি এসেছে। ল্যাটিন ভাষায় কাপড়ের টুকরাকে 'গধঢ়ঢ়ধ' বলে।
মানচিত্রে স্কেল নির্দেশের পদ্ধতি : মানচিত্রে তিনটি পদ্ধতিতে স্কেল নির্দেশ করা হয়। যথা : বর্ণনার সাহায্যে, রেখাচিত্রের সাহায্যে ও প্রতিভূ অনুপাতের সাহায্যে।
মানচিত্রের প্রকারভেদ : সাধারণত মানচিত্রকে স্কেল অনুসারে এবং বিষয়বস্তু অনুসারে এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। স্কেল অনুসারে মানচিত্রকে আবার ক. বৃহৎ স্কেলের মানচিত্র এবং খ. ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
বিষয়বস্তু অনুসারে মানচিত্রকে আবার ক. গুণগত মানচিত্র এবং খ. পরিমাণগত মানচিত্র এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
ক্যাডাস্ট্রাল বা মৌজা মানচিত্র : এই মানচিত্র তৈরি করা হয় সাধারণত কোনো রেজিস্ট্রিকৃত ভূমি অথবা বিল্ডিংয়ের মালিকানার সীমানা চিহ্নিত করার জন্য। আমাদের দেশে আমরা যে মৌজা মানচিত্রগুলো দেখতে পাই সেগুলো আসলে ক্যাডাস্ট্রাল মানচিত্র। মানচিত্রের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে আমাদের গ্রামের মানচিত্রগুলো।
ভূসংস্থানিক মানচিত্র : ভূসংস্থানিক মানচিত্রের আরেক নাম হচ্ছে স্থানীয় বৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র। এই মানচিত্রগুলো প্রকৃত জরিপকার্যের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। সাধারণত এর মধ্যে প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক দুই ধরনের উপাদান দেখতে পাওয়া যায়।
দেয়াল মানচিত্র : দেওয়াল মানচিত্র তৈরি করা হয় সাধারণত শ্রেণিকক্ষে ব্যবহার করার জন্য। সারাবিশ্বকে অথবা কোনো গোলার্ধকে এই মানচিত্রের মধ্যে প্রকাশ করা হয়। দেয়াল মানচিত্রে আমাদের চাহিদামতো একটি দেশ অথবা একেকটি মহাদেশকে আলাদাভাবে প্রকাশ করা হয় বড় অথবা ছোট স্কেলে।
ভূচিত্রাবলি বা এটলাস মানচিত্র : মানচিত্রের সমষ্টিকে ভূচিত্রাবলি (এটলাস) বলে। এই মানচিত্রকে সাধারণত খুব ছোট স্কেলে করা হয়। এটি প্রাকৃতিক, জলবায়ুগত এবং অর্থনৈতিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করে তৈরি করা হয়।
প্রাকৃতিক মানচিত্র : যে মানচিত্রে কোনো দেশ বা অঞ্চলের বিভিন্ন প্রাকৃতিক ভূমিরূপ যেমন পর্বত, মালভূমি, মরুভূমি, নদী, হ্রদ ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য থাকে তাকে প্রাকৃতিক মানচিত্র বলে।
সাংস্কৃতিক মানচিত্র : বিভিন্ন স্থানের অর্থনৈতিক অবস্থা, বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রের সীমা, ঐতিহাসিক কোনো স্থান বা স্থাপত্য, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সমাজ ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে যে মানচিত্র তৈরি হয় তাকে সাংস্কৃতিক মানচিত্র বলে।
স্থানীয় সময় (খড়পধষ :রসব) : পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে। পৃথিবীর যে অংশটি পূর্ব দিকে সেই অংশটিতে আগে সূর্যোদয় বা সকাল হয়।
পৃথিবীর আবর্তনের ফলে কোনো একটি স্থানে সূর্য যখন ঠিক মাথার উপর আসে অর্থাৎ সূর্য এবং সেই স্থানের কোণ যদি হয় ০ক্ক তখন ওই স্থানে মধ্যাহ্ন। ওই স্থানের ঘড়িতে তখন দুপুর ১২টা ধরা হয়। এই মধ্যাহ্ন থেকেই দিনের অন্যান্য সময়গুলো ঠিক করা হয়। এভাবে আকাশে সূর্যের অবস্থান থেকে যে সময় স্থির করা হয় তাকে স্থানীয় সময় বলে।
প্রমাণ সময় (ঝঃধহফধৎফ ঞরসব) : দ্রাঘিমারেখার ওপর সূর্যের অবস্থানের ভিত্তিতে আমরা সময় ঠিক করি। এভাবে মধ্যাহ্ন সূর্যের অবস্থানকে সেই স্থানের দুপুর ১২টা ধরে স্থানীয় সময় নির্ধারণ করলে সাধারণত একটি বড় দেশের মধ্যে সময়ের গণনার বিভ্রাট হয়। এই সময়ের বিভ্রাট থেকে বাঁচার জন্য প্রত্যেক দেশে একটি প্রমাণ সময় নির্ধারণ করা হয়।
মানচিত্রে জিপিএস : বর্তমানে মানচিত্র তৈরি, পঠন এবং ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে আধুনিক ব্যবহার হচ্ছে জিপিএস এবং জিআইএস। কোনো জিপিএস দ্বারা কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানের অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ, উচ্চতা ও দূরত্ব জানা যায়। এছাড়া ওই স্থানের উত্তর দিক, তারিখ ও সময় জানা যায়।
জিআইএস : ভৌগোলিক তথ্য সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ ব্যবস্থাকে সংক্ষেপে জিআইএস বলে। জিআইএসে কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা হয়। বর্তমানে ভূমি ব্যবস্থাপনাসহ নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা, জনসংখ্যা বিশ্লেষণসহ প্রায় অধিকাংশ কাজেই এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে।
-ইংরেজি 'সধঢ়' শব্দের প্রতিশব্দ হলো মানচিত্র।
-পৃথিবী বা কোনো অঞ্চল বা এর অংশবিশেষকে সমতল ক্ষেত্রের উপর অঙ্কন করাকে বলে- মানচিত্র।
-ভূপৃষ্ঠের কোনো ছোট বা বৃহৎ অঞ্চলকে উপস্থাপন করে- মানচিত্র।
-কোনো অঞ্চল বা দেশের ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, উদ্ভিদ, মাটি, পানি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা দেয়- মানচিত্র।
-মানচিত্রের স্কেল প্রকাশ করা হয়- বর্ণনার মাধ্যমে।
-মানচিত্র অংকন করা হয়- সমতল পৃষ্ঠে।
-আগের দিনে ম্যাপ আঁকা হতো-কাপড়েরর উপর।
-মানচিত্রের ভাষা হলো- রং, রেখা, সংকেত।
-মানচিত্রের যে তথ্য থাকে তা নির্ভর করে-স্কেল, অঙ্কনের দক্ষতা, অভিক্ষেপ ইত্যাদির উপর।
-মানচিত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-আধুনিক সভ্যতায়।
-বৃহৎ স্কেলের মানচিত্রের উদাহরণ- মৌজা মানচিত্র।
-ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্রের উদাহরণ- ভূচিত্রাবলি মানচিত্র।
-প্রাকৃতিক, জলবায়ুগত ও অর্থনৈতিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে- এটলাস মানচিত্র তৈরি করা হয়।
-কার্যের উপর ভিত্তি করে মানচিত্র দুই প্রকার- প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক মানচিত্র।
-উপস্থাপিত বিষয়বস্তু হিসেবে মানচিত্র দুই প্রকার- গুণগত
মানচিত্র ও পরিমাণগত মানচিত্র।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়