দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ
প্রকাশ | ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
প্রথম অধ্যায়
প্রশ্ন: রফিক সাহেব একজন সফল ব্যবসায়ী। ব্যবসার কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হলে ভূগোল ও পরিবেশের জ্ঞান থাকতে হয়। এ জন্য তিনি ভূগোল ও পরিবেশ-বিষয়ক বিভিন্ন বইপুস্তক, ম্যাগাজিন সর্বদা পাঠ করেন। এতে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের কৃষি, শিল্প, খনিজ, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রভৃতি সম্বন্ধে সর্বশেষ ধারণা পেয়ে থাকেন।
ক. জড় পরিবেশ কী?
খ. মানুষের ক্রিয়াকলাপ পরিবেশের কিরূপ পরিবর্তন ঘটায়?
গ. ভূগোল ও পরিবেশ পাঠে রফিক সাহেব কীভাবে উপকৃত হন, তা নিজের ভাষায় বর্ণনা কর।
ঘ. রফিক সাহেবের মতো একজন সফল ব্যক্তির ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের জ্ঞান লাভের যথার্থতা নিরূপণ কর।
উত্তর :
ক. পরিবেশের জীব উপাদানকে বাদ দিয়ে অবশিষ্ট উপাদান যেমন মাটি, পানি, বায়ু, পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর, আলো, উষ্ণতা, আর্দ্রতা ইত্যাদি নিয়ে যে পরিবেশ গঠিত হয়েছে, তাকে জড় পরিবেশ বলে।
খ. মানুষের ক্রিয়াকলাপ তার পরিবেশে নানা রকম পরিবর্তন ঘটায়। কারণ, ঘরবাড়ি, অফিস-আদালত, রাস্তাঘাট, শহর-বন্দর নির্মাণ প্রকৃতি ও পরিবেশকে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত করে। মানুষ বনভূমি কেটে তৈরি করে গ্রাম বা শহরের মতো লোকালয়। এতে খাল, বিল, পুকুর ভরাট হয়। সুতরাং মানুষের ক্রিয়াকলাপ পরিবেশের পরিবর্তন ঘটায়।
গ. ভূগোল ও পরিবেশ পাঠে রফিক সাহেব নানাভাবে উপকৃত হন। ভূগোল ও পরিবেশ পাঠে রফিক সাহেব পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা লাভ করে থাকেন। তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রকৃতি, উন্নয়ন প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা পান এবং পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের পরিবর্তনের ধারা বুঝতে পারেন। এ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের পরিবহণ ব্যবস্থা কোথায় উন্নত বা অনুন্নত ভূগোল ও পরিবেশ পাঠে তা তিনি জানতে পারেন এবং পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্পর্কে তিনি জ্ঞান লাভ করতে পারেন। ফলে ব্যবসা প্রসার ও উন্নয়নের জন্য তিনি শিল্প উৎপাদন ও বণ্টন, উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণ, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। সুতরাং, রফিক সাহেব ব্যবসা পরিচালনার জন্য মানুষ, পরিবেশ, সম্পদ, যোগাযোগ, শিল্প উৎপাদন ও বণ্টন, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে ভূগোল ও পরিবেশ পাঠে জ্ঞান অর্জন করে থাকেন।
ঘ. উদ্দীপকের রফিক সাহেব একজন সফল ব্যবসায়ী। এ ক্ষেত্রে ভূগোলের জ্ঞান তার জন্য যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে। শুধু ব্যবসায়ের প্রয়োজন নয়, ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ে জ্ঞান লাভের মাধ্যমে অনেক কিছু জানা যায়, যেমন-- পৃথিবীর কোনো স্থানের প্রকৃতি ও পরিবেশ। পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর, মালভূমি, সমভূমি ও মরুভূমি, তাদের গঠনের কারণ ও বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে কীভাবে জীবজগতের উদ্ভব হয়েছে, সে বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত ধারণা অর্জন। পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবেশের উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং তাদের আচার-আচরণ, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার বৈচিত্র্য। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা, বাণিজ্য, পরিবহণ ও যোগযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মানুষের সামাজিক পরিবেশের কী পরিবর্তন হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টির কারণ, ক্ষয়ক্ষতি ও নিয়ন্ত্রণ, ভূপ্রকৃতির অবস্থান, জলবায়ুর ধরন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অনুযায়ী ভূমি ব্যবস্থাপনা। পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি, গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া ও এর প্রভাব। প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন। সমুদ্র ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা। সুতরাং, রফিক সাহেবের মতো সফল ব্যক্তি হতে হলে ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের জ্ঞান লাভ করা বিশেষভাবে প্রয়োজন।
প্রশ্ন: অরিন্দম চক্রবর্তী ১৯৭৩ সাল থেকে ঢাকার নারিন্দা অঞ্চলের বাসিন্দা। আজ ২০১৬ সালে দাঁড়িয়ে তিনি ভাবছেন অতীতের কথা। পরিবেশের উপাদানগুলো কত দ্রম্নতই না পরিবর্তন হয়েছে। আজ তিনি তার এলাকায় দেখতে পাচ্ছেন এক নতুন ধরনের পরিবেশ।
ক. পরিবেশ কাকে বলে?
খ. মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলির ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব উলেস্নখ কর।
গ. অরিন্দম চক্রবর্তী যে উপাদানগুলোর পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন, এর শ্রেণি বিভাগ কর।
ঘ. অরিন্দম চক্রবর্তী এক নতুন ধরনের পরিবেশের সম্মুখীন। স্থান ও কালের পরিবর্তনে এর স্বরূপ পাঠ্যপুস্তকের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর :
ক. মানুষ যে পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে বসবাস করে, তাকে পরিবেশ বলে।
খ. মানুষের জীবিকা ও অর্থনৈতিক কার্যাবলির ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব ব্যাপক। পরিবেশের প্রভাবে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ পৃথিবীর সর্বত্র এক হয় না। যেমন : প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাবে বাংলাদেশের মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য কোনো অঞ্চলের মানুষ অলস, শ্রমবিমুখ, বিলাসপ্রিয়, অল্পে তুষ্ট, আবার কোনো অঞ্চলের মানুষ কর্মঠ, প্রগতিশীল, পরিশ্রমী, নম্র প্রভৃতি। সুতরাং, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের পরিবেশই সেখানকার মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।
গ. অরিন্দম চক্রবর্তী পরিবেশের উপাদানগুলোর পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। পরিবেশের উপাদান দুই প্রকার। যেমন : জড় উপাদান ও জীব উপাদান। যাদের জীবন আছে, যারা খাবার খায়, যাদের বৃদ্ধি, জন্ম, মৃতু্য আছে, তাদের বলে জীব। গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, মানুষ ও অন্যান প্রাণী হলো জীব। তারা পরিবেশের জীব উপাদান। জীবদের নিয়ে গড় পরিবেশ হলো জীব পরিবেশ। মাটি, পানি, বায়ু, পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর, আলো, উষ্ণতা, আর্দ্রতা হলো পরিবেশের জড় উপাদান। এই জড় উপাদান নিয়ে গড়া পরিবেশ হলো জড় পরিবেশ।
ঘ. অরিন্দম চক্রবর্তী কালের প্রেক্ষিতে আজ তার এলাকায় এক নতুন ধরনের পরিবেশের সম্মুখীন। বস্তুত স্থান ও কালের পরিবর্তনে পরিবেশও পরিবর্তিত হয়। মানুষ যেখানেই বাস করুক, তাকে ঘিরে একটি পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিরাজমান। প্রকৃতির সব দান মিলেমিশে তৈরি হয় পরিবেশ। নদী, নালা, সাগর, মহাসাগর, পাহাড়, পর্বত, বন, জঙ্গল, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, উদ্ভিদ, প্রাণী, পানি, মাটি ও বায়ু নিয়ে গড়ে ওঠে পরিবেশ। কোনো জীবের চারপাশের সব জীব ও জড় উপাদানের সর্বসমেত প্রভাব ও সংঘটিত ঘটনা হলো- ওই জীবের পরিবেশ। পরিবেশ বিজ্ঞানী আর্মসের (অৎসং) মতে, জীবসম্প্রদায়ের পারিপার্শ্বিক জৈব ও প্রাকৃতিক অবস্থাকে পরিবেশ বলে। পার্ক (ঈ. ঈ. চধৎশ) বলেছেন, পরিবেশ বলতে স্থান ও কালের কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে মানুষকে ঘিরে থাকা সব অবস্থার যোগফল বোঝায়। স্থান ও কালের পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবেশও পরিবর্তিত হয়। যেমন- শুরুতে মাটি, পানি, বায়ু, উদ্ভিদ, প্রাণী নিয়ে ছিল মানুষের পরিবেশ। পরবর্তীতে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কার্যাবলি। ফলে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন ধরনের পরিবেশ। অরিন্দম চক্রবর্তীও কালের পরিবর্তনে আজ নারিন্দা এলাকায় এক নতুন পরিবেশ প্রত্যক্ষ করেছেন।