দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ
প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
প্রথম অধ্যায়
প্রশ্ন: নিচের ছকটি দেখে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
গ্রম্নপ-অ গ্রম্নপ-ই পাহাড়-পর্বত প্রাকৃতিক ভূগোল মানুষ মানব ভূগোল জলবায়ু অর্থনৈতিক ভূগোল গাছপালা জীব ভূগোল ক. ভূগোল শব্দটি কে সর্বপ্রথম ব্যবহার করেছেন?
খ. সমুদ্রবিদ্যার বিষয়বস্তু কী?
গ. গ্রম্নপ 'অ'-এর উপাদানগুলো কোন পরিবেশের অন্তর্গত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মানব জীবনে গ্রম্নপ 'অ' এবং গ্রম্নপ 'ই' এর প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
ক. প্রাচীন গ্রিসের ভূগোলবিদ ইরাটসথেনিস সর্বপ্রথম ভূগোল শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
খ. সমুদ্রবিদ্যা প্রাকৃতিক ভূগোলের অন্যতম শাখা। বিভিন্ন মহাদেশের মধ্যে সমুদ্রপথে যোগাযোগ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান, অবনমন, সমুদ্রের পানির রাসায়নিক গুণাগুণ ও লবণাক্ততা নির্ধারণ, সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সমুদ্রবিদ্যার আলোচ্য বিষয়বস্তু।
গ. গ্রম্নপ 'অ'-এর উপাদানগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্তর্গত। পরিবেশ দুই প্রকার। ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশ। প্রকৃতির জড় ও জীব উপাদান নিয়ে যে পরিবেশ, তাকে ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে। এই পরিবেশে থাকে মাটি, পানি, বায়ু, পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর, আলো, গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, মানুষ ও অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণী। আর মানুষের তৈরি পরিবেশ হলো- সামাজিক পরিবেশ। মানুষের আচার-আচরণ, উৎসব-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি, শিক্ষা, মূল্যবোধ, অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি নিয়ে যে পরিবেশ গড়ে ওঠে, তা হলো সামাজিক পরিবেশ। তাই উদ্দীপকে উলিস্নখিত গ্রম্নপ 'অ'-এর উপাদানগুলো তথা পাহাড়-পর্বত, মানুষ, জলবায়ু, গাছপালা ইত্যাদি ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্তর্গত।
ঘ. মানবজীবনে গ্রম্নপ 'অ' এবং গ্রম্নপ 'ই'-এর প্রভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গ্রম্নপ 'অ' প্রাকৃতিক পরিবেশকে নির্দেশ করে এবং গ্রম্নপ 'ই' ভূগোল বিষয়কে নির্দেশ করছে। গ্রম্নপ 'ই' তে ভূগোলের প্রধান দুইটি শাখা, যথা- প্রাকৃতিক ভূগোল ও মানব ভূগোলের সঙ্গে জীবভূগোল ও অর্থনৈতিক ভূগোল উলিস্নখিত হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে সুস্পষ্ট যে, মানবজীবনে ভূগোল ও পরিবেশের প্রভাব অত্যন্ত তাৎপর্যময়। পৃথিবী আমাদের বাসভূমি। মানুষ পৃথিবীতে বাস করে এবং এই পৃথিবীতেই তার জীবনযাত্রা নির্বাহ করে। উদ্দীপকের গ্রম্নপ 'অ' তথা পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে। মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে এই মিথষ্ক্রিয়ার একটি সম্বন্ধ আছে। এই সম্বন্ধের মূলে আছে কার্যকারণের খেলা। উদ্দীপকের গ্রম্নপ 'ই' এই নির্দেশিত ভূগোলের প্রধান কাজ হলো- এই কার্যকারণ উদ্ঘাটন করা। পৃথিবীর পরিবেশের সীমার মধ্যে থেকে মানুষের বেঁচে থাকার যে সংগ্রাম চলছে, সে সম্পর্কে যুক্তিপূর্ণ আলোচনা করে ভূগোল আর মানবজীবনকে করে সুন্দর ও নিরাপদ। বিশেষ করে উলেস্নখ করা যায়, বর্তমানে মানুষের কর্মকান্ডে প্রাকৃতিক পরিবেশের যে ক্ষতি সাধিত হচ্ছে, সার্বিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তা প্রতিরোধে ভূগোল দিকনির্দেশনা দেয়। সুতরাং মানবজীবনে গ্রম্নপ 'অ' এবং গ্রম্নপ 'ই' তথা ভূগোল ও পরিবেশের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: মাসুম তার বাবা ভূগোল বিষয়ের শিক্ষক জনাব আনিসুজ্জামানের কাছে ভূগোল পাঠের উপকারিতা জানতে চাইলে তিনি বললেন, 'ভূগোল পাঠ মানেই বিশ্বের সমস্ত তথ্য হাতের মুঠোয় থাকা।' তিনি ভূগোল বিষয় বেশি পাঠ করতে বললেন। মাসুম তখন তার পাঠ্যবইয়ে উলিস্নখিত মনীষীদের বক্তব্য থেকে তার বাবার উক্তির যথার্থতা অনুধাবন করে।
ক. ভূগোলের আলোচ্য বিষয় কী?
খ. ভূগোলের পরিধি সম্প্রসারিত হয়েছে কেন?
গ. মাসুম পাঠ্যবই থেকে মনীষীদের যেসব বক্তব্য জানতে পারে, তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মাসুমের বাবার উক্তির পক্ষে মতামত দাও।
উত্তর :
ক. প্রকৃতি, পরিবেশ ও সমাজ ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
খ. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ, নতুন নতুন আবিষ্কার, উদ্ভাবন, চিন্তা-ধারণার বিকাশ, সমাজের মূল্যবোধের পরিবর্তন ভূগোলের পরিধিকে অনেক বিস্তৃত করেছে। যেমন : ভূমিরূপবিদ্যা, আবহাওয়াবিদ্যা, সমুদ্রবিদ্যা, মৃত্তিকাবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, সমাজবিদ্যা, অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি ভূগোল বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এর পরিধি অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের মাসুম তার বাবার কথায় উদ্বুব্ধ হয়ে বই থেকে ভূগোল সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষীর বক্তব্য জানতে পারে। গ্রিক পন্ডিত ও ভূগোলবিদ ইরাটসথেনিস (ঊৎধঃড়ংঃযবহবং, জন্ম ২৭৬ খ্রিষ্টপূর্ব) সর্বপ্রথম এবড়মৎধঢ়যু শব্দটি ব্যবহার করেন। অধ্যাপক ম্যাকনি (ঊ. অ. গধপহবব) মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর আলোচনা বা বর্ণনাকে বলেছেন ভূগোল। তার মতে, ভৌত ও সামাজিক পরিবেশে মানুষের কর্মকান্ড ও জীবনধারা নিয়ে যে বিষয় আলোচনা করে, তাই ভূগোল। অধ্যাপক ডাডলি স্ট্যাম্পের (চৎড়ভবংংড়ৎ খ. উঁফষবু ঝঃধসঢ়) মতে, পৃথিবী ও এর অধিবাসীদের বর্ণনাই হলো ভূগোল। অধ্যাপক কার্ল রিটার (ঈধৎষ জরঃঃধৎ) ভূগোলকে বলেছেন পৃথিবীর বিজ্ঞান। রিচার্ড হার্টশোন (জরপযধৎফ ঐধৎঃংযড়ৎহব) বলেছেন, পৃথিবী পৃষ্ঠের পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্যের যথাযথ যুক্তিসঙ্গত ও সুবিন্যস্ত বিবরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয় হলো- ভূগোল। আলেকজান্ডার ফন হামবোল্টের (অষবীধহফবৎ ঠড়হ ঐঁসনড়ষঃ) মতে, ভূগোল হলো- প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিজ্ঞান, প্রকৃতিতে যা কিছু আছে, এর বর্ণনা ও আলোচনা এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং, আমরা বলতে পারি, স্থান ও সময়ের প্রেক্ষিতে মানুষ ও পরিবেশের আন্তঃসম্পর্কের পর্যালোচনাই হলো ভূগোল। মাসুম তার পাঠ্যবই থেকে তাই জানতে পারবে।
ঘ. ভূগোল পাঠের উপকারিতা সম্পর্কে মাসুমের বাবা বলেন, 'ভূগোল পাঠ মানেই বিশ্বের সমস্ত তথ্য হাতের মুঠোয় থাকা।' ভূগোল বিজ্ঞাননির্ভর তথ্যকেন্দ্রিক বিষয়। ভূগোলের সাহায্যে আমরা বিশ্বের কোথায় কি হচ্ছে, তা সহজেই জানতে ও বুঝতে পারি। ভূগোল
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়