দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ
প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন :বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় বর্ণনা কর?
উত্তর : প্রচন্ড শক্তিশালী এবং মারাত্মক ধ্বংসকারী প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় উলেস্নখযোগ্য। স্থান অনুসারে ঘূর্ণিঝড়ের বিভিন্ন নামকরণ হয়। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রমুখী ও ঊর্ধ্বমুখী বায়ুরূপে পরিচিত। এর কেন্দ্রস্থলে নিম্নচাপ এবং চারপাশে উচ্চচাপ বিরাজ করে। বাংলাদেশ আশ্বিন-কার্তিক এবং চৈত্র-বৈশাখ মাসে এ ঘূর্ণিঝড়ের সংঘটন ঘটে। বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর কারণে ঘূর্ণিঝড় হয় এবং একই ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
ঘূর্ণিঝড় একটি সাময়িক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশের পূর্বাংশে বেশি ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফ, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, কুতুবদিয়া, উড়িরচর, চর জব্বার, চর আলেকজান্ডার প্রভৃতি।
প্রশ্ন :ঘূর্ণিঝড় কী কারণে সংঘটিত হয়?
উত্তর : উষ্ণমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় হলো পৃথিবীর যাবতীয় দুর্যোগের মধ্যে তীব্রতার দিক থেকে অন্যতম। কোনো স্থানের বাতাসের তাপ বৃদ্ধি
পেলে সেখানকার বাতাস উপরে উঠে যায়। ফলে ওই অঞ্চলের বাতাসের চাপ কমে যায়। একে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়া বলে। এ সময় আশপাশের অঞ্চল থেকে বাতাস প্রবল বেগে ওই অঞ্চলের দিকে ছুটে আসে। একে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। বাংলাদেশে অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড় হয় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে।
প্রশ্ন :নদীভাঙনের প্রাকৃতিক কারণ উলেস্নখ কর।
উত্তর : যে সমস্ত প্রাকৃতিক কারণে নদীভাঙন হয় তা হলো : জলবায়ুর পরিবর্তন, নদীর প্রবাহপথ ও তীব্র গতিবেগ, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, নদীগর্ভে শিলার উপাদান, রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি, শিলার কঠিনতা, নদীগর্ভে ফাটলের উপস্থিতি, বৃক্ষনিধন ইত্যাদি।
প্রশ্ন :কী ব্যবস্থা অবলম্বনের মাধ্যমে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায় ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকম্প প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা এখনও মানুষের জানা নেই। তবে ভূমিকম্পের সময় আত্মরক্ষা এবং ভূমিকম্পের পর উদ্ধার ও ত্রাণকাজ সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দিতে হবে। ভূমিকম্পে করণীয় সম্পর্কে ধারণা, সচেতনতা ও প্রস্তুতি থাকলে প্রাণহানি অনেকাংশে কমানো সম্ভব, ক্ষয়ক্ষতিও কম হবে।
প্রশ্ন : বাড়িতে থাকাকালীন সময় ভূমিকম্পে করণীয় কী?
উত্তর : বাড়িতে থাকাকালীন সময় ভূমিকম্পে করণীয় বৈদু্যতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। গ্যাসের চুলা বন্ধ করতে হবে। তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হবে।
প্রশ্ন :ভূমিকম্পের সময় মার্কেট বা শপিংমলে থাকলে কী করতে হবে?
উত্তর : ভূমিকম্প একটি মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। মার্কেট বা শপিংমলে থাকাকালে ভূমিকম্প সংঘটিত হলে এক আকস্মিক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে, আগুনও লাগতে পারে। তাই এক্ষেত্রে ভীত না হয়ে প্রথমে নিচু হয়ে বসা বা শুয়ে থাকা শ্রেয় এবং পরে যত দ্রম্নত সম্ভব স্থান ত্যাগ করা বাঞ্ছনীয়।
অধ্যায়-১
সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে জেনে রাখি ভূগোল কাকে বলে : যে শাস্ত্র স্থান ও কালের প্রেক্ষিতে পৃথিবীর জল, স্থল, পাহাড়, পর্বত, মৃত্তিকা, জলবায়ু, উদ্ভিদ, প্রাণী প্রভৃতি এবং এগুলো মানুষের কার্যক্রমকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং পরিবর্তিত হচ্ছে, এর ব্যাখ্যা প্রদান করে তাকে ভূগোল বলে।
ভূগোল কথাটির উৎপত্তি : প্রাচীন গ্রিক পন্ডিত ইরাটসথেনিস সর্বপ্রথম 'এবড়মৎধঢ়যু' শব্দটি ব্যবহার করেন। 'এবড়' ও 'মৎধঢ়যু' শব্দ দুটি মিলে হয়েছে 'এবড়মৎধঢ়যু'। 'এবড়' শব্দটির অর্থ 'ভূ' বা পৃথিবী এবং 'মৎধঢ়যু' শব্দের অর্থ 'বর্ণনা'। সুতরাং 'এবড়মৎধঢ়যু' শব্দটির অর্থ পৃথিবীর বর্ণনা।
ভূগোলের ধারণা : ভূগোল একদিকে প্রকৃতির বিজ্ঞান অন্যদিকে পরিবেশ ও সমাজের বিজ্ঞান। প্রকৃতি, পরিবেশ ও সমাজ সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান হলো ভূগোলের আলোচ্য বিষয়। অধ্যাপক ম্যাকনি (চৎড়ভবংংড়ৎ ঊ. অ. গধপহবব) মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর আলোচনা বা বর্ণনাকে বলেছেন ভূগোল। অধ্যাপক ডাডলি স্ট্যাম্পের (উঁফষবু ঝঃধসঢ়) মতে, পৃথিবী ও এর অধিবাসীদের বর্ণনাই হলো ভূগোল। অধ্যাপক কার্ল রিটার (চৎড়ভবংংড়ৎ ঈধৎষ জরঃঃবৎ) ভূগোলকে বলেছেন পৃথিবীর বিজ্ঞান।
পরিবেশের ধারণা : সাধারণ অর্থে কোনো স্থানের পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে সেই স্থানের পরিবেশ বলে। কোনো স্থানের মানুষের উপজীবিকা ও অর্থনৈতিক জীবন প্রণালির ওপর পরিবেশের প্রভাব সুস্পষ্টরূপে বিদ্যমান। পরিবেশ প্রধানত দুই প্রকার। যথা : ১. ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং ২. সামাজিক পরিবেশ।
ভূগোলের পরিধি : আধুনিক বিশ্বে একটি গতিশীল বিষয় হিসেবে ভূগোলের স্থান নির্ধারিত হয়েছে। প্রতি মুহূর্তে এর উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি ও কার্যাবলি পরিবর্তিত হচ্ছে। এ ছাড়া জ্ঞান-বিজ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক ভূগোল নানা শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হচ্ছে। আধুনিক ভূগোলবিদরা ভূগোলকে প্রধান দুটি শাখায় ভাগ করেছেন। যথা : ক. প্রাকৃতিক ভূগোল ও খ. মানব ভূগোল।
ভূগোল ও পরিবেশ পাঠের গুরুত্ব : ভূগোল হলো বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা, যেখানে পৃথিবী ও পৃথিবীর মানুষ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। আবার বর্তমান বিশ্বে বহুল আলোচিত বিষয় হচ্ছে পরিবেশ। মানুষের উপজীবিকা ও অর্থনৈতিক জীবন প্রণালির ওপর পরিবেশের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভূগোল ও পরিবেশ পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়