দশম অধ্যায়
প্রশ্ন : ভূ-গর্ভস্থ আর ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানির উৎসের মধ্যে কোন ধরনের উৎসের পানি বেশি পাওয়া যায়?
উত্তর : ভূ-গর্ভস্থ আর ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানির উৎসের মধ্যে ভূ-পৃষ্ঠ উৎসের পানি বেশি পাওয়া যায়। সাগর, নদী-নালা, খাল প্রভৃতি ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানির গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তাছাড়া, ঝরনা, বৃষ্টি ইত্যাদি পৃষ্ঠস্থ উৎস থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি পাওয়া যায়। গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে ভূ-গর্ভস্থ পানি পাওয়া গেলে ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানির তুলনায় তা অতি নগন্য।
প্রশ্ন : কোন ধরনের উৎসের পানি খাওয়ার জন্য নিরাপদ?
উত্তর : ভূ-গর্ভস্থ ও ভূ-পৃষ্ঠস্থ উৎসের পানির মধ্যে ভূ-গর্ভস্থ উৎসের পানি খাওয়ার জন্য নিরাপদ। কারণ ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানিতে বিভিন্ন ধরনের মুলোবালি, মা আবর্জনা, রোগ জীবাণু ইত্যাদি মিশে পানি দূষিত করে। এসব পানি খাওয়ার জন্য মোটে নিরাপদ নয়। এসব পানি পান করলে নানা ধরনের রোগব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অপরদিকে ভূ-গর্ভস্থ পানিতে ধুলোবালি, ময়লা আবর্জনা, রোগ জীবাণু না থাকায় এ উৎসের পানি পান করা নিরাপদ।
প্রশ্ন : তোমার এলাকার যেকোনো একটা জলাশয় বেছে নাও যেখানের পানি অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার। এখন ভেবে দেখো, এখানকার পানি কীভাবে বিশুদ্ধ করে ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব? কোন কোন কাজে এই পরিষ্কার পানি ব্যবহার করা যাবে?
উত্তর : আমার এলাকার জলাশয় হিসেবে একটি দিঘি বেছে নিলাম। এ দিঘিটি অনেক বড় এবং এর পানি অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার। এ দিঘির পানি বিশুদ্ধ করে খাবার ও রান্না বান্নার কাজে ব্যবহার করা সম্ভব।
দিঘির পানি বিশুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে প্রথমে দিঘি থেকে পানি সংগ্রহ করব। এরপর এ পানিকে ধারন পদ্ধতির মাধ্যমে বালি ও কাদার মিশ্রণ পৃথক করতে হবে। পৃথককৃত পরিষ্কার পানি ভালোভাবে ফুটানো বা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করে বিশুদ্ধ করে তা ব্যবহার করা যাবে। খাবার ও রান্নাবান্না ছাড়া এই পরিষ্কার পানি আর যে যে কাজে ব্যবহার করা যাবে তা হলো-
১. গোসল করা।
২. থালাবাসন ধোঁয়া
৩. কাপড় কাচা
৪. ঘর মোছা
৫. গবাদি পশুর পানযোগ্য হিসেবে।
প্রশ্ন : পানি দূষণের কারণসমূহ লিখ।
উত্তর :
১। ধূলিবালির কণা, বিভিন্ন প্রকার জীবের মৃতদেহ ফেলা, পলিথিন।
২। পানিতে মলমূত্র ত্যাগ করা, গবাদি পশু গোসল করানো।
৩। কলকারখানার বর্জ্য, বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনা পানিতে ফেলা।
প্রশ্ন : সমসত্ব ও অসমসত্ব মিশ্রণের উদাহরণ লিখ।
উত্তর :
সমসত্ব মিশ্রণ
উদাহরণ : পানি ও চিনির শরবত, সমুদ্রের পানি, স্যালাইন চা, দুধ, বাতাস, ঠান্ডা পানীয় (েেকাকা-কোলা, পেপসি, সেভেন আপ)
অসমসত্ব মিশ্রণ
উদাহরণ : মুড়ি ও চনাচুনের মিশ্রণ ( ঝালমুড়ি)
প্রশ্ন : স্যালাইন ও খিচুড়ি কোনটা কী ধরনের মিশ্রণ? স্যালাইনের ক্ষেত্রে দ্রাবক ও দ্রব্য কোনটি?
উত্তর : স্যালাইন ও খিচুড়ি হলো যথাক্রমে সমসত্ব মিশ্রণ এবং অসমসত্ব মিশ্রণ। স্যালাইনের ক্ষেত্রে দ্রাবক হলো পানি এবং দ্রব হলো স্যালাইন।
প্রশ্ন : সসের বোতল বা ওষুধের বোতলের গায়ে লেখা থাকে 'ব্যবহারের পূর্বে বাঁকিয়ে নিন'- ব্যাখা কর।
উত্তর : যেসব মিশ্রণ কিছুসময় রেখে দিলে তার উপাদানগুলো পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে পড়ে সেসব মিশ্রণকে সাসপেনশন বলে। সসের বোতল বা ওষুধের বোতলের বেলায় ঠিক একই ঘটনা ঘটে। সসের বোতল বা ওষুধের বোতল কিছু সময় রেখে দিলে এর উপাদানগুলো পরস্পর থেকে আলাদা হযয়ে তলাণী আকারে নিচে পড়ে থাকে। তাই এসব খাবার খাওয়ার আগে বা পূর্বে ভালোভাবে ঝাকিয়ে নিলে উপাদানগুলো সমগ্র বোতলজুড়ে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রশ্ন : একটি কাচের গস্নাসে চিনি-পানির দ্রবণ এবং অন্য একটি কাচের গস্নাসে শুধু দুধ নাও। এবার দুটি গস্নাসের মধ্যে টর্চ দিয়ে আলো চালনা করে দেখো তো কোনো বিশেষ কিছু লক্ষ করছ কি না।
উত্তর : দুধ হলো কলয়েডর মিশ্রণ। যখন আলো এটির দ্রবণের মধ্য দিয়া যায়, তখন আলোটি দৃশ্যমান হবে না, কিন্তু যখন কলয়েডের মধ্য দিয়ে যাবে, তখন আলোক রশ্মি কলয়েডের সূক্ষ্ণ কণাগুলো থেকে বিচ্ছুরিত হবে বলে মিশ্রণের ভেতরে সেটা দেখা যাবে। তাই দুধ কলয়েডের মিশ্রণ বলে আলোকরশ্মি দুধের সূক্ষ্ণ কণাগুলো থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে বলে দুধের ভেতর সেটা দেখা যাবে।
ভূগর্ভস্থ পানি :
পরিবেশ রক্ষায় ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে হবে। বিশুদ্ধ পানির বিশাল আধার ভূগর্ভস্থ পানি। বিশ্বের ৯৭ শতাংশ বিশুদ্ধ পানির উৎস এ ভূ-গর্ভস্থ পানি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজ, যেমন-খাওয়ার পানি, রান্না, ধোঁয়ামোছা, গোসলের কাজে আমরা বাসার কল যুগলেই যে পানি পাই তার উৎস ভূ-গর্ভস্থ পানি। ভূ-গর্ভস্থ পানি বলতে বোঝানো হয় মাটির নিচে অবস্থিত পানিকে। বৃষ্টির পানি মাটির স্তর ভেদ করে মাটির নিচে অবস্থিত পাথর ও শিলাখন্ডের মাঝে জমা হয়ে তা ভূ-গর্ভস্থ পানি রূপে জমা হয়। এ ভূ-গর্ভস্থ পানি আমরা কুয়া বা পাম্পের সাহায্যে উত্তোলন করে ব্যবহার করি। কেবল দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজেই নয়, সেচ ও শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহৃত অধিকাংশ পানির জোগান আসে ভূ-গর্ভস্থ পানি থেকে।
আমার দৈনন্দিন কাজে এভাবে অবিরামভাবে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করতে থাকলে পানির স্তর নিচে নেমে যাবে। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। মাটি রসশূন্য হয়ে পরবে। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। তাই পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে গর্ভস্থ পানির ব্যবহার সীমিত করতে হবে। অর্থাৎ অনেক ক্ষেত্রে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার না করে ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
প্রশ্ন :পানির অপর নাম কী?
উত্তর : জীবন।
প্রশ্ন :পানির প্রধান উৎস কী?
উত্তর : বৃষ্টিপাত।
প্রশ্ন :আমরা দৈনন্দিন কাজে কোন ধরনের পানি ব্যবহার করি?
উত্তর : মিঠা পানি।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়