একাদশ অধ্যায়
প্রশ্ন :বনজসম্পদ পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় কীভাবে প্রভাব ফেলে?
উত্তর : বনজসম্পদ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে বনজ সম্পদের পরিমাণ সীমিত। তবুও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য আনয়নে বনভূমির গুরুত্ব অপরিসীম। বনজসম্পদ পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও প্রভাব ফেলে। বনভূমি থেকে কাঠ সংগ্রহ করে তা দিয়ে রেললাইনের স্স্নিপার, মোটরগাড়ি, নৌকা, লঞ্চ, জাহাজ ইত্যাদির কাঠামো, বৈদু্যতিক খুঁটি, রাস্তার পুল প্রভৃতি নির্মাণ করা হয়।
প্রশ্ন :বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের দুটি ব্যবহার লেখ।
উত্তর : বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ। নিচে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের দুটি ব্যবহার উলেস্নখ করা হলো :
ক. শিল্প কারখানার জ্বালানি : প্রাকৃতিক গ্যাস আমাদের শিল্প কারখানাতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে জ্বালানি সমস্যা লাঘব হয়।
খ. বিদু্যৎ উৎপাদন : প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে বিদু্যৎ উৎপাদন করা হয়। যেমন : সিদ্ধিরগঞ্জ, শাহজীবাজার, আশুগঞ্জ, ঘোড়াশাল প্রভৃতি তাপ বিদু্যৎকেন্দ্রে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে তাপ বিদু্যৎ উৎপাদন করা হয়।
প্রশ্ন :কয়লা কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়?
উত্তর : প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে খনিজসম্পদ বিশেষভাবে উলেস্নখযোগ্য। খনিজ সম্পদের মধ্যে কয়লা অন্যতম। শক্তির অন্যতম উৎস কয়লা। কলকারখানা, রেলগাড়ি, জাহাজ প্রভৃতি চালানোর জন্য কয়লা ব্যবহৃত হয়। এছাড়া জ্বালানি হিসেবেও কয়লার ব্যবহার হয়।
প্রশ্ন :কয়লা কীভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় সাহায্য করে?
উত্তর : শক্তির অন্যতম উৎস কয়লা। বনজ সম্পদ রক্ষায় কয়লা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরাসরি কাঠ বা লাকড়ি পোড়ালে পরিবেশের যে দূষণ হয়, কয়লা ব্যবহার করলে সেই দূষণ হয় না। বনজসম্পদ রক্ষা ও দূষণ কমানোর মাধ্যমে কয়লা প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় সাহায্য করে।
প্রশ্ন : কোথায় কঠিন শিলার সন্ধান পাওয়া গেছে?
উত্তর : বাংলাদেশের খনিজ সম্পদের মধ্যে কঠিন শিলা অন্যতম। রেলপথ, রাস্তাঘাট, গৃহ, সেতু ও বাঁধ নির্মাণ এবং বন্যানিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি কাজে কঠিন শিলা ব্যবহৃত হয়। রংপুর জেলার রাণীপুকুর ও শ্যামপুর এবং দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়ায় কঠিন শিলার সন্ধান পাওয়া গেছে। রংপুরের রাণীপুকুর থেকে বিদেশি সহযোগিতায় শিলা উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রশ্ন :বাংলাদেশে কেন সার শিল্পের উন্নয়নের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে?
উত্তর : বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশে ফসল ফলানোর জন্য সারের প্রয়োজন দেখা দেয়। বাংলাদেশে বৃহৎ শিল্পের মধ্যে সার অন্যতম। এদেশে সার শিল্পের উন্নয়নের আশা করা হচ্ছে। কারণ প্রাকৃতিক গ্যাসের সহজলভ্যতা রয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে সার রপ্তানি করতে বাংলাদেশ সক্ষম হবে।
প্রশ্ন :বিশ্বব্যাপী পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমে যাওয়ার দুইটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ লিখ।
উত্তর : বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম কাঁচাপাট ও পাটজাতদ্রব্য রপ্তানিকারক দেশ। এদেশ পৃথিবীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ পাট উৎপাদন করে থাকে। তা সত্ত্বেও পৃথিবীব্যাপী পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমে গেছে। এর দুটি কারণ হলো :
১. পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে কৃত্রিম তন্তুজাত দ্রব্য ব্যবহার শুরু হওয়ায় বিশ্বের বাজারে পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে ও
২. ব্যাপকভাবে বিশ্বব্যাপী পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমে গেছে।
প্রশ্ন :বাংলাদেশে বস্ত্র শিল্প বিকাশের কারণ কী?
উত্তর : বাংলাদেশের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুমিলস্না, নোয়াখালী, যশোর ও পাবনা অঞ্চলে বস্ত্রশিল্পগুলো গড়ে উঠেছে। এ শিল্প বিকাশের পেছনে যে কারণগুলো কাজ করছে তা হলো আর্দ্র জলবায়ু, সহজ ও সুলভ কাঁচামাল আমদানি, স্থানীয় ব্যাপক বাজারপ্রাপ্তি, সুলভ শ্রমিক সরবরাহ এবং পরিবহণ ও যোগাযোগ সুবিধা। ফলে এ শিল্পের দ্রম্নত বিকাশ লাভ ঘটেছে।
প্রশ্ন :বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের স্থানীয়করণের কারণ উপস্থাপন কর?
উত্তর : বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প দ্রম্নত গড়ে ওঠার পেছনে নিম্নলিখিত কারণগুলো কাজ করছে।
১. সহজে পর্যাপ্ত কাঁচামাল প্রাপ্তি
২. মূলধনের প্রাচুর্য
৩. আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজারে ব্যাপক চাহিদা
৪. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা
৫. সরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা
৬. সস্তা শ্রমিক প্রাপ্তি
৭. অনুকূল জলবায়ু
প্রশ্ন : কোন কোন দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়?
উত্তর : বাংলাদেশের পোশাক শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। সত্তর দশকের শেষে এবং আশির দশকের প্রথম থেকে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। এরপর এ শিল্প অতি দ্রম্নত বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের শীর্ষে নিজের স্থান করে নেয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক যেসব দেশে রপ্তানি হয় সেই দেশগুলো হলো- আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, বেলজিয়াম, স্পেন ও যুক্তরাজ্য।
প্রশ্ন :বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব লেখ।
উত্তর : বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হলো পর্যটন শিল্প। এই শিল্পের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক গতিশীলতা, আঞ্চলিক উন্নয়ন, সংস্কৃতি বিনিময়, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও পরিবেশগত উন্নয়ন সম্ভব। পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার পথ সুগম হয়।