সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

হাবিবুর রহমান বাপ্পা, সহকারী শিক্ষক, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
পঞ্চম অধ্যায় অদৃশ্য প্রতিবেশী!! এটা আবার কী? (বিজ্ঞান অনুশীলন বই : পৃষ্ঠা ৫০) উত্তর : আমাদের চারপাশে এমনকি আমাদের দেহে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য অণুজীব, যাদের আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। এরাই হচ্ছে অদৃশ্য অণুজীব। যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, এন্টামিবা, ছত্রাক, শৈবাল ইত্যাদি। আমাদের চারপাশের দৃশ্যমান অনেক প্রতিবেশীর পাশাপাশি এরাও আমাদের জীবনকে ঘিরে রেখেছে। অনেক অণুজীব যেমনি আমাদের ক্ষতি করছে, তেমনি কিছু কিছু অণুজীব আমাদের উপকারও করছে। প্রশ্ন : তোমাদের এলাকায় কী কী সংক্রামক রোগবালাই দেখা যায়? উত্তর : আমাদের এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগ দেখা যায়। যেমন- ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরা, টাইফয়েড, যক্ষ্মা, হাম, গুটিবসন্ত, সোয়াইনফ্লু, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ইবোলা, জলাতঙ্ক, কোভিড-১৯ ইত্যাদি। প্রশ্ন: কী কী কারণে সংক্রামণ রোগ ছড়ায়? উত্তর : যেসব কারণে সংক্রামক রোগ ছড়ায়, যেমন- জীবাণুযুক্ত পানি, বায়ু দূষণ, হাঁচি-কাশি সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত পেস্নট, গস্নাস, চেয়ার-টেবিল, টয়লেট, জামাকাপড়, মশার কামড়, কুকুরের কামড় ইত্যাদি। প্রশ্ন: কী কী করলে সংক্রামক রোগ থেকে দূরে থাকা যায়? উত্তর : যেসব কাজ করলে সংক্রামক রোগ থেকে দূরে থাকা যায়, যেমন- সুষম খাদ্য গ্রহণ করা, নিরাপদ পানি ব্যবহার করা এবং হাত জীবাণুমুক্ত রাখা। এ ছাড়া ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। হাঁচি-কাশির সময় টিসু্য, রুমাল বা হাত দিয়ে মুখ ঢাকা, চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। বাড়ির আশপাশে পানি জমতে পারে, এমন আবর্জনা যেমন- কৌটা, টায়ার, ফুলের টব ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে। কারণ, এখানে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া রোগের বাহক মশা ডিম পাড়ে। প্রয়োজনীয় টিকা নিয়ে এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করেও আমরা রোগমুক্ত থাকতে পারি। তোমাদের প্রত্যেক জোড়ায়/দলের একজন সদস্যের এলাকার এমন একটি সংক্রামক রোগ বাছাই করে নিবে, যেটা তার এলাকায় বিদ্যমান। যার এলাকার সংক্রামক রোগ বাছাই করা হয়েছে, তার এলাকায় সুবিধাজনক সময় উক্ত সংক্রামক রোগের তথ্য জোড়ায়/দলে সংগ্রহ করবে। (বিজ্ঞান অনুশীলন বই : পৃষ্ঠা ৫০) প্রশ্ন: জলাতঙ্ক কী? (বিজ্ঞান অনুশীলন বই : পৃষ্ঠা ৫১) উত্তর : জলাতঙ্ক একটি তীব্র ভাইরাল রোগ, যা সংক্রমিত কোনো প্রাণীর (বিশেষত কুকুর) লালা থেকে ছড়ায়। এই রোগটি হাইড্রোফোবিয়া নামেও পরিচিত। প্রশ্ন: জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণসমূহ উলেস্নখ কর। (বিজ্ঞান অনুশীলন বই : পৃষ্ঠা ৫২) উত্তর : জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণসমূহ নিম্নরূপ- ১. প্রথমে জ্বর শুরু হয়। ২. শরীরে অস্বাভাবিক এক বিষণ্নতা আসে। ৩. আস্তে আস্তে ভয়ানক খিঁচুনি শুরু হয়। ৪. পানির তেষ্টায় বুক ফেটে যেতে চায়। ৫. পানি মুখে দিলেই ভয়ঙ্কর খিঁচুনি হয়। প্রশ্ন: ভাইরাসের গঠন ব্যাখ্যা কর। (বিজ্ঞান অনুশীলন বই : পৃষ্ঠা ৫৪) উত্তর : ক্ষমতাসম্পন্ন অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া ভাইরাসকে দেখা যায় না। ভাইরাস গোলাকার, দন্ডাকার, ব্যাঙাচির মতো ইত্যাদি আকৃতির হতে পারে। ভাইরাসকে অণুজীব হিসেবে বিবেচনা করলেও এগুলোর আসলে স্বাধীন জীবন নেই। পরিবেশে এগুলো থাকে নির্জীব কণা হিসেবে। কিন্তু অন্য কোনো জীবের কোষে প্রবেশ করার পর ভাইরাস জীবের মতো আচরণ করতে পারে। ভাইরাসের দেহে কোষপ্রাচীর, সুসংগঠিত নিউক্লিয়াস, সাইটোপস্নাজম ইত্যাদি কিছুই নেই। তাই ভাইরাস দেহকে অকোষীয়ও বলা হয়। এগুলো শুধু আমিষ (প্রোটিন) আবরণ ও নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ বা আরএনএ) নিয়ে গঠিত এগুলোর আমিষ আবরণ থেকে নিউক্লিক অ্যাসিড বের হয়ে গেলে এগুলোর জীবনের সব লক্ষণ হারিয়ে ফেলে। তবে অন্য জীবকোষে প্রবেশের পর যখনই সেগুলো প্রোটিন আবরণ ও নিউক্লিক অ্যাসিডকে একত্র করতে পারে, তখন এগুলো জীবনের সব লক্ষণ ফিরে পায়। অর্থাৎ জীবিত জীবদেহ ছাড়া বা জীবদেহের বাইরে এগুলো জীবনের কোনো লক্ষণ দেখায় না। এ কারণে ভাইরাস প্রকৃত পরজীবী। প্রশ্ন: ব্যাকটেরিয়ার গঠন বর্ণনা কর। (বিজ্ঞান অনুশীলন বই : পৃষ্ঠা ৫৪) উত্তর : ব্যাকটেরিয়া হলো আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত, অসবুজ, এককোষী অণুবীক্ষণিক জীব (অর্থাৎ এগুলোর অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না)। বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ফন লিউয়েন হুক সর্বপ্রথম অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে ব্যাকটেরিয়া দেখতে পান। ব্যাকটেরিয়া কোষ গোলাকার, দন্ডাকার, কমা আকার, পঁ্যাচানো ইত্যাদি ধরনের হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া সরল আণুবীক্ষণিক জীব হলেও সেগুলোর কিন্তু একটি সুগঠিত কোষীয় গঠন রয়েছে। এসব কোষের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা প্রকৃতকোষী বা অকোষীয় অন্য জীবে পাওয়া যাবে না। ব্যাকটেরিয়া আদিকোষী জীব। এর অর্থ, এসব কোষের নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রিকা সুগঠিত নয়। একটি আদর্শ নিউক্লিয়াসের নিজস্ব পর্দা থাকে, যা নিউক্লিয়াসটিকে কোষের অন্য অংশ থেকে পৃথক করে রাখে। কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। সেগুলোর মূল নিউক্লিয়ার বস্তু তথা ডিএনএ (উঘঅ) কোষের প্রোটোপস্নাজমে অবস্থান করে। এগুলোকে নিউক্লিয়েড বলা হয়। ব্যাকটেরিয়ার কোষে মূল নিউক্লিয়ার বস্তু ছাড়াও বৃত্তাকার এক বা একাধিক ডিএনএ দিয়ে তৈরি গঠন থাকে। এগুলোকে বলা হয় পস্নাসমিড। প্রশ্ন : অণুজীব কী শুধুই আমাদের ক্ষতির কারণ, নাকি আমাদের বন্ধু হিসেবেও ভূমিকা রাখে? (বিজ্ঞান অনুশীলন বই : পৃষ্ঠা ৫৪) উত্তর : অণুজীব শুধুই আমাদের ক্ষতির কারণ নয়। এরা আমাদের বন্ধু হিসেবেও ভূমিকা রাখে। যেমন- কিছু কিছু অণুজীবের (যেমন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক) কিছু প্রজাতির বৈশিষ্ট্য বা আচরণ আমাদের উপকারে আসে। যেমন- দই, মাশরুম ইত্যাদি। প্রশ্ন: লুই পাস্তুর আর জোসেফ মাইস্টারের ঘটনাটা শুনে তোমার কী মনে হলো? (বিজ্ঞান অনুশীলন বই : পৃষ্ঠা ৫৬) উত্তর : লুই পাস্তুর আর জোসেফ মাইস্টারের ঘটনাটি শুনে আমার মনে হলো- লুই পাস্তুর যদি সেই সময় জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসায় গবেষণা না করতেন এবং ঝুঁকি নিয়ে জোসেফ মাইস্টারের শরীরে জীবাণু প্রবেশ না করাতন তাহলে তিনি হয়তো মারা যেতেন। জোসেফ মাইস্টারকে সুস্থ করে তুলতে লুই পাস্তুর যে ঝুঁকি নিয়েছিলেন, তা বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা হয়ে আছে। এ ঘটনার মাধ্যমেই জলাতঙ্ক নামক মূর্তিমান আতঙ্কের অবসান ঘটা শুরু হয়। একই সঙ্গে অন্যান্য রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পথ খুলে যায়। প্রশ্ন: এ কাজে তোমরা নতুন কী কী শিখেছ? (বিজ্ঞান অনুশীলন বই : পৃষ্ঠা ৫৬) উত্তর : এ কাজে আমরা অনেক অণুজীব এবং সংক্রামক রোগ সম্পর্কে জেনেছি। নতুন নতুন অনেক সংক্রামক রোগের নাম শিখেছি। সেসব সংক্রামক রোগের কারণ, কোন অণুজীব দ্বারা রোগান্বিত হয়, তা জানতে পেরেছি। এ ছাড়া কাজ করতে গিয়ে সংক্রামক রোগগুলোর প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের ধারণা হয়েছে। আবার কিছু কিছু অণুজীব আমাদের উপকারে আসে আমরা সেসব অণুজীব সম্পর্কেও শিখেছি।