একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র
প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আতাউর রহমান সায়েম, সহকারী শিক্ষক, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
বায়ান্নর দিনগুলো
প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু একজন কয়েদিকে দিয়ে গোপনে কেন কয়েক টুকরা কাগজ আনলেন?
উত্তর : চিঠি লেখার জন্য বঙ্গবন্ধু একজন কয়েদিকে দিয়ে গোপনে কয়েক টুকরা কাগজ আনলেন।
অতিশয় দুর্বলতার কারণে বঙ্গবন্ধু বিছানা থেকে ওঠার শক্তি হারিয়ে ফেলছিলেন। হার্টে ভীষণ প্যালপিটিশন হচ্ছিল। নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছিল, দুহাত কাঁপছিল, তিনি ভাবলেন আর বেশিদিন আয়ু নেই। এমতাবস্থায় একান্ত প্রিয়জন পিতা-মাতা, স্ত্রী এবং রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে চিঠি মারফত কিছু লেখার জন্য একজন কয়েদি মারফত গোপনে কয়েক টুকরা কাগজ আনালেন।
প্রশ্ন : ২১ শে ফেব্রম্নয়ারি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দিদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে কাটানোর কারণ কী?
উত্তর : নূরুল আমীন সরকারের ১৪৪ ধারা জারির কারণে ২১শে ফেব্রম্নয়ারি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দি উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছেন যে, ১৪৪ ধারা জারি করলেই গোলমাল হয়, জারি না করলে গোলমাল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। জেলখানার বন্দি জীবনে বঙ্গবন্ধু বা তাঁর সহবন্দি বাইরের কোনো খবরই পাচ্ছিলেন না। ঢাকা থেকে অনেক দূরের শহর ফরিদপুরেও হরতাল এবং নানা স্স্নোগান সহকারে ছাত্রছাত্রীদের শোভাযাত্রা জেল গেটে আসছিল। এতে করে ঢাকার পরিস্থিতি চিন্তা করে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দি ২১ শে ফেব্রম্নয়ারি উৎকণ্ঠায় কাটালেন।
প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু ২১ শে ফেরুয়ারিতে ছাত্রজনতার মিছিলে গুলি করাকে মুসলিম লীগ সরকারে বড় অপরিণামদর্শিতার কাজ বললেন কেন?
উত্তর : বঙ্গবন্ধু ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করাকে মুসলিম লীগ সরকারের বড় অপরিণামদর্শিতার কাজ বললেন। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখের ভাষা হলো বাংলা। সে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে অস্বীকার করায় পাকিস্তানি শাসকবর্গের প্রতি এদেশবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দেশবাসীর নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদকে অস্ত্রের মুখে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা যে বিরাট মূর্খতা ও আত্মঘাতীমূলক কাজ, সে বিষয়ে ইঙ্গিত করে বঙ্গবন্ধু বললেন, মুসলিম লীগ সরকার কত বড় অপরিণামদর্শিতার কাজ করল। কেননা, জোর করে কোনো জাতির অনুভূতি, চেতনা ও জাগরণকে দাবিয়ে রাখা যায় না।
প্রশ্ন : ১৯৫২ সালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের দমন-পীড়নের চিত্র তুলে ধর।
উত্তর : ১৯৫২ সালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার দমন-পীড়ন চালাতে গিয়ে সমস্ত ঢাকায় ও নারায়ণগঞ্জে এক ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিল।
ক্ষমতাসীন সরকার আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ এমএলএ, খয়রাত হোসেন এমএলএ, খান সাহেব ওসমান আলী এমএলএ এবং মোহাম্মদ আবুল হোসেন ও খন্দকার মোশতাক আহমদসহ শত শত ছাত্র ও কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল। দু-একদিন পরে বেশ কয়েকজন প্রফেসর, মওলানা ভাসানী, শামসুল হক সাহেব ও বহু আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করে। নারায়ণগঞ্জে খান সাহেব ওসমান আলীর বাড়ির ভিতরে ঢুকে লোকজনকে ভীষণ মারধর করে। বৃদ্ধ খান সাহেব ও তাঁর ছেলেমেয়েদের ওপর অকথ্য অত্যাচার চালায়।
প্রশ্ন : অনশনে মৃতু্য সম্পর্কে সিভিল সার্জনের জিজ্ঞাসার জবাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বঙ্গবন্ধু দেশ ও জাতির জন্য তাঁর মৃতু্যতেও দুঃখ নেই বলে জানান।
অনশনে বঙ্গবন্ধু মৃতু্যর কাছাকাছি পৌঁছে যান। এমতাবস্থায় সিভিল সার্জন বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, এভাবে মৃতু্যবরণ করে কি কোনো লাভ হবে? বাংলাদেশ যে আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে। সিভিল সার্জনের প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু বলেন, 'অনেক লোক আছে। কাজ পড়ে থাকবে না। দেশকে ও দেশের মানুষকে ভালোবাসি, তাদের জন্য। জীবন দিতে পারলাম, এই শান্তি।'
প্রশ্ন : ব্যাখ্যা কর- 'হাসু আপা, হাসু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি?'
উত্তর : বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র কামাল তার বড় বোন হাসু বা হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন।এ কথায় দীর্ঘদিন না দেখা জন্মাদাতা পিতার অচেনা হয়ে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।
বঙ্গবন্ধু যখন কারাবন্দি হিসেবে জেলে যান তখন কামাল কয়েক মাসের শিশুমাত্র। দীর্ঘ সাতাশ-আটাশ মাস কারাজীবন শেষে বঙ্গবন্ধু বাড়ি ফিরলে কন্যা হাসু তাঁকে চিনলেও পুত্র কামালের কাছে তিনি অপরিচিতজন। একদিন দুই ভাই-বোন খেলার সময় হাসু কিছুক্ষণ পরপর খেলা রেখে বঙ্গবন্ধুর কাছে এসে 'আব্বা' বলে ডাকছিল। কামাল তৃষ্ণার্ত নয়নে চেয়ে দেখছিল। একপর্যায়ে কামাল তার বড় বোনকে উদ্দেশ করে বলল, 'হাসু আপা, হাসু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি?' এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরবর্তীতে দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেছিলেন, নিজের ছেলেও অনেকদিন না দেখলে ভুলে যায়।