বাংলাদেশের নদ-নদী

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক
চট্টগ্রাম বিভাগ বাঁকখালী নদী বাঁকখালী নদী বাংলাদেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৬৯ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৯৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। কক্সবাজার এই নদীর তীরে অবস্থিত। ভারতের মিজোরাম রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড় থেকে উৎসারিত কিছু স্রোতধারা বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে মিলিত হয়ে সম্মিলিত ধারায় বাঁকখালী নদীর সৃষ্টি করেছে। নদীটি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ও কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মহেশখালী চ্যানেলে পতিত হয়েছে। এই নদী খরস্রোতা ও প্রায় ৬৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। বাঁকখালী নদীর মোহনা থেকে ৬০ কিমি উত্তরে মাতামুহুরী মোহনা এবং মাতামুহুরী মোহনা থেকে আরো ৬০ কিমি উত্তরে শঙ্খ নদীর মোহনা। এখান থেকে আবার ২০ কিমি উত্তরে কর্ণফুলী নদীর মোহনা। আরাকান মহাসড়কের ওপর কর্ণফুলী সেতু, শঙ্খ সেতু, মাতামুহুরী সেতু ও বাঁশখলী সেতু রয়েছে। অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) আরাকান দখল করে উৎপীয়ন-নির্যাতন শুরু করলে হাজার হাজার শরণার্থী বাঁকখালী নদী তীরবর্তী রামু ও কাক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স এদের পুনর্বাসন করেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের সমাধী বাঁকখালী নদীর ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই নদী অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে। নদীপথে এখানে এসেছে বহু আরব বণিক, পর্তুগিজ ও হার্মাদ-আরাকান জলদসু্য। পরে এসেছে ব্রিটিশ বণিক শাসকরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে কক্সবাজারে ব্রিটিশ-মার্কিন সৈন্যসহ মিত্র সৈন্যরা এসে বাঁকখালী নদীতে কাঠের তৈরি জেটি নির্মাণ করে। এখানে অস্ত্র-গোলাবারুদ সরবরাহের জন্য জেটিতে জাহাজ ভিড়ত। নদীটি মূলত কক্সবাজার সদর ও রামুর নিম্নাংশ পর্যন্তই জোয়ার-ভাটা দ্বারা প্রভাবিত। শুষ্ক মৌসুমে এর ঊর্ধ্ব অববাহিকার জলধারা ক্ষীণ হয়ে আসে। মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ নদীর নিম্ন অববাহিকা পাহাড়ি ঢলে বন্যা কবলিত হয়, বিশেষত রামু ও কক্সবাজার এলাকার নিম্ন ভূমি। মিঠা পানির প্রবাহ আটকে রেখে শীতকালীন সেচের মাধ্যমে কৃষি আবাদের সুযোগ বৃদ্ধিতে মোহনার কাছাকাছি এ নদীতে বাংলাদেশের প্রথম রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। শীতকালে বাঁকখালীর জলধারা কমে গেলে দুই তীরে জেগে ওঠা চরে ব্যাপক সবজির চাষ করা হয়। এতে হাজার হাজার কৃষকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়। কক্সবাজার জেলায় সবজি উৎপাদনে বিশাল অবদান রয়েছে বাঁকখালী নদী তীরের। আবার এ নদীর মিষ্টি পানিতে শুষ্ক মৌসুমে চাষ হচ্ছে হাজার হাজার একর জমি। নদীটির জোয়ারভাটা প্রভাবিত উপকূলীয় সমভূমি ব্যাপকভাবে লবণ ও মৎস্য চাষে ব্যবহৃত হয়। বাঁকখালী ৩৫ প্রকার মাছ এবং ১০ প্রজাতির চিংড়ির আবাসস্থল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা।