দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ
প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
অধ্যায়-৪
প্রশ্ন : রূপান্তরিত শিলার দুটি বৈশিষ্ট্য লিখ।
উত্তর : রূপান্তরিত শিলার দুটি বৈশিষ্ট্য হলো :
১. রূপান্তরিত শিলা কেলাসিত বা স্ফটিকাকার।
২. এ শিলায় খনিজ দ্রব্যগুলো সমান্তরাল থাকে।
প্রশ্ন : ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন বলতে কী বোঝ?
উত্তর : ভূপৃষ্ঠে সর্বদা পরিবর্তিত হচ্ছে, কখনো ধীরে, কখনো আকস্মিকভাবে। ভূত্ত্ববিদদের মতে বর্তমানে পৃথিবী যে অবস্থায় আছে কোটি কোটি বছর আগে এ অবস্থায় ছিল না। পৃথিবী সৃষ্টির পর ভূপৃষ্ঠের অনেক রদবদল হয়েছে। পাহাড়-পর্বত নিমজ্জিত হয়েছে সমুদ্রগর্ভে, সমুদ্রগর্ভ উত্থিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে সুউচ্চ পর্বতশ্রেণি। পর্বত ও মালভূমি পরিণত হয়েছে সমভূমিতে। ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন প্রক্রিয়া দুইটি। যথা : আকস্মিক পরিবর্তন ও ধীর পরিবর্তন।
প্রশ্ন : ভূপৃষ্ঠের বেশির ভাগ পরিবর্তন কীভাবে ঘটে?
উত্তর : পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগ এখনও উত্তপ্ত ও গলিত অবস্থায় রয়েছে। এসব উত্তপ্ত বস্তুর মধ্যে তাপ ও চাপের পার্থক্য হলে ভূত্বকে যে আলোড়ন ঘটে তাকে ভূআলোড়ন বলে। এ ভূআলোড়নের ফলেই ভূপৃষ্ঠের বেশির ভাগ পরিবর্তন হয়ে থাকে।
প্রশ্ন : আগ্নেয়গিরির কুফল কী হতে পারে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর :আগ্নেয়গিরির অগ্নু্যৎপাতের ফলে লাভা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম, নগর, কৃষিক্ষেত্র সব ধ্বংস করে। ১৮৭৯ সালে ইতালির ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্নু্যৎপাতের ফলে হারকিউলোনিয়াম ও পাম্পেই নামের দুটি নগর উত্তপ্ত লাভা ও ভস্মরাশির মধ্যে ডুবে গিয়েছিল।
প্রশ্ন : নদীর সঞ্চয়কার্য বলতে কী বোঝ লেখ।
উত্তর : নদীর গতির সব পর্যায়ে কম বেশি সঞ্চয়কার্য দেখা গেলেও নদীর জীবনচক্রের শেষ পর্যায়ে নদীর সঞ্চয়কার্য বেশি হয়। সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চল হলো নদীর শেষ অবস্থা এবং এ পর্যায়ে নদীর নিম্নগতি থাকে। এতে নদী উপত্যকা সর্বাপেক্ষা অধিক প্রশস্ত হয় এবং গভীরতা একেবারে কমে আসে। ফলে নদীবাহিত শিলাচূর্ণ, পলিমাটি, সূক্ষ্ণ বালুকণা প্রভৃতি নদীর স্রোতের সাথে বাহিত হয়ে এ পর্যায়ে এসে নদীগর্ভে ও নদীর উভয় পার্শ্বে জমা হয়। নদীর সঞ্চয় কার্যের ফলে বিভিন্ন ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। যেমন : পলল কেন ও পলল পাখা, পাদদেশীয় পলল সমভূমি, পস্নাবন সমভূমি ইত্যাদি।
প্রশ্ন : নদী কীভাবে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : যখন নদী সমভূমিতে আসে তখন নদী ক্ষয় এবং সঞ্চয় দুটোই করে। নদীর চলার পথে যেখানে নরম শিলা পায় নদী ঠিক সেদিক দিয়ে অগ্রসর হয়। এভাবে নদী ক্ষয় ও সঞ্চয় করতে করতে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে।
প্রশ্ন :বদ্বীপ কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তর : নদীর মোহনায় বদ্বীপ সৃষ্টি হয়। নদীর পানিতে পলিমাটি মিশ্রিত থাকে। এ পলিমাটি নদীর মোহনায় এসে জমতে থাকে। বছরের পর বছর এভাবে জমতে থাকা পলি আস্তে আস্তে 'ব' আকৃতির হতে থাকে এবং একসময় সমভূমির সৃষ্টি করে। এভাবে নদীর মোহনায় বদ্বীপ সমভূমির সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন : বদ্বীপ কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : নদী যখন মোহনার কাছাকাছি আসে তখন তার স্রোত একেবারেই কমে যায়। এতে বালি ও কাদা তলানিরূপে সঞ্চিত হয়। নদীর স্রোত যদি কোনো সাগরে এসে পতিত হয় তাহলে ওই সব বালি, কাদা নদীর মুখে জমে নদীমুখ প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে এর স্তর সাগরের পানির উচ্চতার উপরে উঠে যায়। তখন নদী বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে এই চরাভূমিকে বেষ্টন করে সাগরে পতিত হয়। ত্রিকোণাকার এই নতুন ভূমিকে বদ্বীপ বলে।
প্রশ্ন : পলল পাখা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : পার্বত্য কোনো অঞ্চল থেকে হঠাৎ করে কোনো নদী যখন সমভূমিতে পতিত হয় তখন শিলাচূর্ণ, পলিমাটি প্রভৃতি পাহাড়ের পাদদেশে সমভূমিতে সঞ্চিত হয়ে ত্রিকোণ ও হাতপাখার ন্যায় ভূখন্ডের সৃষ্টি করে। এরূপ পলল ভূমিকে পলল কোণ বা পলল পাখা বলে।
প্রশ্ন : ল্যাকোলিথ পর্বত কাকে বলে ?
উত্তর : পৃথিবীর অভ্যন্তরে অনেক গ্যাস ও গলিত শিলা আছে। অনেক সময় পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে এসব গলিত শিলা বা ম্যাগমা বিভিন্ন ফাটল পথে স্থানান্তরিত হয়ে ভূপৃষ্ঠে বের হয়ে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু অনেক সময় বাধা পেয়ে এগুলো ভূপৃষ্ঠের উপরে না এসে ভূত্বকের নিচে একস্থানে জমাট বাঁধে। ঊর্ধ্বমুখী চাপের কারণে স্ফিত হয়ে ভূত্ব্বকের অংশবিশেষ গম্বুজ আকার ধারণ করে। এভাবে সৃষ্ট পর্বতকে ল্যাকোলিথ পর্বত বলে।
প্রশ্ন :সমভূমি বলতে কী বোঝ?
উত্তর : সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অল্প উঁচু মৃদু ঢাল বিশিষ্ট সুবিস্তৃত ভূমিকে সমভূমি বলে। সমভূমি অঞ্চল মোটামুটি সমতল; এর বিভিন্ন স্থানে উচ্চতার সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়। অর্থাৎ সমভূমি বলতে কম বন্ধুরতা সম্পন্ন ভূমিকে বোঝানো হয়। বিভিন্ন ভূপ্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যেমন : নদী, হিমবাহ ও বায়ুর ক্ষয় ও সঞ্চয় ক্রিয়ার ফলে সমভূমির সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন : স্তূপ পর্বত সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূআলোড়নের সময় ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরে প্রসারণ এবং সংকোচনের সৃষ্টি হয়। এই প্রসারণ এবং সংকোচনের জন্য ভূত্বকে ফাটলের সৃষ্টি হয়। কালক্রমে এ ফাটল বরাবর ভূত্বক ক্রমে স্থানচু্যত হয়। একে চু্যতি বলে। ভূত্বকের এ স্থানচু্যতি কোথাও উপরের দিকে হয়, আবার কোথাও নিচের দিকে হয়। চু্যতির ফলে উঁচু হওয়া অংশকে স্তূপ পর্বত বলে।
প্রশ্ন : সমভূমিতে ঘনবসতি গড়ে উঠেছে কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সমুদ্রপৃষ্ঠে থেকে অল্প উঁচু মৃদু ঢালবিশিষ্ট সুবিস্তৃত ভূমিকে সমভূমি বলে। বিভিন্ন ভূপ্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যেমন- নদী, হিমবাহ ও বায়ুর ক্ষয় ও সঞ্চয় ক্রিয়ার ফলে সমভূমির সৃষ্টি হয়। মৃদু ঢালু ও স্বল্প বন্ধুরতার জন্য সমভূমি কৃষিকাজ, বসবাস, রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য খুবই উপযোগী। তাই সমভূমিতে সবচেয়ে ঘন জনবসতি গড়ে উঠেছে।