একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র
প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আতাউর রহমান সায়েম, সহকারী শিক্ষক, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
বায়ান্নর দিনগুলো
প্রশ্ন : ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলে রওনা হতে বঙ্গবন্ধু দেরি করলেন কেন?
উত্তর : নারায়ণগঞ্জের সকাল বেলার জাহাজে ওঠা বাতিল করে তাঁদের ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলে গমনের বিষয়টি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জানানোর প্রয়োজনে।
কর্তৃপক্ষ বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেবকে আকস্মিক ও অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধু জেল থেকে রওনা করতে দেরি করতে লাগলেন। কেননা নারায়ণগঞ্জ থেকে বেলা ১১টার জাহাজে ওঠা এড়াতে পারলে রাত ১টায় পরবর্তী জাহাজ। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর কাছে তাঁর ঢাকা থেকে ফরিদপুর বদলি হওয়ার খবরটি পৌঁছে দিতে পারবেন।
প্রশ্ন : আর্মড পুলিশের সুবেদার বঙ্গবন্ধুকে খুবই ভালোবাসত এবং শ্রদ্ধা করত কেন?
উত্তর : পাকিস্তান আন্দোলন ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য আর্মড পুলিশের সুবেদার বঙ্গবন্ধুকে খুবই ভালোবাসত এবং শ্রদ্ধা করত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলনের একজন প্রথম সারির কর্মী। আর্মড পুলিশের সুবেদার একজন বেলুচি ভদ্রলোক। পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকালীন তিনি গোপালগঞ্জে ছিলেন। গোপালগঞ্জকে পাকিস্তানভুক্ত করতে মুসলিম লীগের একজন প্রথম সারির কর্মী ও তরুণ নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য আর্মড পুলিশের সুবেদার বঙ্গবন্ধুকে খুবই ভালোবাসত এবং শ্রদ্ধা করত।
প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু ট্যাক্সিওয়ালাকে বেশি জোরে চালাতে নিষেধ করার মূল কারণ কী?
উত্তর : মূলত পথিমধ্যে চেনাজানা কোনো লোকের সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার প্রত্যাশায় বঙ্গবন্ধু ট্যাক্সিওয়ালাকে জোরে চালাতে নিষেধ করলেন।
বঙ্গবন্ধু চাইছিলেন কোনো প্রকারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে তাঁর ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলে আকস্মিক বদলি এবং তাঁদের অনশন ধর্মঘটের খবরটি পৌঁছে দিতে। ঢাকা জেল থেকে ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত এসেও সে কাজটি তিনি করতে পারেননি। আশা ছিল রাস্তায় কোনো চেনাজানা লোককে পেলে তিনি খবরটি পৌঁছে দিতে সমর্থ হবেন। এ কারণে রাস্তায় তিনি এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলেন। কিন্তু ট্যাক্সিওয়ালা বড় বেশি জোরে চালাচ্ছিল। সে কারণে বঙ্গবন্ধু কৌশল করে ট্যাক্সিওয়ালাকে বললেন, 'বেশি জোরে চালাবেন না, কারণ বাবার কালের জীবনটা যেন রাস্তায় না যায়।'
প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু রাতে হোটেলে খেতে গেলেন কেন?
উত্তর : নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে রাজনৈতিক আলাপের প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু রাতে হোটেলে খেতে গেলেন।
বঙ্গবন্ধুর খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জের শামসুজ্জোহা সাহেব, বজলুর রহমান, আলমাস আলীসহ অনেকেই থানায় এসেছিলেন। কিন্তু তাদের থানায় বেশিক্ষণ অবস্থান করতে দেয়া হয়নি। এমতাবস্থায় বঙ্গবন্ধু আশু-রাজনৈতিক আলাপ ও কর্মকৌশল ঠিক করতে নারায়ণগঞ্জের নেতৃবৃন্দকে রাতে কোনো হোটেলে দেখা করতে বললেন। পরিকল্পনা অনুসারে বঙ্গবন্ধু রাতে হোটেলে খেতে গেলেন।
প্রশ্ন : নানা নির্যাতন, নিপীড়ন এমনকি মরণেও কেন বঙ্গবন্ধুর দুঃখ নেই?
উত্তর : অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নানা নির্যাতন, নিপীড়ন এমনকি মরণেও বঙ্গবন্ধুর দুঃখ নেই বলে তিনি নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জানান। রাত ১টার সময় বঙ্গবন্ধু নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সকলের কাছ থেকে বিদায় নেন। এ সময় তিনি বলেন, জীবনে আর দেখা না হতেও পারে। তাই সকলে যেন তাকে ক্ষমা করে দেয়। এরপর তিনি আরও বলেন, একদিন মরতেই হবে, তাই তার কোনো দুঃখ নেই। কেননা, অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে মরার মধ্যে শান্তি আছে। তাই অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নানা নির্যাতন, নিপীড়ন, এমনকি মরণেও বঙ্গবন্ধুর দুঃখ নেই।
প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু তাঁর ফরিদপুর জেলে আসার কথা কীভাবে ফরিদপুরের সহকর্মীদের কাছে পৌঁছালেন?
উত্তর : মহিউদ্দিন ওরফে মহি নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মীর মারফত বঙ্গবন্ধু তাঁর ফরিদপুর জেলে আসার কথা ফরিদপুরের সহকর্মীদের কাছে পৌঁছালেন।
সকালে নাশতা করতে বাইরের এক চায়ের দোকানে গিয়েও বঙ্গবন্ধু ফরিদপুরের পরিচিত কাউকে দেখতে পেলেন না। জেলের দিকে ফেরার সময় ফরিদপুরের ১৯৪৬ সালের ইলেকশনের সময় বঙ্গবন্ধু মুসলিম লীগের ওয়ার্কার ইনচার্জ ছিলেন, সে সময়কার মহিউদ্দিন ওরফে মহি নামের এক কর্মীকে সাইকেলযোগে কোথাও যেতে দেখলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে নাম ধরে ডাকলেন। আইবি'র নিষেধ অগ্রাহ্য করে বঙ্গবন্ধু বর্তমান আওয়ামী লীগ কর্মী মহির মারফত তার ফরিদপুর জেলে আগমন এবং অনশনের কথা ফরিদপুরের সহকর্মীদের কাছে পৌঁছালেন।
প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু আর তাঁর সহবন্দিকে জেল কর্তৃপক্ষ কীভাবে খাওয়াচ্ছিল?
উত্তর : বঙ্গবন্ধু আর তাঁর সহবন্দিকে জেল কর্তৃপক্ষ নাকের ভিতর নল দিয়ে জোর করে খাইয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু আর তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেব দুজনের শরীর খারাপ হওয়ায় জেল-কর্তৃপক্ষ অনশন শুরুর চারদিন পর নাক দিয়ে জোর করে খাওয়াতে শুরু করল। নাকের ভিতর নল ঢুকিয়ে তা পেটের মধ্যে পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। তারপর নলের মুখে একটা কাপের মতো লাগিয়ে দেয়। তাতে একটা ছিদ্র থাকে। সেই কাপের মধ্যে দুধের মতো পাতলা করে খাবার ঢেলে দেয়।
প্রশ্ন : জেল কর্তৃপক্ষ হ্যান্ডকাফ পরানোর লোকজন নিয়ে আসে কেন?
উত্তর : জেল কর্তৃপক্ষের নাকের ভিতর নল দিয়ে জোর করে খাওয়ানোতে আপত্তি জানালে তারা হ্যান্ডকাফ পরানোর লোকজন নিয়ে আসে।
আগে থেকেই মহিউদ্দিন সাহেব পস্নুরিসিস রোগে ভুগছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নাকেও একটা ব্যারাম ছিল। দু'তিনবার নল লাগানোর পরেই নাকে ঘা হয়ে গিয়েছিল। রক্ত আসত আর যন্ত্রণা হতো। এমতাবস্থায় তাঁরা দুজন নল দিয়ে খাবার গ্রহণে আপত্তি জানালে জেল কর্তৃপক্ষ হ্যান্ডকাফ পরানোর লোকজন নিয়ে আসে, বাধা দিলে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে জোর করে খাওয়াবে বলে।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়