একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র
প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আতাউর রহমান সায়েম, সহকারী শিক্ষক, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
বায়ান্নের দিনগুলো
প্রশ্ন :কে মাঝে মাঝে খেলা ফেলে এসে বঙ্গবন্ধুকে 'আব্বা' 'আব্বা' বলে ডাকে?
উত্তর :বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা হাসু বা হাসিনা।
প্রশ্ন :বঙ্গবন্ধু যখন জেলে যান তখন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র কামালের বয়স কত ছিল?
উত্তর :মাত্র কয়েক মাস।
প্রশ্ন :কে বঙ্গবন্ধুর গলা ধরে পড়ে রইল?
উত্তর :বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র কামাল।
প্রশ্ন :বঙ্গবন্ধুর মতে কয়শ' বছর পরে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম?
উত্তর :দুইশ' বছর পরে।
প্রশ্ন :কবে থেকে গ্রামের লোকজন বুঝতে আরম্ভ করেছে যে, যারা শাসন করছে তারা জনগণের আপনজন নয়?
উত্তর :১৯৫২ সাল থেকে।
অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন : শেখ মুজিবুর রহমান অনশন ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
উত্তর :বিনাবিচারে রাজনীতিবিদদের জেলে আটকে রাখার প্রতিবাদস্বরূপ শেখ মুজিবুর রহমান অনশন ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
ভাষা-আন্দোলনে বহু নেতাকর্মী আটক হয়েছিলেন। তার মধ্যে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রায় সাতাশ-আটাশ মাস তাঁকে বিনাবিচারে জেলবন্দি করে রাখা হয়। প্রতিবাদস্বরূপ তিনি ও মহিউদ্দিন সাহেব অনশন শুরু করেন। হয় মুক্তি না হয় মৃতু্য। এ ছিল তাঁদের চিন্তা। অবশেষে তাঁরা অনশন শুরু করলেন।
প্রশ্ন : 'ইয়ে ক্যায়া বাথ হ্যায়, আপ জেলখানা মে' কে, কেন বলেছিলেন?
উত্তর : সুবেদার বেলুচি ভদ্রলোক বঙ্গবন্ধুকে আগে থেকে চিনতেন বলে একথা বলেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা থেকে ফরিদপুর জেলে নেয়ার সময় আর্মড পুলিশের সুবেদার তাকে চিনে ফেলেন। কেননা, পাকিস্তান হওয়ার সময় সুবেদার গোপালগঞ্জে ছিলেন। তিনি ছিলেন বেলুচি ভদ্রলোক। শেখ মুজিবকে বেশ ভালোবাসতেন ও শ্রদ্ধা করতেন। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তিনি তাঁকে প্রশ্নটি করেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উত্তর দেন 'কিসমত'। এরপর তাঁদের ঘোড়ার গাড়িতে তুলে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাটে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রশ্ন : ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ নেয়ার পথে শেখ মুজিব গাড়িতে উঠতে-নামতে দেরি করছিলেন কেন?
উত্তর : শেখ মুজিবুর রহমান এজন্য দেরি করছিলেন যে, যদি কোনো পরিচিত লোককে দেখা যায় তবে তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানাবেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন সাহেবকে ঢাকা জেলখানা থেকে ফরিদপুর নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সকাল এগারোটায় নারায়ণগঞ্জ থেকে লঞ্চে উঠতে হবে। তাই আমলারা তাড়াতাড়ি করছিল। অথচ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বই, খাতা, ব্যাগ ইত্যাদি গোছাতে এবং ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামতে ও ট্যাক্সিতে উঠতে দেরি করছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন যদি পরিচিত কোনো লোক পাওয়া যায় তবে তার কাছে সব খবরাখবর পাঠানো যাবে।
প্রশ্ন : 'দুঃখ আমার নেই'-শেখ মুজিব কেন একথা বললেন?
উত্তর : অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে মরতে বঙ্গবন্ধুর কোনো দুঃখ নেই বলে তিনি প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতিটি করেছেন।
ঢাকা থেকে ফরিদপুর নেয়ার সময় নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাটে যখন জাহাজে উঠলেন তখন আওয়ামী নেতাকর্মী শেখ মুজিবের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পূর্বে তিনি সহকর্মীদের উদ্দেশ করে বললেন, 'জীবনে আর নাও দেখা হতে পারে।' এরপর সকলের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে বলেন, 'মরতে তো একদিন হবেই যদি অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে মরতে পারি তবে সে মৃতু্য হতে আমার কোনো দুঃখ নেই।'
প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধুকে নাকের ভেতর নল দিয়ে খাবার খাওয়ানো হচ্ছিল কেন?
উত্তর : অনশনরত মুজিব যেন মারা না যায় সেজন্য তাঁকে নাকের ভেতর নল দিয়ে তরল খাবার খাওয়ানো হচ্ছিল।
অনশন করার পূর্বে শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিন সাহেব ওষুধ খেয়ে পেট পরিষ্কার করে নিলেন। এরপর অনশন শুরুর দুদিনের মাথায় তাদেরকে হাসপাতালে নিতে হয়। চারদিন চলে গেলে অবস্থা আরো নাজুক হয় এবং দুজনই মুমূর্ষু হয়েপড়েন। ফলে কোনো উপায়ান্তর না দেখে চিকিৎসকরা নাকের মধ্যে নল ঢুকিয়ে তরল খাবার খাইয়েছিলেন। এজন্য বঙ্গবন্ধুর নাকের ভেতর ঘা হয়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু ও তার সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেব অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
উত্তর : ক্ষমতাসীন সরকারের অন্যায় ও নির্যাতনমূলক কর্মকান্ডের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেব অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিলেন।
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেব ছিলেন রাজবন্দি। সরকারের স্বৈরাচারী শাসন, জুলুম ও অন্যায় কাজের প্রতিবাদে তাঁদের বন্দি হতে হয়েছে। অথচ সরকার তাঁদের বছরের পর বছর বিনাবিচারে আটক রাখছে। সরকারের এমন অন্যায় ও নির্যাতনমূলক কাজের প্রতিবাদ করার জন্যই তাঁরা অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিলেন।
প্রশ্ন :জেলের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দির বলার কিছু নেই কেন?
উত্তর : জেলের কর্তাব্যক্তিরা অমায়িক, ভদ্র, শিক্ষিত এবং কর্তব্যকর্মে নিষ্ঠাবান ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দি সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিলে জেলা সুপারিনটেনডেন্ট এবং রাজবন্দিদের ডেপুটি জেলার তাঁদেরকে এ সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার অনুরোধ করেন। জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁদের বলার কিছু নেই। জেলের কর্তাব্যক্তিদের সাথে তাদের কখনো মনোমালিন্য হয়নি। বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর বন্ধু উভয়ে জানেন, সরকারের হুকুমেই জেলের কর্তাব্যক্তিদের চলতে হয়। তাছাড়া তাদের অমায়িক, ভদ্র ও শিক্ষিত আচরণও বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দিকে।
প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দিকে অন্য জেলে পাঠানোর কারণ কী?
উত্তর : ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দিকে অন্য জেলে পাঠায়।
ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেবকে বছরের পর বছর বিনাবিচারে আটক রেখেছে। সরকারের এ অত্যাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ও তার সহবন্দি অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেন। রাজধানী শহর ঢাকার কেন্দ্রীয় জেলের এমন একটি ব্যাপার মুহূর্তে সারা শহরে ছড়িয়ে পড়লে জন-অসন্তোষ বৃদ্ধি পেত। জন-অসন্তোষ ও বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে সরকার তাই ঢাকার বাইরের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের জেলে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দিকে পাঠায়।
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়