তৃতীয় অধ্যায়
দ্বিতীয় সেশন
এবার দল ও উপদলে ভাগ হয়ে বসে যে যেই কোষের অঙ্গাণু নিয়ে কাজ করছ, সেই অংশটুকু অনুসন্ধানী পাঠ থেকে ভালো করে পড়ে নাও। (বিজ্ঞান অনুশীলন বই : পৃষ্ঠা ৩২)
ওই কোষ অঙ্গাণুটির অবস্থান কোথায়, কীভাবে গঠিত, কাজ কী, দেখতে কেমন ইত্যাদি জেনে নাও ভালোভাবে। কোনো প্রশ্ন থাকলে বা বুঝতে অসুবিধা হলে শিক্ষককে জানাও। (বিজ্ঞান অনুশীলন বই : পৃষ্ঠা ৩৩)
১. নিউক্লিয়াসের গঠন ও কাজ ব্যাখ্যা কর। (বিজ্ঞান অনুশীলন বই : পৃষ্ঠা ৩৩)
উত্তর : কোষের প্রোটোপস্নাজমে অবস্থিত দ্বি-স্তরবিশিষ্ট ঝিলিস্ন দিয়ে ঘিরে রাখা অস্বচ্ছ অঙ্গাণুকে নিউক্লিয়াস বলে।
অবস্থান : কোষের কেন্দ্রস্থলে থাকে।
আকৃতি : কোষভেদে নিউক্লিয়াস সাধারণত গোলাকার, উপবৃত্তাকার বা নলাকার হয়ে থাকে।
গঠন : প্রতিটি নিউক্লিয়াস চারটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত। এগুলো হলো-
১. নিউক্লিয়ার পর্দা : সজীব ও দ্বিস্তরবিশিষ্ট যে পর্দা দিয়ে প্রতিটি নিউক্লিয়াস আবৃত থাকে, তাকে নিউক্লিয়ার পর্দা বলে। নিউক্লিয়ার পর্দা অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত। এসব ছিদ্রের নাম নিউক্লিয়ার রঙ।
২. নিউক্লিওপস্নাজম : নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরস্থ নিউক্লিয়ার মেমব্রেন দিয়ে আবৃত স্বচ্ছ, দানাদার ও জেলির মতো অর্ধতরল পদার্থটির নাম নিউক্লিও পস্নাজম বা ক্যারিওলিম্ফ।
৩. নিউক্লিওলাস : নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে অবস্থিত ক্ষুদ্র, গোলাকার, উজ্জ্বল ও অপেক্ষাকৃত ঘন বস্তুটি নিউক্লিওলাস নামে পরিচিত। সাধারণত প্রতিটি নিউক্লিয়াসে একটি নিউক্লিওলাস থাকে।
৪. নিউক্লিওজালিকা বা ক্রোমাটিন তন্তু : নিউক্লিওপস্নাজমে ভাসমান অবস্থায় প্যাচানো সুতার মতো গঠনটি নিউক্লিওজালিকা বা ক্রোমাটিন জালিকা নামে পরিচিত।
কাজ : নিউক্লিয়াস কোষের সকল কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
২. মাইটোকন্ড্রিয়া সম্পর্কে লিখ। (বিজ্ঞান অনুশীলন বই : পৃষ্ঠা ৩০)
উত্তর : কোষের সাইটোপস্নাজমে অবস্থিত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাণু যেখানে শ্বসন প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপাদনের কয়েকটি ধাপ সম্পন্ন হয় তাকে মাইটোকন্ড্রিয়া বলে।
অবস্থান : উদ্ভিদ ও প্রাণী কোষের সাইটোপস্নাজমে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করে।
আকৃতি : বৃত্তাকার, দন্ডাকার, কন্ডলী আকার হতে পারে।
গঠন : প্রতিটি মাইটোকন্ড্রিয়া দুই স্তরবিশিষ্ট আবরণ বা ঝিরি দ্বারা আবৃত থাকে। এই ঝিরিটি প্রোটিন ও লিপিড দিয়ে তৈরি। মাইটোকন্ড্রিয়ার ঝিলিস্নর বাইরের আবরণটি মসৃণ, কিন্তু ভেতরের আবরণটি স্থানে স্থানে ভাঁজ হয়ে ভেতরের দিকে ঝুলে থাকে। এ ভাঁজগুলোকে ক্রিস্টি বলা হয়। মাইটোকন্ড্রিয়ার ভেতরের অর্ধতরল দানাদার পদার্থকে ম্যাট্রিক্স বলা হয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মাইটোকন্দ্রিয়ার নিজস্ব ডিএনএ আছে, যা সেগুলোর ম্যাট্রিক্স-এ অবস্থান করে।
কাজ : কোষের জৈবিক কাজ পরিচালনার জন্য যে শক্তি প্রয়োজন তার একমাত্র উৎস মাইটোকন্ড্রিয়া। তাই একে কোষের শক্তিঘর বলে। সমস্ত অক্সিজেন পরিবহণ ও শ্বসন কাজ পরিচালনায় এটি প্রধান ভূমিকা পালন করে।
৩. ক্লোরোপস্নাস্ট-এর গঠন ও কাজ বর্ণনা কর। (বিজ্ঞান অনুশীলন বই : পৃষ্ঠা ৩৩)
উত্তর : সবুজ ক্লোরোফিলযুক্ত পস্নাস্টিডকে ক্লোরোপস্নাস্ট বলে।
অবস্থান : কেবল উদ্ভিদ কোষেই ক্লোরোপস্নাস্ট পাওয়া যায়। উদ্ভিদের পাতা, কড়িকা-, ফুল, ফলে এটা দেখা যায়। আকৃতি : উচ্চ শ্রেণির উদ্ভিদ কোষে ক্লোরো পস্নাস্টের আকৃতি লেন্সের মতো হয়।
গঠন : ক্লোরোপস্নাস্টের প্রাচীর দুই স্তরবিশিষ্ট। বাইরের স্তরকে বহিঃস্তর এবং ভেতরের স্তরকে অন্তঃস্তর বলে। অন্তঃস্তরের ভিতরে কতকগুলো পিপা সদৃশ চাকতি আকৃতির মতো অংশ রয়েছে। এদেরকে গ্রানাম বলে। চাকতিগুলো একটির ওপর একটি স্তূপের ন্যায় সজ্জিত থাকে। একে গ্রানাম চক্র বা থাইলাকয়েড বলে। পাশাপাশি দুটি থাইলাকয়েডের মধ্যকার সংযোগকারী অংশকে লুমেন বলে। ক্লোরোপস্নাস্টের অভ্যন্তরের তরল পানিগ্রাহী অংশকে ম্যাট্রিক্স বা স্ট্রোমা বলে।
কাজ :
১. সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করা।
২. ফুল, পাতা ও ফলকে রঙিন করে কীটপতঙ্গকে আকৃষ্ট করে যেন পরাগায়ন সহজ হয়।
৪. জীব বড় হয় কীভাবে? (বিজ্ঞান অনুশীলন বই : পৃষ্ঠা ৩৫)
উত্তর : প্রতিটি জীবের দেহ কোষ দ্বারা গঠিত। এই দেহ কোষের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবদেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটে এবং জীব বড় হয়।
৫. আমাদের ত্বক কেটে গেলে আবার কিছুদিন পর সেরে গিয়ে নতুন ত্বকের সৃষ্টি হয় কীভাবে? (বিজ্ঞান অনুশীলন বই : পৃষ্ঠা ৩৫)
উত্তর : আমাদের ত্বক কেটে গেলে সেখানে আবার কিছুদিন পর সেরে গিয়ে নতুন ত্বকের সৃষ্টি হয় মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে। মাইটোসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় কেটে যাওয়া স্থানে নতুন কোষ সৃষ্টি হয় এবং ক্ষত পূরণ হয়ে নতুন ত্বকের সৃষ্টি হয়।
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়