দ্বিতীয় অধ্যায়
২. বিদু্যৎ পরিবহনের জন্য যে তার ব্যবহার করা হয় তার উপরের স্তর পস্নাস্টিকের হলেও ভেতরে তামার তার ব্যবহৃত হয়, সেটাই বা কেন?
উত্তর : বিদু্যৎ পরিবহনের জন্য যে তার ব্যবহৃত হয় তার ভিতরে থাকে তামার তার যা বিদু্যৎ পরিবহন করে। সরাসরি তামার তার যদি বৈদু্যতিক কাজে ব্যবহার করা হয়, তবে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে তামার তারের উপরে পস্নাস্টিকের স্তর দেওয়া হয়, কারণ পস্নাস্টিক বিদু্যৎ অপরিবাহী। যার ফলে সহজে কোন দুর্ঘটনা ঘটে না।
৩. কেন কাঠ, পস্নাস্টিক বা কাপড় যে বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে, তার থেকে অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, লোহা, তামা এদের ধর্ম আলাদা হয়?
উত্তর : কাঠ, পস্নাস্টিক বা কাপড় হলো অধাতু। এরা তাপ ও বিদু্যৎ অপরিবাহী। এদের আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয় না। অন্যদিকে অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, তামা হলো ধাতু। এরা তাপ ও বিদু্যৎ পরিবাহী। এদের আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয়।
৪. যেসব পদার্থ বিদু্যৎ ও তাপ পরিবহন করে, তাদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলো কী?
উত্তর : বিদু্যৎ ও তাপ পরিবাহী পদার্থের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য-
১. সাধারণত উজ্জ্বল হয়।
২. এগুলো সাধারণত শক্ত ও ওজনে ভারী হয়।
৩. আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয়।
৪. এগুলো ঘাতসহ ও নমনীয়।
৫. এগুলোকে পিটিয়ে পাতলা পাতে ও সরু তারে পরিণত করা যায়।
৫. কেন কিছু কিছু পদার্থ দিয়ে তৈরি বন্ধু তাপ পরিবহন করে আবার কিছু বস্তু করে না?
উত্তর : ধাতু জাতীয় পদার্থের পরমাণুগুলোর শেষ কক্ষপথে যে ইলেকট্রন থাকে সেগুলো সাধারণত খুব দুর্বলভাবে আটকে থাকে বা মুক্ত অবস্থায় থাকে। ফলে খুব সহজেই সেটি এক পরমাণু থেকে অন্য পরমাণুতে যেতে পারে। এই মুক্ত ইলেকট্রন দিয়ে তাপ ও বিদু্যৎ পরিবহন হয়ে থাকে। অধাতুর পরমাণুর শেষ কক্ষপথে প্রায় মুক্ত কোনো ইলেকট্রন নেই, তাই সেখানে বিদু্যৎ প্রবাহিত করার জন্য কোনো ইলেকট্রন নেই। তাই অধাতু তাপ ও বিদু্যৎ পরিবহন করে না।
ধাতু ও অধাতুর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে, বিশেষত তাপ ও বিদু্যৎ পরিবহনের ক্ষেত্রে এই পার্থক্য মোটামুটি স্পষ্ট ধরা পড়ে। এখন যেহেতু পরমাণুর গঠন সম্পর্কে তোমাদের বেশ বিস্তারিত ধারণা হয়ে গিয়েছে, ধাতু-অধাতুর এই পার্থক্যের কারণটা খোঁজা যাক।
৬. ধাতু কাকে বলে?
উত্তর : যেসকল পদার্থ চকচকে, আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ করে, তাপ ও বিদু্যৎ সুপরিবাহী তাদেরকে ধাতু বলে। যেমন- লোহা, তামা, নিকেল ইত্যাদি।
৭. অধাতু কাকে বলে?
উত্তর : যেসকল পদার্থ চকচকে নয়, ভঙ্গুর, আঘাত করলে ঝানান শব্দ করে না এবং তাপ ও বিদু্যৎ পরিবাহী নয়, তাদেরকে অধাতু বলে। যেমন- কাঠ, পস্নাস্টিক, সালফার ইত্যাদি।
৮. ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্য লেখ।
উত্তর : ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
ধাতু
১. সাধারণত উজ্জ্বল হয়
২. সাধারণত শক্ত ও ওজনে ভারী হয়।
৩. ধাতুকে আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয়।
৪. তাপ ও বিদু্যৎ পরিবাহী।
৫. ঘাতসহ ও নমনীয়। একে পিটিয়ে পাতলা পাতে ও সরু তারে পরিণত করা যায়।
অধাতু
১. সাধারণত উজ্জ্বল নয়
২. সাধারণত নরম ও ওজনে তুলনামূলক কম ভারী হয়।
৩. অধাতুকে আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয় না।
৪. তাপ ও বিদু্যৎ পরিবাহী নয়।
৫. অধাতুকে পিটিয়ে পাতলা পাতে কিংবা সরু তারে পরিণত করা যায় না।
৯. পরিবাহী পদার্থ বলতে কী বুঝ ?
উত্তর : যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ ও বিদু্যৎ পরিবহন হয়, তাদেরকে পরিবাহী বলে। যেমন- লোহা, তামা, নিকেল ইত্যাদি।
১০. অপরিবাহী পদার্থ কাকে বলে?
উত্তর : যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ ও বিদু্যৎ পরিবহন হয় না, তাদেরকে অপরিবাহী বলে। যেমন- সালফার, ফসফরাস, নাইট্রোজেন ইত্যাদি।
১১. অর্ধপরিবাহী পদার্থ কাকে বলে?
উত্তর : যেসব পদার্থের তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা সাধারণ তাপমাত্রায় পরিবাহী ও অপরিবাহী পদার্থের মাঝামাঝি সেসব পদার্থকে অর্ধপরিবাহী বলে। যেমন- জার্মেনিয়াম, সিলিকন ইত্যাদি।
১২. ইলেকট্রন বিন্যাসের কোন পার্থক্যের কারণে ধাতু বেশি তাপ ও বিদু্যৎ পরিবাহী হয়?
উত্তর : ধাতব পরমাণুগুলো এদের সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তর থেকে এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধাতব স্ফটিক পাশাপাশি অবস্থান করে। ধাতুসমূহ যে ইলেকট্রন ত্যাগ করে তা সেই ইলেকট্রনগুলো ধাতব স্ফটিকের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে মুক্তভাবে চলাচল করে। একে সঞ্চারণশীল ইলেকট্রন বলে।
সঞ্চারণশীল ইলেকট্রনগুলো কোন ধাতব পরমাণুর সাথে নির্দিষ্টভাবে যুক্ত থাকে না। এই সঞ্চারণশীল ইলেকট্রন যেহেতু সমস্ত ধাতব স্ফটিকের উপর মুক্তভাবে চলাচল করে কাজেই এই সঞ্চারণশীল ইলেকট্রনের জন্য ধাতুসমূহ তাপ এবং বিদু্যৎ সুপরিবাহী হয়।
দৈনন্দিন জীবনে তাপ ও বিদু্যৎ সম্পর্কিত কাজের কয়েকটি উদাহরণ লিখো, তারপর ঠিক করো কোনো কাজের জন্য ধাতু বা অধাতু কোনটি বেশি উপযোগী-
১. ব্যাটারি তৈরিতে ধাতু : পিতল, দস্তা অধাতু : কয়লা, কার্বন
২. বৈদু্যতিক তার তৈরিতে ধাতু : তামা, ট্যাংস্টেন, নাইক্রোম
৩. তাপমাত্রা পরিমাপে ধাতু : পারদ
৪. জানালার গ্রীল তৈরিতে ধাতু : লোহা, স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম
৫. চেহারা দেখতে অধাতু : কাচ
৬. বই তৈরিতে অধাতু : কাগজ
৭. বোতল তৈরিতে অধাতু : কাচ, পস্নাস্টিক
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়