বিলাসী
প্রশ্ন : বাঙালির মন্ত্রতন্ত্রের সাথে সাপের বিষের তুলনা প্রসঙ্গে ন্যাড়ার উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : 'বিলাসী' গল্পে ন্যাড়া বাঙালির মন্ত্রতন্ত্রের সাথে সাপের বিষের তুলনা করে প্রকৃত সত্যটি উপস্থাপন করেছেন এবং দেখিয়েছেন যে বাঙালির মন্ত্র সিদ্ধ মিথ্যা হতে পারে কিন্তু সাপের বিষ কখনোই অকার্যকর হয় না।
মৃতু্যঞ্জয় বিলাসীকে বিয়ে করে সমাজ থেকে বিতাড়িত হয় প্রচলিত প্রকারভেদ প্রথা সমাজে তার স্থান হয় না, কিন্তু মেসির প্রতি সে ছিল এক নিষ্ঠ। মৃতু্যঞ্জয় সাপুড়ে বৃত্তিকে গ্রহণ করেছিল।
মৃতু্যঞ্জয় সাপুড়ে হোক বিলাসিতা চাননি। সমাজ থেকে বিতাড়িত হয়ে এসে বিলাসীকে বিয়ে করে সাপুড়ে
হয়। সাপ ধরা এবং প্রসার তার পেশা তে পরিণত হয়। অবশেষে এনে শায়িত তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। গোয়ালার বাড়িতে সাপ ধরতে গিয়ে দংশিত হয় সে। ন্যাড়া এবং বিলাসীসহ সব সাপুড়ে তাদের সমস্ত বিদ্যার প্রয়োগ করেছে তাকে বাঁচানোর জন্য, কিন্তু তা কোনো কাজে আসেনি। তাই ন্যাড়া উলিস্নখিত উক্তিটি করেছে।
প্রশ্ন : মৃতু্যঞ্জয়ের 'জাতবিসর্জনের' কারণ বর্ণনা কর।
উত্তর : মৃতু্যঞ্জয়ের বিসর্জনের কারণ হল বিলাসিতার অকৃত্রিম ভালোবাসা।
মৃতু্যঞ্জয় কায়স্থের ছেলে। তার বাপ মা বেঁচে নেই। গ্রামের আর দশটা ছেলের মতো সেও লেখাপড়া করে। কিন্তু ছাত্র হিসেবে ভাল নয় বিধায় সে কখনো থার্ডক্লাস অতিক্রম করতে পারেনি।
এদিকে মৃতু্যঞ্জয় অসুস্থ হয়ে পড়লে পাড়ার এক সাপুড়ের মেয়ে বিলাসী সেবা যত্ন দিয়ে তাকে সারিয়ে তোলে, ফলে বিলাসী সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু গ্রামের রক্ষণশীল হিন্দুসমাজ কিছুতেই সে সম্পর্ক মেনে নেয়নি। কিন্তু মৃতু্যঞ্জয় তার ভালোবাসার টানে সাপুড়ে কন্যা বিলাসীকে বিয়ে করার ভেতর দিয়ে তার ধর্ম বিসর্জন দেয়। মৃতু্যঞ্জয় বিলাসীর ভালোবাসা যেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অপূর্ব সৃষ্টি।
প্রশ্ন : কোন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে খুড়া মৃতু্যঞ্জয়ের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : 'বিলাসী' গল্পের নায়ক মৃতু্যঞ্জয় কায়স্থের ছেলে। তার মা-বাবা কিংবা ভাই-বোন কেউ বেঁচে নেই। এ পৃথিবীর বুকে বলতে গেলে সে একা। তাই মৃতু্যঞ্জয়ের সম্পত্তি দখল করার উদ্দেশ্যে তার নামে কুৎসা রটনা করে বেড়াত।
মৃতু্যঞ্জয়ের ছিল গ্রামের এক প্রান্তে একটা প্রকান্ড আম-কাঁঠালের বাগান।
আর তার মধ্যে একটা প্রকান্ড পোরোবাড়ি। তাছাড়া তার ছিল এক জাতি খুড়া। খোঁড়ার কাজ ছিল ভাইপোর বিরুদ্ধে বলে দাড়ানো- দাঁড়ানো 'সে গাঁজা খায়; সে গুলি খায়, এমনকি আর কত কি!' সে বাগানের অর্ধেক অংশের দাবিদার বলেও সমাজে প্রচার করে বেড়াত। বস্তুত সম্পত্তির লোভেই সে মৃতু্যঞ্জয়ের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে বেড়াত।
প্রশ : মৃতু্যঞ্জয়ের প্রতি খুড়ার বৈরী মনোভাবের কারণ কী?
উত্তর : 'বিলাসী' গল্পে মৃতু্যঞ্জয় এর প্রতি বৈরী মনোভাব এর মূল কারণ মৃতু্যঞ্জয়ের বিশাল বাগানটি নিজের করে নেওয়ার লোভ। মৃতু্যঞ্জয়ের জ্ঞাতি খুড়ো সবসময় ভাইপো মৃতু্যঞ্জয়ের অনিষ্ট করার কাজে লেগে থাকত। তাকে কিভাবে সমাজের কাছে হেয় করা যায়, নিন্দিত করা যায়, সে চেষ্টায় তার কোনো ত্রম্নটি ছিল না। ভাইপোকে গ্রামবাসীর কাছে কোণঠাসা করার জন্য মৃতু্যঞ্জয়ের অন্য পাপের কথা প্রচার করেছে। খুড়ো মৃতু্যঞ্জয়ের কুড়ি পঁচিশ বিঘা বাগান নিজের নামে প্রতিষ্ঠার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করত।
প্রশ্ন : 'গ্রামের মধ্যে মৃতু্যঞ্জয়ের ছিল এমনি সুনাম।' বিষয়টি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : 'গ্রামের মধ্যে মৃতু্যঞ্জয়ের এমনি সুনাম।' ু এটি 'বিলাসী' গল্পের লেখক এর ব্যাঙ্গাত্মক উক্তি।
আমরা জানি যে, সুনাম শব্দটি একটি আদর্শ অর্থ বহন করে, যা দিয়ে কারো প্রশংসা কে বোঝানো হয়। কিন্তু বিলাসী গল্পে উক্তিটি লেখক ব্যাঙ্গার্থে করেছেন। গল্পে পরোপকারী মৃতু্যঞ্জয়ের উপকার স্বীকার না করে রফি নিচু মনের মানুষ যখন তাকে অবহেলা অবজ্ঞা করেছে, লেখক তখনই সার্থক ভাবে উক্তিটি করেছেন।
মৃতু্যঞ্জয় শিক্ষার্থীদের কে খাওয়ানো, বই কিনে দেওয়া, বাচ্চাদের স্কুলের পাওনা মিটানো ইত্যাদি কাজের মধ্য দিয়ে যে মানবীয় গুণাবলীর পরিচয় দিয়েছিল, তৎকালীন সংকীর্ণমনা রাস্তা মনে রাখেনি; বরং তার অসুস্থতার সময় তাকে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলার বিষয়কে পাপ হিসেবে দেখেছে, তাকে সমাজচু্যত করে মৃতু্যর দিকেই ঠেলে দিয়েছে।
প্রশ্ন : 'বদন দগ্ধ না হয়'- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : 'বদন দন্ধ না হয়'-এর আভিধানিক অর্থ মুখ যেন না পোড়ে। কিন্তু এ কথাটি সুনাম যেন নষ্ট না হয় এই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। 'বিলাসী' গল্পের নায়ক বিজয়ের দেড় মাস প্রায় অচেতন অবস্থায় পড়েছিল জ্বরে। গ্রামের কেউ খবর নিতে আসেনি। সাপুড়ের মেয়ে বিলাসিতাকে সেবা-শুশ্রম্নূষা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছে।
কৃতজ্ঞ মৃতু্যঞ্জয় তাকে বিয়ে করেছে। এতে গ্রামের বদন দন্ধ হয়েছে অর্থাৎ সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। বিষয়টি যেন বাইরের কেউ জানতে না পারে এবং একই সাথে ঘুরার স্বার্থোদ্ধার হয়, সেজন্য খুড়া অভিভাবক হয়ে বলেছেন ব্যবস্থা নিতে। আর সংঘের যুবক ছেলেরা চলেছে গ্রামের বদন যেন দগ্ধ না হয় তারই একটা মীমাংসা করতে।
প্রশ্ন : 'বাঙালির বিষ' বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
উত্তর : 'বাঙালির বিষ' বলতে বাঙালির ক্ষণস্থায়ী ক্রোধ বা বিদ্বেষকে বুঝানো হয়েছে।
বাঙালির রাগ আছে, হিংসা-বিদ্বেষ আছে। কিন্তু তা কখনো দিনের পর দিন বা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে না। মনের মধ্যে প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত পুষে রাখে না।