একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র
প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আতাউর রহমান সায়েম, সহকারী শিক্ষক, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
আহ্বান
অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন : হাজরার বউ বুড়িকে খেতে দেয় কেন?
উত্তর : হাজরার বউ আন্তরিকতার জন্য বুড়িকে খেতে দেয়।
হাজরার বই ছা-পোষা একজন নারী। সে বুড়িকে ভালোবেসে মা ডেকেছে। তাই উদার মানবিকতার জন্যই সে তার সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের দুমুঠো চাল বুড়ির সাথে একসঙ্গে রান্না করে খায়। এতে হাজরার উদার দৃষ্টিভঙ্গিরই পরিচয় মেলে।
প্রশ্ন : 'ওই যারে মেয়ে বলি, ও বড় ভাল' কথাটি বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : হাজরার বউয়ের প্রতি বুড়ির কৃতজ্ঞতাবোধের পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে এখানে।
বুড়ির আপনজন বলতে এই পৃথিবীতে তার এক নাতজামাই ছাড়া কেউ নেই। কিন্তু সেই নাতজামাই বুড়িকে দেখে না। পাতানো এক মেয়ে কষ্ট হলেও তাকে ভরণপোষণ দেয়। তাই গল্পকথক যখন বলে খাওয়া-দাওয়া কোথায় হয়, তখন বুড়ি হাজরার বউয়ের কথা বলে তার কৃতজ্ঞতাবোধ স্বীকার করে।
প্রশ্ন : বুড়ির দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : অনেক প্রতীক্ষার পর গোপাল অসুস্থ বুড়িকে দেখতে আসে বলে বুড়ির দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
বুড়ি গোপালকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে। তাই তার বিশ্বাস তার এই দুর্দিনে তার স্নেহের গোপাল হৃদয়ে টানে তার কাছে আসবেই। বুড়ির টানেই শেষ পর্যন্ত গল্পকথক বুড়িকে দেখতে যায়। তাইতো আনন্দে বুড়ির চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
প্রশ্ন : গল্পকথকের গ্রাম ছাড়ার পর বুড়িকে স্মরণ না থাকার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : গ্রাম থেকে ফিরে গল্পকথক আবারও কলকাতায় গিয়ে নিজ কাজে ব্যস্ত থাকায় বুড়িকে ভুলে যান।
গল্পকথক গ্রামে আসার পর বুড়ি যেভাবে তাকে ভালোবেসে আপন করে কাছে টেনেছে, সেভাবে গল্পকথক বুড়িকে আপন ভাবতে পারেনি। তবে বুড়ির প্রতি তার যে মায়া-মমতা ছিল না তা কিন্তু নয়। কর্মব্যস্ততার কারণেই বুড়িকে তার স্মরণে আসেনি।
প্রশ্ন : গল্পকথক বুড়িকে পকেট থেকে পয়সা বের করে দিলেন কেন?
উত্তর : বুড়ির অভাব-অভিযোগ আর কষ্টের কথা শুনে গল্পকথক বুড়িকে পকেট থেকে পয়সা বের করে দিলেন।
স্বামী বেঁচে থাকতে বুড়ির কোনো অভাব না থাকলেও বর্তমানে বুড়ির এক নাতজামাই থাকা সত্ত্বেও তার খাবারের কষ্ট। বয়সের ভারে কাজ করার সামর্থ্য নেই। বুড়ির এই কষ্টের কথা শুনে গল্পলেখক নিজ পকেট থেকে মানবতার খাতিরে পয়সা বের করে দিলেন।
বিলাসী
জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
মৃতু্যঞ্জয়ের বিসর্জনের কারণ হল বিলাসিতার অকৃত্রিম ভালোবাসা। মৃতু্যঞ্জয় কায়স্থের ছেলে। তার বাপ মা বেঁচে নেই। গ্রামের আর দশটা ছেলের মতো সেও লেখাপড়া করে। কিন্তু ছাত্র হিসেবে ভাল নয় বিধায় সে কখনো থার্ডক্লাস অতিক্রম করতে পারেনি। এদিকে মৃতু্যঞ্জয় অসুস্থ হয়ে পড়লে পাড়ার এক সাপুড়ের মেয়ে বিলাসী সেবা যত্ন দিয়ে তাকে সারিয়ে তোলে, ফলে বিলাসী সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
প্রশ্ন : খুড়া কোন বংশের?
উত্তর : খুড়া মিত্তির বংশের।
প্রশ্ন : মৃতু্যঞ্জয়ের বাগানটা কত বিঘার ছিল?
উত্তর : মৃতু্যঞ্জয়ের বাগানটা কুড়ি-পঁচিশ ছিল।
প্রশ্ন : কোন যুক্তিকে কলি যুগ বলা হয়?
উত্তর : হিন্দু পুরাণে বর্ণিত চার যুগের শেষ যুগকে কলি যুগ বলা হয়।
প্রশ্ন : 'বিলাসী' গল্পের বর্ণনাকারী কে?
উত্তর : 'বিলাসী' গল্পের বর্ণনাকারী ন্যাড়া।
প্রশ্ন : বিলাসীর পারিবারিক পদবী কী?
উত্তর : বিলাসীর পারিবারিক পদবি হল মালো।
প্রশ্ন : কামাখ্যা কী?
উত্তর : কামাখ্যা হলো ভারতের আসাম রাজ্যে অবস্থিত প্রাচীন তীর্থস্থান। স্থানটি তান্ত্রিক সাধক ও উপাসকদের তন্ত্র মন্ত্র সাধনা জন্য বিখ্যাত।
প্রশ্ন : অন্নপাপ কী?
উত্তর : বর্ণবাদী হিন্দু সমাজের অনুশাসনে উচ্চবংশীয় লোক নিম্ন বংশের লোকের হাতের ভাত খেলে তাকে অন্নপাপ হিসেবে ধরা হয়।
প্রশ্ন : 'কানাচ' শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর : 'কানাচ' শব্দটির অর্থ ঘরের পেছনে দিককার লাগানো জায়গা।
প্রশ্ন : 'বুকফাটা শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : 'বুকফাটা' শব্দটির অর্থ হৃদয়বিদারক।
প্রশ্ন : 'ইহা আর একটি শক্তি'্ত বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : 'ইহা আর একটি শক্তি' কথাটি দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার প্রকৃত ভালোবাসার প্রসঙ্গকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
স্বামী-স্ত্রী বহুবছর একত্রে বসবাস করলেও সত্যিকারের ভালোবাসার সন্ধান খুব কম যুগলই পায়। আলোচ্য গল্পে প্রসঙ্গক্রমে গল্পকথক তাঁর এক আত্মীয়ার উদাহরণ টেনেছেন।
সেই নারী স্বামীর সাথে পঁচিশ বছর ঘর করেছে। অথচ স্বামীর মৃতদেহ আগলে পাঁচ মিনিটও একাকী থাকার সাহস তার নেই। এর কারণ প্রকৃত ভালোবাসার সম্পর্কের অনুপস্থিতি। স্বামীর মৃতদেহের কাছে থাকার জন্য প্রয়োজন ছিল 'আর একটি শক্তি' অর্থাৎ খাঁটি ভালোবাসা। প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতির মধ্য দিয়ে এ বিষয়টিই ইঙ্গিতময় হয়ে উঠেছে।
প্রশ্ন : 'ভয় পাই বাড়ার সময় পাইলাম না'- উক্তিটির প্রেক্ষাপট বর্ণনা কর।
উত্তর : বাল্যবন্ধু মৃতু্যঞ্জয়কে দেখা শেষে বাড়ি ফেরার পথেই 'বিলাসী' গল্পের কথক ন্যাড়া উদ্ধত উক্তিটি করেছেন।
সাপুড়ে কন্যা বিলাসী একদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে ন্যাড়া মৃতু্যঞ্জয়কে দেখতে পোরোবাড়িতে গেল। গভীর বনের মধ্যে দিয়ে অন্ধকার রাতে ফেরার পথে কিছুটা হলেও ভয় পাচ্ছিল। কিন্তু বিলাসীর সাহসের কথা মনে পড়তেই তার ভয় দূর হয়ে গেল। কেবল ভাবতে থাকল, একটা মৃতু্য কল্প রোগী নিয়ে এমন স্থানে একা একটা মেয়ের রাত্রি পাড়ি দেওয়া কত কঠিন কাজ।
মৃতু্যঞ্জয় তো যেকোনো মুহূর্তে মারা যেতে পারত। তখন নিশ্চয় মেয়েটিকে স্বামীর মৃতদেহের পাশে বসে একাকী রাত কাটাতে হতো। এ পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাড়া বিলাসীর সাহসের উৎস হিসেবে আবিষ্কার করল স্বামী মৃতু্যঞ্জয়ের প্রতি তার সীমাহীন ভালোবাসা। এ সত্য আবিষ্কারের ন্যাড়ার মন এমনই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল যে শ্বাপদসংকুল পথ পাড়ি দিতে গিয়ে সে ভয় পাওয়ার সময়ই পায়নি।
প্রশ্ন : তাহার বয়স আঠারো কি আঠাশ ঠাহর করিতে পারিলাম না' কেন? বুঝিয়ে বল।
উত্তর : অসুস্থ মৃতু্যঞ্জয়ের সেবায় বিলাসী নিজেকে বিসর্জন দিয়েছে। রাতদিন সেবা করে করে বিলাসীর শরীর একেবারে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। এ কারণেই ন্যাড়া তার বয়স ঠাহর করতে পারেনি। মৃতু্যঞ্জয় একবার কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে আত্মীয়স্বজন কিংবা পাড়া-প্রতিবেশীদের কেউ তার সেবায় এগিয়ে আসেনি।
সাপুড়ে কন্যা বিদেশি মৃতু্যর কবল থেকে সে যাত্রায় মৃতু্যঞ্জয়কে রক্ষা করেছে। একদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে ন্যাড়া মৃতু্যঞ্জয়কে দেখতেই পোরোবাড়িতে গেল। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখতে পায় বিদেশি মৃতু্যঞ্জয়ের সেবা করতে করতে ফুলদানির ফুলের মধু শুকিয়ে গেছে। তার প্রকৃত বয়স আঠারো কিংবা আঠাশ কোনটাই বুঝার উপায় ছিল না। তাই মেয়েরা আলোচ্য মন্তব্যটি করেছিল।
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়