১ম অধ্যায়
প্রশ্ন: কোন এলাকায় কোন ফসল বেশি জন্মে?
উত্তর: যেসব এলাকায় বেশি ফসল জন্মে তা নিচে উলেস্নখ করা হলো :
-বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয় ময়মনসিংহ জেলায়।
-গম বেশি উৎপাদিত হয় রংপুর জেলায়।
-পাট সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় ফরিদপুর জেলায়।
-আলু বেশি উৎপাদিত হয় মুন্সীগঞ্জ জেলায়।
-সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদিত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়।
-চা সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় মৌলভীবাজার জেলায়।
-তুলা সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হয় যশোর জেলায়।
-আনারস সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় সিলেট জেলায়।
-লিচু সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় দিনাজপুরে।
-আখ সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় নাটোরে।
-কলা সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় বগুড়ায়।
প্রশ্ন: কোন মৌসুমে কোন ফসল বেশি জন্মে?
উত্তর: যে মৌসুমে যে ফসল বেশি জন্মে তা হলো :
ফসলের মৌসুমকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়।
১। রবি মৌসুম : আশ্বিন মাস থেকে ফাল্গুন মাস (মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য মার্চ)
২। খরিপ ১ মৌসুম : ফাল্গুন মাস থেকে আষাঢ় মাস (মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত)
৩। খরিপ ২ মৌসুম : আষাঢ় মাস থেকে ভাদ্র মাস মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য মার্চ)
রবি মৌসুম :রবি মৌসুমে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা কম থাকে। বৃষ্টিপাতও কম হয়। এ সময় শীতকালীন শাকসবজি যেমন- ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, গাজর, লাউ, শিম, টমেটো, আলু ইত্যাদির চাষ করা হয়। এ ছাড়া বোরো ধান, গম, ডাল ও সরিষা রবি মৌসুমের ফসল।
খরিপ ১ মৌসুম :খরিপ-১-এর সময়কালকে গ্রীষ্মকালও বলা হয়। এ সময় তাপমাত্রা বেশি থাকে। মাঝেমধ্যে ঝড়-বৃষ্টি হয়। এ মৌসুমে আউশ ধান, পাট, ঢেঁড়শ, করলা, পটল, কাঁকরোল, বরবটি ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে ইত্যাদি এ মৌসুমের প্রধান ফল।
খরিপ ২ মৌসুম : খরিপ-২-এর মৌসুমে বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকে এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এ মৌসুমকে তাই বর্ষাকাল বলে। আমন ধান ও বর্ষাকালীন শাকসবজি এ মৌসুমের প্রধান ফসল। প্রধান ফলের মধ্যে : জাম্বুরা, তাল, আমলকী, কাঁঠাল, জলপাই উলেস্নখযোগ্য।
প্রশ্ন: মাটি বা পরিবেশের কোন বৈশিষ্ট্যের জন্য ওই ফসল/উদ্ভিদ বেশি জন্মে?
উত্তর: মাটি বা পরিবেশের যে বৈশিষ্ট্যের জন্য ওই ফসল/উদ্ভিদ বেশি জন্মে তা হলো:
মাটির প্রকারভেদ : মাটি প্রধানত ৪ প্রকার-
র. বেলে, রর.পলি, ররর. এঁটেল/কদম, রা. দোআঁশ
তবে দোআঁশ মাটি সকল প্রকারের সাথে সংমিশ্রণ করলে আবার ৩ প্রকার হয়:
র. বেলে-দোআঁশ, রর. পলি-দোআঁশ, ররর . কদম-দোআঁশ
দোআঁশ মাটিকে বলা হয় ফসল চাষের জন্য আদর্শ মাটি। দোআঁশ মাটিতে জৈব পদার্থ ও পটাশজাত খনিজের মাত্রা যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। এর গঠন প্রকৃতিও ফসলের বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। এ কারণেই দোআঁশ মাটিতে সব ধরনের ফসল ভালো হয়।
বেলে মাটিতে বালির ভাগ বেশি থাকে। এ মাটির পানির ধারণ ক্ষমতা কম। বেলে মাটিতে ফসল তেমন ভালো হয় না, তবে তরমুজ, শসা, বাঙ্গি, চীনাবাদাম, মিষ্টি আলু ইত্যাদি ভালো জন্মে। বেলে-দোআঁশ মাটিতে গোল আলু, টমেটো, বেগুন বেশি জন্মে।
নদীর নিম্ন প্রবাহে নদীর পস্নাবণ বা বন্যার ফলে নদীবাহিত, কাদা, বালি ইত্যাদি নদীর পার্শ্ববর্তী সমভূমি অঞ্চলের সঞ্চিত করে যে মাটি সৃষ্টি হয়, তাকে পলি মাটি বলে। পলি ও পলি দোআঁশ মাটিতে পাট, গম, বোরো ও আমন ধান বেশি জন্মে।
এঁটেল মাটিতে বালু অপেক্ষা পলি ও কাদার ভাগ বেশি থাকে। এই মাটির কাদা মাটি খুব নরম, দানা খুব ছোট ও মিহি। এই মাটি বেশি পানি ধরে রাখতে পারে। এ মাটিতে ভালোভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে না। তাই এই মাটিতে তেমন ফসল জন্মে না। তবে ধান ভালো জন্মে ও বেস্নাকলি জন্মে।
প্রশ্ন: কীভাবে বিভিন্ন ফসল/উদ্ভিদের ভালো চারা বাছাই করা হয়?
উত্তর: বিভিন্ন ফসল/উদ্ভিদের ভালো চারা বাছাই করার পদ্ধতি:
১. একেক ধরনের ফসলের চারা একেকভাবে বাছাই করা হয়।
২. ধানের চারা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বীজতলা থেকে সুস্থ বাছাই করে লাগাতে হবে।
৩. সফল চারা চারাগাছ হিসেবে মূল জমিতে লাগাতে হবে।
৪. পেঁয়াজের চারা বীজ তলা থেকে সবল চারা বাছাই করে জমিতে লাগাতে হবে।
৫. মিষ্টি আলুর বীজ মাতৃগাছ থেকে রোগমুক্ত শাখা নিয়ে লাগাতে হয় এবং সরাসরি পুষ্ট আলু চারাগাছের জন্য লাগানো যায়।
৬. গম, কলাই, তিসি, সরিষা এসব ফসলের ক্ষেত্রে সতেজ পুষ্ট বীজ চারা গাছের জন্য জমিতে বপন করা হয়।
৭. জমিতে চারাগাছ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিড়ানি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
প্রশ্ন : কীভাবে সব ফসল/উদ্ভিদের পরিচর্যা করতে হয়?
উত্তর: যেভাবে সব ফসল/উদ্ভিদের পরিচর্যা করতে হয় তা হলো:
চারার পরিচর্যা:
১. চারা রোপণের সঙ্গে সঙ্গে শক্ত কাঠি দিয়ে চারা সোজা করে বেঁধে দিতে হবে।
২. গরু-ছাগলের নাগাল থেকে রক্ষার জন্য বাঁশের খাঁচা দিয়ে চারা রক্ষা করতে হবে।
৩. চারার গোড়ায় জন্মানো অবাঞ্চিত আগাছা দমন জরুরি।
৪. মাটির আর্দ্রতার জন্য শুকনো লতাপাতা, খড়, কচুরিপানা দিয়ে চারার গোড়ায় মালচিং করতে হবে।
৫. কোনো চারা দুর্বল, রোগাক্রান্ত বা মারা গেলে ওই জায়গায় একটি নতুন সবল চারা লাগাতে হবে।
৬. চারা সোজা রাখা ও নির্দিষ্ট কাঠামো ঠিক রাখতে অবাঞ্চিত ডালপালা কেটে ফেলতে হবে।
৭. বৃষ্টি না হলে রোপণের পর ঝরনা দিয়ে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. দ্রম্নত বৃদ্ধিতে রোপণের এক মাস পর গোড়ার একফুট দূর দিয়ে নালা করে ১০ গ্রাম হারে ইউরিয়া দিতে হবে।
৯. ফলগাছে বর্ষার আগে ও পরে বয়স এবং জাতভেদে একবার পরিমাণমতো জৈব ও রাসায়নিক সার দিতে হবে।
১০. প্রতি বছর ফল পাড়ার পর পুরনো, রোগাক্রান্ত, মরা ডালপালা ছেটে দিতে হবে।
১১. রোদ ও আলো বাতাস চলাচল বাড়িয়ে দিতে পারলে পরের বছর নতুন ডালপালায় ফুল-ফল বেশি হবে।
১২. রোগবালাই পোকামাকড় দমনে নিকটস্থ কৃষি বিভাগ, হর্টিকালচার সেন্টার বা বন বিভাগের পরামর্শ নিতে হবে।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়