অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ
প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
অধ্যায়-১৬
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত একটি ছোট ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এখানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপ ব্যবস্থা এবং বঙ্গোপসাগরের সাথে এর ভৌগোলিক অবস্থান এই দেশের উর্বর জমি, নদী, বন এবং খনিজসহ প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাপ্যতার অন্যতম কারণ। দেশটি তার উর্বর কৃষি জমির জন্য পরিচিত, যা এর অধিকাংশ জনসংখ্যার জীবিকা নির্বাহের প্রাথমিক উৎস।
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা এবং তেলের মতো খনিজ সম্পদেও সমৃদ্ধ। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো মাছ, চিংড়ি এবং কাঁকড়াসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক সম্পদের আবাসস্থল, যা দেশের মৎস্যশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ দেশের টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ
প্রাকৃতিক সম্পদ হলো সেই সকল উপাদান বা পদার্থ যা প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে পাওয়া যায় এবং যার একটি অর্থনৈতিক মূল্য আছে। বায়ু, পানি, মাটি, খনিজ, বন, বন্যপ্রাণী এবং জীবাশ্ম জ্বালানি এগুলো হলো কিছু প্রাকৃতিক সম্পদের উদাহরণ।
এই সম্পদগুলো নবায়নযোগ্য কিংবা অনবায়নযোগ্য, দুই হতে পারে। প্রাকৃতিক সম্পদ পৃথিবীতে জীবনকে টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং খাদ্য উৎপাদন, শক্তি উৎপাদন এবং শিল্প উৎপাদনের মতো মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য এটি খুবই প্রয়োজনীয়।
পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে নানান ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ পাওয়া যায়, তবে তা সর্বত্র সমানভাবে নেই। কোথাও সম্পদ বেশি পাওয়া যায় আবার কোথাও কম পাওয়া যায়। যেসব অঞ্চলে বা দেশের সম্পদ কম রয়েছে সেখানে সম্পদ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশেও বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে তবে তার অনেকগুলোর পরিমাণ দেশের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম, কাজেই এগুলো আমাদের হিসাব করে ব্যবহার করতে হবে।
বাংলাদেশের যে সকল প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে সেগুলোকে কতগুলো ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- কৃষিজসম্পদ, বনজসম্পদ, মৎস্যসম্পদ, খনিজসম্পদ, ভূমি, পানি প্রভৃতি। কৃষিজসম্পদ খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। মৎস্যসম্পদ দেশের মানুষের আমিষের চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করে।
খনিজসম্পদ থেকে আমরা জ্বালানি এবং কলকারখানায় বিভিন্ন বস্তু উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল পেয়ে থাকি। এই অধ্যায়ে মূলত বাংলাদেশের খনিজসম্পদ, বনজসম্পদ ও পানিসম্পদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ
প্রাকৃতিকভাবে এক বা একাধিক উপাদান নিয়ে গঠিত হয়ে অথবা সামান্য পরিবর্তিত হয়ে যে সকল রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাত যৌগিক পদার্থ শিলাস্তরে দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোকেই খনিজ পদার্থ বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন পাথর বা শিলার উপাদানগুলো ভূতাত্ত্বিক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় রূপান্তরিত হয়ে নানারকম খনিজ পদার্থে পরিণত হয়।
পৃথিবীর উলেস্নখযোগ্য খনিজ পদার্থগুলোর মাঝে রয়েছে- প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল, কয়লা, আকরিক লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, সোনা, হীরা, টাংস্টেন, চুনাপাথর, কাচবালি, চীনামাটি, তামা, কঠিন শিলা ইত্যাদি
বাংলাদেশ খনিজ সম্পদে যথেষ্ট সমৃদ্ধ না হলেও এদেশে বেশ কিছু খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল, কাচবালি, কয়লা, চুনাপাথর, কঠিন শিলা, চীনামাটি, নুড়িপাথর, ভারী ধাতুর খনিজসমৃদ্ধ বালু, ইউরেনিয়াম আকরিক, লোহা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের খনিজ সম্পদকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে : জ্বালানি সম্পদ এবং আকরিক ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ। এই সম্পদগুলোর ভেতর বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সম্পদ নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
জ্বালানি সম্পদ
বাংলাদেশের খনিতে প্রাপ্ত জ্বালানি সম্পদের মধ্যে রয়েছে কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং খনিজ তেল। বিভিন্ন শিল্প ও কলকারখানায় শক্তির উৎস হিসেবে এসব খনিজ ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন তাপ বিদু্যৎ কেন্দ্রে কয়লা ও গ্যাস থেকে বিদু্যৎ উৎপাদন করে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়।
কয়লা
বাংলাদেশে প্রাপ্ত কয়লা প্রধানত বিটুমিনাস, লিগনাইট ও পিট জাতীয়। এর মাঝে বিটুমিনাস এবং লিগনাইট হচ্ছে উৎকৃষ্ট মানের কয়লা যেগুলোর মাঝে জ্বালানি কার্বনের পরিমাণ ৬০% থেকে ৫০%। অন্যদিকে পিট ঠিক কয়লা নয় তারপরেও এটি পিট কয়লা নামে পরিচিত, এর মাঝে জ্বালানি কার্বনের পরিমাণ মাত্র ৩০-৪০%।
দেশে এ পর্যন্ত মোট কয়লাক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে পাঁচটি, এর মাঝে প্রথম আবিষ্কৃত কয়লা খনি হচ্ছে জয়পুরহাটের জামালগঞ্জে। মজুতের ভিত্তিতে সবচেয়ে বড় কয়লা খনি হওয়ার পরেও ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক গভীরে হওয়ায় এই খনি থেকে এখনো কয়লা আহরণ শুরু হয়নি।
তবে দিনাজপুরের বড়োপুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্র থেকে প্রচুর কয়লা উৎপাদন করা হয় যার অধিকাংশ বড়োপুকুরিয়া তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রে বিদু্যৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। অন্য তিনটি কয়লাক্ষেত্র রয়েছে দিনাজপুরের দিঘিপাড়া ও ফুলবাড়ী এবং রংপুর জেলার খালাসপীরে। এই কয়লাক্ষেত্র ছাড়াও রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া, নওগাঁ এবং সিলেট জেলায় উৎকৃষ্ট মানের বিটুমিনাস এবং লিগনাইট জাতীয় কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, মাদারীপুর এবং খুলনার বিভিন্ন এলাকায় উলেস্নখযোগ্য পরিমাণ পিট মজুতের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রকৃত কয়লা হতে গাছপালা, গুল্মলতার লাখ লাখ বছর মাটির নিচে তাপ ও চাপে থাকা প্রয়োজন, সে তুলনায় মাত্র কয়েক হাজার বছরেই সেগুলো পিটে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
বাংলাদেশে প্রাপ্ত পিটের রং বাদামি থেকে ঘন বাদামি বাংলাদেশে পিট ক্ষেত্রগুলো ভূ-পৃষ্ঠের খুব কাছে থাকার কারণে সহজেই আহরণ করা যেতে পারে। সাধারণত ইটের ভাটায়, বয়লার এমনকি অনেক সময় বাসাবাড়িতে পিট জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
\হপরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়