বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান

রোমানা হাবিব চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, ব্রাইট ফোর টিউটোরিয়াল হোম, চট্টগ্রাম
  ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান

দ্বাদশ অধ্যায়

প্রশ্ন : বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কী কী হতে পারে? আলোচনা করো।

উত্তর : বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চল ও পর্বতের চূড়ার বরফ গলে যাচ্ছে। ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এভাবে তাপমাত্রা ও সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়তে থাকলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। সাগর থেকে নদীতে নোনা জল ঢুকে পড়তে পারে। এ ছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ঘন ঘন ঘটতে পারে।

প্রশ্ন : জলবায়ু পরিবর্তন রোধে করণীয় আলোচনা করো।

উত্তর : জলবায়ু পরিবর্তন রোধের সহজ উপায় হলো বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্যাসের নিঃসরণ কমানো। এ জন্য আমাদের করণীয়-

১. কয়লা, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানো কমিয়ে আনা। এর বদলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি যেমন সৌরশক্তি, বায়ুপ্রবাহ, জৈব জ্বালানি ব্যবহার।

২. বিদু্যৎ, গ্যাস এগুলো কম ব্যবহার করলেও কার্বন-ডাইঅক্সাইড কম উৎপন্ন হয়।

৩. বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাইঅক্সাইড কমানোর জন্য আরেকটি উপায় হলো বেশি করে গাছ লাগানো। কারণ গাছ কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে খাদ্য তৈরি করে। ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাইঅক্সাইড কমে আসবে।

প্রশ্ন : জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কীভাবে খাপ খাইয়ে চলা যেতে পারে তা আলোচনা করো।

উত্তর : জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন উপায়ে টিকে থাকা যায়। এখানে ৩টি পদক্ষেপের কথা আলোচনা করা হলো-

১. প্রতিকূল অবস্থা শুরু হওয়ার আগেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ। যেমন- ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া।

২. বাংলাদেশের কিছু এলাকা বর্ষাকালে ডুবে থাকে। এসব এলাকায় ভাসমান ধাপ তৈরি করে তার উপর কৃষক কখনো অল্প পরিমাণে মাটি দিয়ে দেন। এ ধরনের ভাসমান ধাপগুলোর উপর লাউ, শিম, বেগুন, ঢেঁড়স, টমেটো, ঝিঙা এ রকম সবজি চাষ করা যায়। এভাবে বন্যার সময় ফসল চাষ করা যেতে পারে।

৩. উপকূলীয় অঞ্চলে নোনা পানি প্রবেশের কারণে জমি লবণাক্ত হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে লবণাক্ত মাটিতে জন্মাতে পারে এ রকম ফসলের জাত উদ্ভাবন করে চাষ করা যেতে পারে।

প্রশ্ন : বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণ সম্পর্কে ৫টি বাক্যে লেখো।

উত্তর : পৃথিবীর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, একে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মূল কারণ বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কলকারখানা ও যানবাহনে কয়লা, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে। এসব জ্বালানি পোড়ানোর ফলে পরিবেশে কার্বন-ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বন উজাড় করে ফেলার কারণে গাছ কার্বন-ডাইঅক্সাইড কম শোষণ করছে। ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাইঅক্সাইড বেড়ে যাচ্ছে। আর যত বেশি কার্বন-ডাইঅক্সাইড বাড়ছে বায়ুমন্ডলে তাপমাত্রাও তত বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটিই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণ।

প্রশ্ন : জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে করণীয় ৫টি কাজ উলেস্নখ করো।

উত্তর : জলবায়ু পরিবর্তন রোধে করণীয় কাজগুলো হচ্ছে-

১. কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ কমানো।

২. নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করা।

৩. বেশি করে গাছ লাগানো।

৪. আসবাবপত্র ও নির্মাণকাজে কাঠের ব্যবহার কমানো।

৫. কলকারখানা থেকে বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণ।

প্রশ্ন : প্রায়ই শোনা যায় পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ৫টি বাক্যে এর কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : পৃথিবীর চারদিক ঘিরে থাকা বায়ুমন্ডলে আছে কার্বন-ডাইঅক্সাইড, মিথেন, জলীয়বাষ্পসহ অন্যান্য গ্যাস- যাকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। এরা সূর্যের তাপ পৃথিবীতে আসতে কোনো বাধা দেয় না কিন্তু উত্তপ্ত পৃথিবী থেকে তাপকে চলে যেতে বাধা দেয়, ফলে পৃথিবী রাতের বেলায়ও গরম থাকতে পারে। এ গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর মধ্য বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাইঅক্সাইড বেশি থাকায় এরা বেশি বেশি তাপ ধরে রাখতে পারছে। তাই পৃথিবীর তাপমাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

প্রশ্ন : পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্যাস বেড়ে যাওয়ার কারণগুলো ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : পৃথিবীতে অধিক হারে লোকসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে আসবাবপত্রসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের চাহিদা। সে চাহিদা পূরণে কলকারখানা ও যানবাহনে কয়লা, কেরোসিন, পেট্রল পোড়ানো হচ্ছে। এসব জ্বালানি পোড়ানোর ফলে পরিবেশে কার্বন-ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে, নতুন নতুন ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র তৈরির জন্য গাছপালা কেটে বন উজাড় করা হচ্ছে। এ কারণে গাছ বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন-ডাইঅক্সাইড শোষণ করছে কম। ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাইঅক্সাইড বেড়ে যাচ্ছে।

প্রশ্ন : গ্রিনহাউস গ্যাস কী? আমরা দেখি যে, বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে আমাদের ওপর কী প্রভাব পড়ছে বলে তুমি মনে করো? ৩টি বাক্যে লেখো।

উত্তর : বায়ুমন্ডলের কার্বন-ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও জলীয়বাষ্প গ্রিনহাউসের কাচের মতো কাজ করে। এরা সূর্যের তাপ পৃথিবীতে আসতে বাধা দেয় না। কিন্তু এ গ্যাসগুলো উত্তপ্ত পৃথিবীতে থেকে তাপকে চলে যেতে বাধা দেয়। ফলে পৃথিবী রাতের বেলায়ও গরম থাকে। এসব গ্যাসকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলে।

পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির কারণে আমাদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে আমি মনে করি। যেমন- এ উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে এবং মেরু অঞ্চল ও পর্বতের চূড়ার বরফ গলে যাচ্ছে এবং সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় দেশগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু তাই নয়- এর ফলে সাগর থেকে নদীতে লোনা পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রশ্ন : জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে কীভাবে রক্ষা করা সম্ভব বলে তুমি মনে করো? ৫টি বাক্যে লেখো।

উত্তর : জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা উচিত-

১. বন উজাড় না করে অধিক পরিমাণে গাছ লাগানো।

২. কার্বন-ডাইঅক্সাইড কম উৎপন্ন হয় এমন জ্বালানি ব্যবহার।

৩. কলকারখানা স্থাপনের আগে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ।

৪. অধিক পরিমাণে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার।

৫. গ্রিনহাউস গ্যাসের ব্যবহার কমানো।

প্রশ্ন : তোমাকে এমন একটি এলাকায় বাস করতে বলা হলো যেখানে প্রতি বছর কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। ওই পরিবেশে তুমি কীভাবে খাপ খাইয়ে চলবে? ৫টি বাক্যে লেখো।

উত্তর : ওই এলাকায় খাপ খাইয়ে চলার জন্য আমি নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করব-

১. দুর্যোগ শুরুর আগেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

২. শুকনো খাবার সংরক্ষণ করে রাখব।

৩. শিশু, বৃদ্ধ ও গৃহপালিত পশু-পাখিকে আগেই আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাব।

৪. বন্যার কারণে কোনো জায়গা পানিতে ডুবে থাকলে তাতে ভাসমান ধাপ তৈরি করে তার উপর মাটি দেবো এবং ওই ধাপের উপর লাউ, শিম, বেগুন, ঢেঁড়স, টমেটো, ঝিঙা প্রভৃতি চাষ করব।

৫. লবণাক্ত মাটিতে জন্মাতে পারে এরকম ফসলের জাত উদ্ভাবন করে চাষ করার চেষ্টা করব।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে