অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

হাবিবুর রহমান বাপ্পা, সহকারী শিক্ষক, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
পঞ্চদশ অধ্যায় বায়ুশক্তি প্রাচীনকাল থেকে মানুষ বায়ুশক্তি ব্যবহার করে এসেছে, কিছুদিন আগেও আমাদের দেশে নদীতে পালতোলা নৌকা একটি খুবই পরিচিত দৃশ্য ছিল যেগুলো কোনো জ্বালানি বা মানুষের শ্রম ব্যবহার না করে বিপুল পরিমাণ পণ্যকে স্থানান্তর করতে পারত। বাতাসের শক্তি কাজে লাগিয়ে উইন্ড টারবাইনের মাধ্যমে বিদু্যৎশক্তি উৎপাদন করা যায়। ডেনমার্ক, উরুগুয়ে, চীন, জার্মানি প্রভৃতি দেশ বায়ুশক্তি ব্যবহার করে বিদু্যৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশে কক্সবাজার এবং কুতুবদিয়ায় বায়ুশক্তি থেকে বিদু্যৎ উৎপাদন করা শুরু হয়েছে। বায়ুশক্তি থেকে কোনো দুষিত পদার্থ পরিবেশে ছড়ায় না, এজন্য এটি পরিচ্ছন্ন শক্তি। এছাড়াও বায়ুশক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। পানিশক্তি জলবিদু্যৎ কেন্দ্রে অতিকায় জলাধারের পানির চাপকে ব্যবহার করে বিদু্যৎ উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাইয়ে জলবিদু্যৎ কেন্দ্র রয়েছে যেটি দেশের বিদু্যৎ চাহিদা পূরণে বডড়ো ভূমিকা পালন করে। সৌর বা বায়ুশক্তির মতো অসীম সময়ব্যাপী না হলেও একটি জলবিদু্যৎকেন্দ্র অনেক বছর পর্যন্ত বিদু্যৎ সরবরাহ করতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচুর পরিমাণে জলবিদু্যৎ কেন্দ্র রয়েছে। বায়োমাস বায়োমাস বলতে বিভিন্ন জৈব পদার্থকে বোঝায়। যেমন-হাঁস মুরগির খামারের বর্জ্য, রান্নাঘরের উচ্ছিষ্ট, গবাদি পশুর খামারের বর্জ্য, অন্যান্য কৃষিবর্জ্য, কাঠ ইত্যাদি। এসব বর্জ্যের অনেকগুলো পচনের মাধ্যমে এবং কিছু সরাসরি ব্যবহার করে তাপ এবং বিদু্যৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা যায়। বায়োগ্যাস পস্নান্ট ব্যবহার করে তা থেকে জ্বালানি গ্যাস এবং তার পাশাপাশি উর্বর জৈব সার পাওয়া যায় যেগুলো পরবর্তী সময়ে কৃষি জমিতে ব্যবহার করা যায়। জৈব সার পরিবেশবান্ধব, রাসায়নিক সারের মতো পরিবেশ দূষণ করে না। মানুষ এবং অন্যান্য পশুপাখি ক্রমাগত জৈব বর্জ্য উৎপাদন করে, তাই বায়োমাসকে নবায়নযোগ্য সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বনাঞ্চল পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ভৌগোলিক ও জলবায়ুগত কারণে নানা ধরনের বনের সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর মানুষ এবং জীবজগতের সকল প্রাণীর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য প্রযয়োজনীয় অক্সিজেনের একটি বড় অংশ এই বনাঞ্চল সরবরাহ করে। মানুষের প্রয়োজনের অনেক বস্তুও বন থেকে সংগ্রহ করা হয়। যথাযথ নিয়ম মেনে বনজসম্পদ সংগ্রহ করা হলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে বন সেগুলো পূরণ করে ফেলে। ভূতাপীয় শক্তি ভূপৃষ্ঠ থেকে যত গভীরে যাওয়া যায় সেখানে তাপমাত্রা তত বেশি হতে থাকে। এই তাপ শক্তিকে কাজে লাগিযয়ে বিদু্যৎ শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব। এটি করার জন্য পাইপ ব্যবহার করে ভূগর্ভে পানি প্রবেশ করানো হয়, সেখানে পানি ভূগর্ভস্থ তাপের তখন অন্য আরেকটি পাইপ দিয়ে বাষ্প বের করে এনে সেটি কাজে লাগানো হয়। যে সকল দেশে আগ্নেয়গিরি রযয়েছে বা ভূপৃষ্ঠ থেকে স্বল্প গভীরতাতেই তাপ রয়েছে সেসব দেশে ভূতাপীয় শক্তি কাজে লাগানোর ভালো সুযোগ রয়েছে। আইসল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ইতালি ইত্যাদি দেশগুলো ভূতাপীয় শক্তি কাজে লাগানোর উপযোগী। আইসল্যান্ডে তাপের চাহিদার ৯০% ভূতাপীয় শক্তি থেকে সরবরাহ করা করা হয়। ভূতাপীয় শক্তির উৎপাদনে পরিবেশ দূষণ ঘটে না, তাছাড়া এই শক্তিও প্রায় অসীম। অনবায়নযোগ্য সম্পদ অনবায়নযোগ্য সম্পদ পরিমাণে সীমিত এবং এগুলো ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে লক্ষ লক্ষ বছরে গঠিত হয়েছে। একবার ব্যবহৃত হয়ে গেলে সেগুলো মানুষের জীবদ্দশার মাঝে আর পুনরায় পূরণ করা সম্ভব হয় না। অনবায়নযোগ্য সম্পদের মাঝে রয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি, খনিজ পদার্থ, পারমাণবিক জ্বালানি ইত্যাদি। বিভিন্ন মূল্যবান বস্তও অনবায়নযোগ্য সম্পদের মাঝে পড়ে। নবায়নযোগ্য সম্পদের উদাহরণ নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনবায়নযোগ্য সম্পদের কথা বলা হলো। জীবাশ্ম জ্বালানি জীবাশ্ম জ্বালানি বলতে আমরা কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসকে বুঝিয়ে থাকি এবং এগুলো হলো বৈশ্বিক শক্তির প্রাথমিক উৎস। বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ লক্ষ কোটি বছর ধরে মাটি ও পাথরের নিচে চাপা পড়ে বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানিতে রূপান্তরিত হয়। এই জীবাশ্ম জ্বালানি গত কয়েক শতাব্দী থেকে শিল্পায়ন ও পরিবহণকে চালিত করেছে। আমরা যে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় যাতায়াত করি সেই সিএনজি আসলে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে প্রস্তুত করা হয়। আবার যে বাস বা ট্রেনে আমরা যাতায়াত করি তা মূলত ডিজেলের চলে। যে বিদু্যৎ কেন্দ্র থেকে আমরা বিদু্যৎ পাই তার অনেকগুলোই কয়লা দিয়ে চালানো হয়। এসবই হচ্ছে অনবায়নযোগ্য। খনিজ এবং ধাতু লোহা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতু বিভিন্ন ধরনের খনিজ আকরিক থেকে সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া সোনা, রুপা, পস্নাটিনাম, হীরা প্রভৃতি মূল্যবান দ্রব্যও খনি থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং এগুলো অনবায়নযোগ্য। এগুলোর মজুদ সীমিত এবং একবার সংগ্রহ হয়ে গেলে তা আর পূরণ করা যায় না। পারমাণবিক জ্বালানি পারমাণবিক জ্বালানি, বিশেষ করে ইউরেনিয়াম পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিউক্লিয়ার বিদু্যৎ কেন্দ্রে ইউরেনিয়ামকে বিভাজন করে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করা হয়, যেগুলো ব্যবহার করে বিদু্যৎ তৈরি করা হয়। তবে এই পারমাণবিক জ্বালানি নিষ্কাশন এবং ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। কয়েকটি আকরিক (যেমন-পিচবেস্নন্ড) থেকে ইউরেনিয়াম নিষ্কাশন করা হয়ে থাকে।