দ্বাদশ অধ্যায়
প্রশ্ন : পরিবেশের উপর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব কী কী?
উত্তর : পরিবেশের উপর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব হলো-
- ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের হার ও মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া।
- হঠাৎ ভারী বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যা হওয়া।
- বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে খরা হওয়া।
- সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া এবং নদীর পানিতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করা।
-সবসময় পৃথিবী উষ্ণ থাকে।
প্রশ্ন : গ্রিনহাউসের ভেতরের পরিবেশ গরম থাকে কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : শীতপ্রধান দেশে শাকসবজি চাষের জন্য গ্রিনহাউস তৈরি করা হয়। কাচের ঘর বানিয়ে সেখানে সূর্যের তাপ ধরে রাখা হয়। এ ধরনের ঘরগুলোতে সূর্যের আলো প্রবেশ করে ঘরকে উষ্ণ করে। কিন্তু কাচ তাপ কুপরিবাহী হওয়ায় এই তাপ কাচের দেয়াল ভেদ করে বের হতে পারে না। ফলে গ্রিনহাউস তাড়াতাড়ি গরম হয় এবং তাপ ভেতরে থেকে যায়। এ জন্য গ্রিনহাউসের ভেতরের পরিবেশ সব সময় গরম থাকে।
প্রশ্ন : জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমানো এবং এর সঙ্গে খাপ খাওয়ানো কীভাবে সম্পর্কিত?
উত্তর : জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমানো ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো বিষয় দুটি পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ দুটি বিষয়ই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল। বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী, জলবায়ুর পরিবর্তন বিভিন্ন প্রাকৃতিক সমস্যা ও দুর্যোগকে ভয়াবহ করে তুলবে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলোকে কমিয়ে, যেমন- বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাইঅক্সাইডের নির্গমনের পরিমাণ কমিয়ে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমাতে পারি। আর এই পরিবর্তিত জলবায়ুতে আমরা নিজেদের খাপ খাওয়ানোর মাধ্যমে এর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করতে পারি।
প্রশ্ন : কীভাবে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমাতে পারি?
উত্তর : বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ কমিয়ে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমাতে পারি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পৃথিবীর জলবায়ু ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে। কয়লা, তেল, গ্যাস ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাইঅক্সাইড নির্গত হয়। আবার বনভূমি ধ্বংসের কারণে গাছপালার মাধ্যমে কার্বন-ডাইঅক্সাইডের শোষণের হারও কমেছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বায়ুতে নির্গত কার্বন-ডাইঅক্সাইডের শোষণ বাড়ানো সম্ভব। দৈনন্দিন জীবনে শক্তির ব্যবহার কমিয়েও আমরা কার্বন-ডাইঅক্সাইড নির্গমন কমাতে পারি।
প্রশ্ন : প্রায়ই শোনা যায় পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ৫টি বাক্যে এর কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : পৃথিবীর চারদিক ঘিরে থাকা বায়ুমন্ডলে আছে কার্বন-ডাইঅক্সাইড, মিথেন, জলীয়বাষ্পসহ অন্যান্য গ্যাস- যাকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। এরা সূর্যের তাপ পৃথিবীতে আসতে কোনো বাধা দেয় না কিন্তু উত্তপ্ত পৃথিবী থেকে তাপকে চলে যেতে বাধা দেয়, ফলে পৃথিবী রাতের বেলায়ও গরম থাকতে পারে। এ গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর মধ্য বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেশি থাকায় এরা বেশি বেশি তাপ ধরে রাখতে পারছে। তাই পৃথিবীর তাপমাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন : গ্রিনহাউস গ্যাস কী? আমরা দেখি যে, বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে আমাদের ওপর কী প্রভাব পড়ছে বলে তুমি মনে করো? ৩টি বাক্যে লেখো।
উত্তর : বায়ুমন্ডলের কার্বন-ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও জলীয়বাষ্প গ্রিনহাউসের কাচের মতো কাজ করে। এরা সূর্যের তাপ পৃথিবীতে আসতে বাধা দেয় না। কিন্তু এ গ্যাসগুলো উত্তপ্ত পৃথিবীতে থেকে তাপকে চলে যেতে বাধা দেয়। ফলে পৃথিবী রাতের বেলায়ও গরম থাকে। এসব গ্যাসকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলে।
পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির কারণে আমাদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে আমি মনে করি। যেমন- এ উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে এবং মেরু অঞ্চল ও পর্বতের চূড়ার বরফ গলে যাচ্ছে এবং সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় দেশগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু তাই নয়- এর ফলে সাগর থেকে নদীতে লোনা পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রশ্ন : জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে কীভাবে রক্ষা করা সম্ভব বলে তুমি মনে করো? ৫টি বাক্যে লেখো।
উত্তর : জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা উচিত-
১. বন উজাড় না করে অধিক পরিমাণে গাছ লাগানো।
২. কার্বন-ডাইঅক্সাইড কম উৎপন্ন হয় এমন জ্বালানি ব্যবহার।
৩. কলকারখানা স্থাপনের আগে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ।
৪. অধিক পরিমাণে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার।
৫. গ্রিনহাউস গ্যাসের ব্যবহার কমানো।
প্রশ্ন : তোমাকে এমন একটি এলাকায় বাস করতে বলা হলো যেখানে প্রতি বছর কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। ওই পরিবেশে তুমি কীভাবে খাপ খাইয়ে চলবে? ৫টি বাক্যে লেখো।
উত্তর : ওই এলাকায় খাপ খাইয়ে চলার জন্য আমি নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করব-
১. দুর্যোগ শুরুর আগেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
২. শুকনো খাবার সংরক্ষণ করে রাখব।
৩. শিশু, বৃদ্ধ ও গৃহপালিত পশু-পাখিকে আগেই আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাব।
৪. বন্যার কারণে কোনো জায়গা পানিতে ডুবে থাকলে তাতে ভাসমান ধাপ তৈরি করে তার ওপর মাটি দেবো এবং ওই ধাপের উপর লাউ, শিম, বেগুন, ঢেঁড়স, টমেটো, ঝিঙা প্রভৃতি চাষ করব।
৫. লবণাক্ত মাটিতে জন্মাতে পারে এ রকম ফসলের জাত উদ্ভাবন করে চাষ করার চেষ্টা করব।
প্রশ্ন : গ্রিনহাউস কেন গরম থাকে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : কাচ তাপ কুপরিবাহী। কাচের ভেতর দিয়ে তাপ সহজে চলাচল করতে পারে না। কিন্তু আলো খুব সহজেই কাচের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে পারে। গ্রিনহাউসের দেয়াল এবং ছাদ কাচের তৈরি। এ কারণে সূর্যের আলো খুব সহজেই কাচের ভেতর দিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। অন্যদিকে বাইরের ঠান্ডা ঘরের ভেতরে আসতে পারে না। আবার ঘরের ভেতরের গরমও বাইরে যেতে পারে না। এতে গ্রিনহাউসের ভেতরটা বেশ গরম থাকে।
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়