চর্তুদশ অধ্যায়
সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ক্ষারধর্মী হওয়ার কারণে চর্বি ও প্রোটিন জাতীয় পদার্থকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, হাইপোক্লোরাস অ্যাসিড (ঐঙঈষ) ভেঙে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (ঐঈষ) ও জায়মান অক্সিজেন [ঙ] উৎপন্ন করে। (তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে লিখে [ঙ] জায়মান অক্সিজেনকে বোঝানো হয়)
কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে রসায়ন
কৃষি এবং শিল্প ক্ষেত্রে রসায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উভয় ক্ষেত্রেই রসায়ন নতুন নতুন উদ্ভাবন করে আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য সচেষ্ট রয়েছে।
কৃষি ক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ফসল উৎপাদনে একটি অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। এই সার ফসলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং তাদের ফলন বহুগুণে বৃদ্ধি করে। সারের পাশাপাশি রাসায়নিক কীটনাশক ফসলকে কীটপতঙ্গ, রোগ এবং আগাছা থেকে রক্ষা করে।
রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় মাটিকে বিশ্লেষণ করে কোন মাটিতে কোন ফসল ফলানো সম্ভব এবং তার জন্য কোন ধরনের সার কতটুকু প্রয়োগ করতে হবে সে ব্যাপারে কৃষকদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। রসায়নের সহায়তা নিয়ে বিভিন্ন কৃষিজাত ফসল ও ফলমূল সংরক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপদ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় এবং খাবারের রসায়ন দিয়ে কৃষিজাত খাদ্যের পুষ্টিগুণ নির্ণয় করা হয়।
পঞ্চদশ অধ্যায়
সম্পদ বলতে আমরা কী বোঝাই? প্রাণ ধারণ থেকে শুরু করে উন্নত জীবন যাপনের জন্য যা কিছু মানুষের প্রয়োজন তার সবই সম্পদ। সে কারণে মানুষের শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বুদ্ধি, দক্ষতা-অভিজ্ঞতা সেগুলোও সম্পদ, সেজন্য দক্ষ মানুষকে আমরা মানব সম্পদ বলি। তবে এই অধ্যায়ে আমরা মানব সম্পদ নয়, শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে আলোচনা করব।
লোহা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুর মতো পানি, বায়ু, সূর্যের আলো, মাটি সব আমরা প্রকৃতি থেকে পাই, তাই এই সবই প্রাকৃতিক সম্পদ আমরা শক্তির উৎস হিসেবে কাঠ, গ্যাস, কয়লা এরকম বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করি। আবার বিভিন্ন বস্তু তৈরিতেও নানান সম্পদ ব্যবহার করা হয়।
যেমন- বিভিন্ন প্রকার গাড়ির কাঠামো এবং যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করতে যে ধাতু লাগে তা খনি থেকে সংগ্রহ করা আকরিক থেকে নিষ্কাশন করে পাওয়া যায়। গাড়ির চাকা যে রাবার থেকে তৈরি হয় তা আসে রাবার গাছ থেকে সংগ্রহ করা আঠা প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে ?
যে পেন্সিল দিয়ে আমরা লিখি বা আঁকি তার কাঠ আসে সিডার বা পপলার গাছ থেকে পেন্সিলের শিস তৈরির অন্যতম উপাদান গ্রাফাইট (যা এক ধরনের কার্বন) সংগ্রহ করা হয় খনি থেকে। যে পানিতে আমরা কাপড় পরিষ্কার করি এবং যে সূর্যের আলো ও বাতাসে শুকাতে দেই সেগুলোও সম্পদ। এগুলো প্রাকৃতিক সম্পদ কারণ এগুলোর উৎস প্রাকৃতিক এবং মানুষের জীবনে এগুলোর চাহিদা রয়েছে।
একটি সম্পদ ব্যবহার করে ফেলার পর সেটি আবার প্রাকৃতিকভাবে পূরণ করা যায় কি না সেটি সম্পদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এর ভিত্তিতে সম্পদকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-নবায়নযোগ্য সম্পদ এবং অনবায়নযোগ্য সম্পদ।
নবায়নযোগ্য সম্পদ
নবায়নযোগ্য সম্পদ হলো সেইসব সম্পদ যেগুলো প্রাকৃতিকভাবে পূরণ করা যায় কিংবা মানুষের জীবদ্দশার মাঝেই আবার উৎপাদন করে ফেলা যায়। সেজন্য নবায়নযোগ্য সম্পদকে সবসময় অনবায়নযোগ্য সম্পদের টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
নবায়নযোগ্য সম্পদের বৈশিষ্ট্য
নবায়নযোগ্য সম্পদের প্রধান তিনটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- প্রাচুর্য, পুনরায় উৎপাদনের ক্ষমতা এবং পরিবেশে কোনো বিরূপ প্রভাব না ফেলা।
প্রাচুর্য : নবায়নযোগ্য সম্পদসমূহের প্রাচুর্য রয়েছে এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। যেমন- যতদিন সূর্য পৃথিবীকে আলোকিত করবে ততদিন আমরা সৌরশক্তি পাব, লক্ষ কোটি বছরের মধ্যেও তা শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
পুনরুৎপাদনের ক্ষমতা : নবায়নযোগ্য সম্পদ অনেক সময় পুনরুৎপাদনের ক্ষমতা রাখে। যেমনকোনো গাছের ডাল ছেঁটে জ্বালানি সংগ্রহ করলে সে গাছে আবার নতুন ডালপালা গজায় বনও পুনরুৎপাদনের ক্ষমতা রাখে, বন থেকে সীমিতভাবে সম্পদ সংগ্রহ করলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটি আবার পূরণ হয়ে যায়।
২০০৭ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের কারণে সুন্দরবনের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে জনগণকে ভেঙে পড়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত গাছ বন থেকে সংগ্রহ থেকে বিরত রাখা হয়। ফলে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় বছরের মাঝে সুন্দরবনের ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলো পুনরায় আগের রূপে ফিরে এসেছিল।
পরিবেশে নূ্যনতম বিরূপ প্রভাব : নবায়নযোগ্য সম্পদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সেগুলো পরিবেশের উপর খুব কম বিরূপ প্রভাব ফেলে- অনেক সময় কোনো বিরূপ প্রভাবই ফেলে না। যেমন- সূর্যের আলো, তাপ অথবা বায়ুশক্তি ব্যবহার করলে তা পরিবেশের উপর কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলে না।
নবায়নযোগ্য সম্পদের উদাহরণ
পৃথিবীতে নানা ধরনের নবায়নযোগ্য সম্পদ আছে, তার মধ্যে কিছু সম্পদ আমাদের শক্তি চাহিদা পূরণ করে আর কিছু সম্পদ আমাদের বস্তুগত চাহিদা পূরণ করে। কয়েকটি উলেস্নখযোগ্য নবায়নযোগ্য সম্পদের কথা নিচে উলেস্নখ করা হলো :
সৌরশক্তি
সূর্যের অভ্যন্তরে ফিউশন নামের নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ শক্তি সৃষ্টি হয়। সূর্য থেকে নির্গত সেই সৌরশক্তি তাপ এবং আলো হিসেবে পৃথিবীতে আসে তাপের উৎস এবং বিদু্যৎ উৎপাদনের জন্য সৌরশক্তির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
তোমরা সবাই ফটোভোল্টাইক প্যানেল বা সৌর প্যানেল দিয়ে সূর্যের আলোকে সরাসরি বিদু্যৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করতে দেখেছ। বড় সোলার কনসেন্ট্রেটর দিয়ে বাষ্প উৎপাদন করে সেগুলোও নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। শীতপ্রধান দেশে পানি গরম করা এবং ঘর গরম রাখার জন্যও সৌরশক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়