একাদশ অধ্যায়
প্রশ্ন : আমাদের দেশে প্রায়ই কালবৈশাখী ঝড় ও ঘূর্ণিঝড় দেখা যায়। তাদের মধ্যে তুমি কী কী মিল ও অমিল খুঁজে পাও?
উত্তর : কালবৈশাখী ঝড় ও ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে মিল ও অমিলগুলো হলো :
মিল : কালবৈশাখী ঝড় ও ঘূর্ণিঝড় দুটিই গ্রীষ্মকালে সৃষ্ট হয় বায়ুর নিম্নচাপের কারণে। দুটিই বজ্রঝড়। দুটিতেই ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
অমিল :কালবৈশাখী ঝড় সাধারণত বিকাল বেলা বেশি হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই।
\হকালবৈশাখী ঝড়ের বিস্তৃতি সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড়ের বিস্তৃতি ৫০০-৮০০ কিলোমিটার।
\হকালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে ভারী বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি দেখা যায়। পক্ষান্তরে ঘূর্ণিঝড়ে দমকা হাওয়ার সঙ্গে মূষলধারে বৃষ্টি হয়। কখনো কখনো সৃষ্টি হয় জলোচ্ছ্বাসের।
প্রশ্ন : শীতকালে বাংলাদেশে শৈতপ্রবাহ হওয়ার কারণ ৫টি বাক্যে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : শীতকালে শৈতপ্রবাহের কারণ :
১. শীতকালে বাংলাদেশের উত্তরের শুষ্ক ও শীতল বায়ু দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে মাঝে মাঝে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় এবং সৃষ্টি হয় শৈতপ্রবাহের।
২. শীতকালে বঙ্গোপসাগর এলাকা থাকে উত্তপ্ত এবং সেখানে বিরাজ করে বায়ুর নিম্নচাপ।
৩. তখন দেশের উত্তরে বেশি থাকে শীত ও বায়ুচাপ।
৪. শীতকালে বায়ু উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়।
৫. এই বায়ু স্থলভাগ থেকে আসে বলে এতে কম জলীয় বাষ্প থাকে এবং তা হয় শুষ্ক ও শীতল। এই বায়ুর প্রভাবেই শীতকালে বাংলাদেশে শৈতপ্রবাহ হয়।
প্রশ্ন : রাতের বেলা স্থলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ ও জলভাগের ওপর নিম্নচাপ বিরাজ করে কেন?
উত্তর : রাতের বেলা স্থলভাগ দ্রম্নত ঠান্ডা হয়ে যায়, কিন্তু জলভাগ অপেক্ষাকৃত উত্তপ্ত থাকে বলে তখন স্থলভাগের ওপর বায়ুর উচ্চচাপ ও জলভাগের ওপর নিম্নচাপ বিরাজ করে।
পানি অপেক্ষা বালি বা মাটি দ্রম্নত উত্তপ্ত বা ঠান্ডা হয়। দিনের বেলা সূর্যের তাপে জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ বেশি উত্তপ্ত হয়। আবার রাতের বেলা দ্রম্নত তাপ বিকিরণ করে জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ বেশি ঠান্ডা হয়। এতে রাতে স্থলভাগের ওপরের বায়ু শীতল হয়ে নিচের দিকে নেমে আসে এবং সেখানে বায়ুর উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে পানির তাপ বিকিরণ ক্ষমতা কম বলে রাতের বেলা জলভাগ অপেক্ষাকৃত বেশি উত্তপ্ত থাকে। ফলে জলভাগের ওপরস্থ উষ্ণ বায়ু হালকা হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায় ও নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। তাই রাতের বেলা স্থলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ ও জলভাগে বায়ুর নিম্নচাপ বিরাজ করে।
প্রশ্ন :বায়ুচাপ কীভাবে বায়ুপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে?
উত্তর : কোথাও বায়ুচাপ কমে গেলে সেখানে পার্শ্ববর্তী উচ্চ বায়ুচাপবিশিষ্ট এলাকা থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়। এভাবে বায়ুচাপ বায়ুপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
বায়ু তার ওজনের কারণে ভূপৃষ্ঠের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। এই বায়ুচাপ আবহাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। কোনো এলাকায় খাড়াভাবে সূর্যের কিরণ পড়লে সেখানে বায়ু উষ্ণ হয়ে হালকা হয় ও ওপরের দিকে উঠে যায়। ফলে সেখানে সৃষ্টি হয় শূন্যস্থানের ও কমে যায় বায়ুচাপ। একে বলে নিম্নচাপ। আবার কোনো এলাকায় বায়ু ঠান্ডা হয়ে নিচের দিকে নেমে এলে বায়ুচাপ বৃদ্ধি পায়, যা উচ্চ বায়ুচাপ নামে পরিচিত। কোনো এলাকায় নিম্নচাপ বিরাজ করলে সে এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই উচ্চ বায়ুচাপ বিশিষ্ট এলাকা থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়।
প্রশ্ন : বর্ষাকালে বাংলাদেশে বায়ুর আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বর্ষাকালে বায়ুর আর্দ্রতা বেশি হওয়ার কারণ : আর্দ্রতা হলো বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বায়ুর আর্দ্রতাও বৃদ্ধি পায়।
১. বর্ষাকালে বাংলাদেশে অধিক বৃষ্টিপাত হয় বলে বায়ুর আর্দ্রতা বেশি থাকে। ২. বর্ষাকালে সে সময় বাংলাদেশের জলভাগ অপেক্ষা বেশি উষ্ণ থাকে স্থলভাগ। ৩. স্থলভাগে বায়ুর নিম্নচাপ ও জলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ বিরাজ করে। ৪. তখন বঙ্গোপসাগর এলাকা থেকে অধিক জলীয় বাষ্প-সমৃদ্ধ বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয় এবং সেখানে সংঘটিত হয় প্রচুর বৃষ্টিপাত। তাই বর্ষাকালে বাংলাদেশে বায়ুর আর্দ্রতা বেশি থাকে।
প্রশ্ন :উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : দিনে স্থলভাগ জলভাগ থেকে উষ্ণ থাকে। উষ্ণ স্থলভাগ তার ওপর থাকা বাতাসের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। বায়ু উষ্ণ হলে তা হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। ফলে ওই স্থান ফাঁকা হয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে সমুদ্রের ওপরের বায়ু স্থলভাগ থেকে ঠান্ডা হওয়ার কারণে তা ভারী হয়ে নিচে নেমে আসে। এর ফলে সমুদ্রের ওপর বায়ুর চাপ বেড়ে যায়। নিম্নচাপ অঞ্চলের গরম বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এর ফলে সৃষ্ট ফাঁকা স্থান পূরণের জন্য উচ্চচাপ অঞ্চলের শীতল বায়ু নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। রাতে স্থলভাগ সমুদ্রের তুলনায় ঠান্ডা থাকে। তাই তখন স্থলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ ও সমুদ্রে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন: বিরূপ আবহাওয়া কী? তাপদাহ ও শৈতপ্রবাহ সমন্ধে যা জান লেখ।
উত্তর : আবহাওয়ার কোনো উপাদান যখন অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হয়, তখন তাকে বিরূপ আবহাওয়া বলা হয়।
তাপদাহ ও শৈতপ্রবাহ : অতি গরম আবহাওয়ার দীর্ঘস্থায়ী অবস্থাই হলো তাপদাহ। অস্বাভাবিক তাপদাহের ফলে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আবার এই তাপদাহের কারণে কখনো কখনো মানুষসহ হাজার হাজার জীবের মৃতু্য হয়।
উত্তরের শুষ্ক ও শীতল বায়ু আমাদের দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহের ফলে শীতকালে তাপমাত্রা কখনো কখনো অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এই অবস্থাই হলো শৈতপ্রবাহ। তবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য অসহনীয় শৈতপ্রবাহ বাংলাদেশে খুব কমই দেখা যায়।
প্রশ্ন : বন্যা ও খরা কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : স্বাভাবিক স্থলভাগ সাময়িকভাবে পানিতে পস্নাবিত হয়ে যাওয়াকে বন্যা বলে। পরবর্তীতে পানি নেমে গেলে আবার স্থলভাগ স্বাভাবিক হয়। বাংলাদেশে বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে এক পঞ্চমাংশ পানিতে তলিয়ে যায়। প্রবল বৃষ্টিপাত বা বহিরাগত পানির কারণে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতাও সৃষ্টি হয়। এই জলাবদ্ধতাই বন্যা নামে পরিচিত।
দীর্ঘ সময় ধরে আবহাওয়া শুষ্ক থাকলে মাটির সতেজতা হ্রাস পেয়ে মাটি ফেটে যায়। এই অবস্থাকে খরা বলে। দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাতের অনুপস্থিতির কারণে ভূমির জলীয়ভাব হ্রাস পায়। এ সময় সেচ দেওয়া না গেলে মাটি ফেটে চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গাছপালা স্বাভাবিক সতেজতা হারায়, পাতা পড়ে যায়। পরিবেশের এই বিরূপ অবস্থাই খরা নামে পরিচিত। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে খরা দেখা যায়।