রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান

রোমানা হাবিব চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, ব্রাইট ফোর টিউটোরিয়াল হোম, চট্টগ্রাম
  ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান

একাদশ অধ্যায়

প্রশ্ন : তোমার জেলা দক্ষিণাঞ্চলে, যেটি টর্নেডো ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ অঞ্চল। তুমি এই দুটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্বন্ধে কী জান?

উত্তর : টর্নেডো : টর্নেডো হলো সরু, ফানেল আকৃতির ঘূর্ণায়মান শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ। এই বায়ুপ্রবাহ আকাশের বজ্রমেঘের স্তর থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। টর্নেডো আকারে সাধারণত এক কিলোমিটারের কম হয়।

ঘূর্ণিঝড় : ঘূর্ণিঝড় হলো নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণায়মান সামুদ্রিক বজ্রঝড়। এটি ৫০০-৮০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হয়। অত্যধিক গরমের ফলে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের পানি ব্যাপকহারে বাষ্পে পরিণত হয়। এর ফলে ওইসব স্থানে সৃষ্ট নিম্নচাপ থেকেই তৈরি হয় ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের সময় দমকা হাওয়া বইতে থাকে ও মুষলধারে বৃষ্টি হতে থাকে। কখনো কখনো ঘূর্ণিঝড়ের ফলে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের জলবায়ুতে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দুর্যোগ দেখতে পাওয়া যায়। একটির কারণ পানির আধিক্য আরেকটির কারণ পানিহীনতা। দুর্যোগ দুটি কী কী? আলোচনা কর।

উত্তর : পানির আধিক্য ও পানিহীনতার কারণে সৃষ্ট দুটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো- যথাক্রমে বন্যা ও খরা। নিচে তাদের বর্ণনা দেওয়া হলো :

বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের এক পঞ্চমাংশ পানিতে তলিয়ে যায়। তবে ভয়াবহ বন্যার সময় বাংলাদেশের দুই তৃতীয়াংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়।

অনেক লম্বা সময় শুষ্ক আবহাওয়া থাকলে খরা দেখা দেয়। অস্বাভাবিক কম বৃষ্টিপাত ও উচ্চ তাপমাত্রাই খরার কারণ। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে খরা দেখা যায়।

প্রশ্ন: সৃজনী সংবাদপত্রে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর পড়ছে। পত্রিকায় ছাপানো ছবি অনুযায়ী, সেটি ছিল সরু ফানেলের মতো ঘূর্ণায়মান বায়ুপ্রবাহ। বায়ুপ্রবাহটি সেখানে কী কী ক্ষতি করতে পারে বলে তুমি মনে কর?

উত্তর : যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া যে দুর্যোগের কথা সৃজনী পড়ছে, সেটি হলো টর্নেডো।

টর্নেডো হলো সরু, ফানেল আকৃতির ঘূর্ণায়মান শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ। এই বায়ুপ্রবাহ আকাশের বজ্রমেঘের স্তর থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। টর্নেডো আকারে সাধারণত এক কিলোমিটারের কম হয়।

টর্নেডোর ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। যেমন- ঘরবাড়ির ছাদ উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে, দেয়াল ভেঙে যেতে পারে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। শক্তিশালী টর্নেডো বড় বড় স্থাপনাও ভেঙে ফেলতে পারে।

প্রশ্ন: তোমার বন্ধু নিলয়ের বাড়ি উপকূল এলাকায়। তারা প্রায়ই সামুদ্রিক বজ্রঝড়ের কবলে পড়ে। কখনো কখনো বিশাল এলাকা পস্নাবিত হয়ে যায়। নিলয়ের কাছে এসবের গল্প শুনে তুমি যা যা জেনেছ, ৫টি বাক্যে তার বিবরণ দাও।

উত্তর : নিলয়ের কাছে সামুদ্রিক যে বজ্রঝড়ের গল্প আমি শুনেছি, এর নাম হলো ঘূর্ণিঝড়।

ঘূর্ণিঝড়ের বিবরণ :

১. ঘূর্ণিঝড় হলো- নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণায়মান সামুদ্রিক বজ্রঝড়, যা ৫০০-৮০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হয়।

২. অত্যধিক গরমের ফলে বঙ্গোপসাগরের পানি ব্যাপকহারে বাষ্পে পরিণত হলে সৃষ্ট নিম্নচাপ থেকেই তৈরি হয় ঘূর্ণিঝড়।

৩. ঘূর্ণিঝড়ের সময় দমকা হাওয়া বইতে থাকে ও মুষলধারে বৃষ্টি হতে থাকে।

৪. কখনো কখনো ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে লোকালয় পস্নাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়।

৫. মাঝে মাঝে জলোচ্ছ্বাসের ফলে সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে তীব্র জোয়ারের সৃষ্টি হয় এবং সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

প্রশ্ন: তুমি টেলিভিশনের নিউজের মাধ্যমে জানতে পারলে সারাদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হবে। অথচ সারাদিন কড়কড়ে রোদ দেখতে পেলে। এর কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : প্রশ্নে উলিস্নখিত ঘটনাটি হওয়ার কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তনশীলতা।

কোনো নির্দিষ্ট সময় কোনো নির্দিষ্ট স্থানের আকাশ ও বায়ুমন্ডলের সাময়িক অবস্থা হলো আবহাওয়া। অর্থাৎ কোনো স্থানের রোদ, বৃষ্টি, তাপমাত্রা, মেঘ, কুয়াশা, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি অবস্থাগুলো মিলে হয় আবহাওয়া।

তাই আবহাওয়াবিদরা আবহাওয়া সমন্ধে পূর্বাভাস

দিলে তা সবসময় সঠিক নাও হতে পারে। কারণ, সামান্য সময়ের ব্যবধানে আবহাওয়ার নিয়ামকগুলোর পরিবর্তন হতে পারে। যেমন- ভূপৃষ্ঠে সূর্যের তাপ খাড়াভাবে পড়লে সেখানকার বাতাস হালকা হয়ে উপরে উঠে যায় ও নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় তখন উচ্চচাপবিশিষ্ট স্থান থেকে নিম্নচাপের স্থানে বায়ু প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ আবহাওয়া সবসময় পরিবর্তনশীল। তাই আমি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পরিবর্তে সারাদিন কড়কড়ে রোদ দেখতে পেলাম।

প্রশ্ন: গ্রীষ্মের এক বিকালে হঠাৎ করে ঝড় শুরু হলো। এটাকে তুমি কী বলবে? এর উৎপত্তি সমন্ধে তোমার ধারণা উপস্থান কর।

উত্তর : গ্রীষ্মের বিকালে হঠাৎ শুরু হওয়া ঝড়কে আমি কালবৈশাখী ঝড় বলব।

কালবৈশাখীর উৎপত্তি : গ্রীষ্মকালে কালবৈশাখী সৃষ্টি হওয়ার কারণ হলো, এ সময় স্থলভাগ অত্যন্ত উত্তপ্ত থাকে। গ্রীষ্মকালে সূর্য বাংলাদেশের ওপর খাড়াভাবে কিরণ দেয়। এতে এই অঞ্চলের বায়ু সকাল থেকে দুপুরের রোদের তাপে হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এভাবে বিকালের দিকে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এ সময় দেশের উত্তরে উচ্চ বায়ুচাপবিশিষ্ট এলাকা থেকে বায়ু প্রবলবেগে নিম্নচাপের এলাকায় বাহিত হয়। এর সঙ্গে ভারী বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হয়। এটিই হলো কালবৈশাখী।

প্রশ্ন: ইন্দ্রজিতের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। এই জেলায় রয়েছে বিশাল জলভাগ। দিনের বেলায় এই অঞ্চলে কোন দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হবে? আলোচনা কর।

উত্তর : দিনের বেলায় ইন্দ্রজিতের জেলায় উচ্চচাপবিশিষ্ট জলভাগ থেকে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়া স্থলভাগের দিকে বায়ু প্রবাহিত হবে।

দিনে জলভাগের চেয়ে স্থলভাগ বেশি উষ্ণ থাকে। তাই স্থলভাগের ওপর থাকা বায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় এবং তা হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এতে ওই স্থান ফাঁকা হয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে দিনের বেলা জলভাগের উপরস্থ বায়ু শীতল হওয়ার কারণে ভারী হয়ে নিচে নেমে আসে। ফলে সেখানে সৃষ্টি হয় বায়ুর উচ্চচাপ। বায়ু উচ্চচাপের এলাকা থেকে প্রবাহিত হয় নিম্নচাপবিশিষ্ট এলাকায়। কাজেই ইন্দ্রজিতের জেলায় দিনের বেলায় জলভাগের ওপর থেকে শীতল বাতাস নিম্নচাপযুক্ত স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়।

প্রশ্ন : আমাদের প্রতিদিনের পোশাক কিসের ভিত্তিতে নির্বাচন করা উচিত? তোমার মতামত ব্যক্ত কর।

উত্তর :আমাদের প্রতিদিনের পোশাক আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ভিত্তিতে নির্বাচন করা উচিত।

কোনো নির্দিষ্ট সময় কোনো নির্দিষ্ট স্থানের আকাশ ও বায়ুমন্ডলের সাময়িক অবস্থাই হলো আবহাওয়া। অর্থাৎ কোনো স্থানের রোদ, বৃষ্টি, তাপমাত্রা, মেঘ, কুয়াশা, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি অবস্থাগুলো মিলে হয় আবহাওয়া; যা সবসময় পরিবর্তনশীল। আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে বৃষ্টি হওয়ার কথা জানা গেলে আমরা সুতি পোশাকের পরিবর্তে কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাক পরিধান করব, যাতে তা সহজে এবং দ্রম্নত শুকিয়ে যায়। বিরূপ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ব্যাগে রাখব রেইনকোট। অন্যদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে অসহনীয় তাপমাত্রার কথা বলা হলে আমরা পবিধান করব ঢিলেঢালা পোশাক। এভাবে প্রতিদিনের পোশাক নির্বাচনে আমাদের সাহায্য করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে