অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ
প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
হাবিবুর রহমান বাপ্পা, সহকারী শিক্ষক, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
ত্রয়োদশ অধ্যায়
গ) হেয়ার বাল্ব : চামড়ার নিচে চুলের যে অংশ চুলকে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে তাকে হেয়ার বাল্ব বলে।
গ্রন্থি
ত্বকের সর্বত্র নানারকম গ্রন্থি রয়েছে যেগুলো থেকে জলীয়, তৈলাক্ত কিংবা লবণাক্ত দ্রব্য চামড়ার ভেতর থেকে চামড়ার ওপর নির্গত হয় ত্বকতন্ত্র নিচের গ্রন্থগুলো দিয়ে গঠিত :
ক) সুডোরিফেরাস গ্রন্থি : এগুলো আমাদের শরীর থেকে ঘাম নির্গত করে।
খ) সেরাকিউস গ্রন্থি : এগুলো শরীর থেকে তৈলাক্ত পদার্থ নির্গত করে।
গ) সেরামিউনাস গ্রন্থি : এগুলো আমাদের কানে ইয়ার ওয়াক্স নির্গত করে।
ঘ) ম্যামারি গ্রন্থি : এগুলো মানুষের বুকে থাকে এবং মায়ের বুকের দুধ এই গ্রন্থি থেকে নির্গত হয়।
ত্বক তন্ত্রের কাজ
ত্বক আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি তন্ত্র ? ত্বককে অনেক সময় বাইরের বৈরী পরিবেশের বিরুদ্ধে শরীরের প্রথম প্রতিরোধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ত্বকতন্ত্র আমাদের জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে, আঘাত কিংবা ক্ষতস্থানের সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে এবং আঘাত নিরাময় করে। এটি সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও শরীরকে রক্ষা করে।
আমরা ত্বকের মাধ্যমে চাপ তাপ ইত্যাদি অনুভূতি অনুভব করি এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে শরীরকে নিরাপদ রাখতে পারি ত্বক ঘামের ভেতর দিয়ে শরীরের বর্জ্য নিষ্কাশন করে এবং একই সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে শরীরকে শীতল রাখে। আমাদের ত্বক চর্বি, পানি, গস্নুকোজ ইত্যাদি সংরক্ষণ করে এবং ভিটামিন ডি প্রস্তুত করে যা আমাদের শরীরের হাড়ের গঠনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের শরীর প্রকৃতপক্ষে একটি অত্যন্ত জটিল সিস্টেম এবং এখানে সব ক'টি তন্ত্র একে অন্যকে সাহায্য করে মানব দেহকে সচল রাখে।
শ্বসনতন্ত্র (জবংঢ়রৎধঃড়ৎু ংুংঃবস)
বেঁচে থাকার জন্য সকল প্রাণী অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকে। শ্বসন প্রক্রিয়ায় বাতাসের সঙ্গে আমাদের ফুসফুসে অক্সিজেন প্রবেশ করে এবং তা রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে দেহের সব অঙ্গের সব কোষে পৌছায়। শ্বসনতন্ত্রের মাধ্যমে গ্রহণ করা এই অক্সিজেনের সাহায্যে মানুষের দেহকোষে সঞ্চিত খাদ্য জারণ প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপাদন করে, যে শক্তি আমাদের শরীরের দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করে থাকে। মানুষের শ্বসনতন্ত্রকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করে বর্ণনা করা যায়।
বায়ু গ্রহণ ও ত্যাগ অঞ্চল (অরৎ রহঃধশব ধহফ ফরংপযধৎমব ুড়হব)
সম্মুখ নাসারন্ধ্র (ঠবংঃরনঁষব) : নাকের সামনে অবস্থিত পাশাপাশি দুটি ছিদ্রকে সম্মুখ নাসারন্ধ্র বলে। এই নাসারন্ধ্র দুটি সবসময় খোলা থাকে এবং এই পথেই দেহের অভ্যন্তরে বায়ু প্রবেশ করে থাকে।
ভেস্টিবিউল (ঠবংঃরনঁষব) : নাসারন্ধ্রের পরে নাকের ভিতরের অংশটির নাম ভেস্টিবিউল। ভেস্টিবিউল দুইটির প্রাচীরে অনেক লোম থাকে। এই অংশ আর্দ্র ও লোমগুলো ছাঁকনির মতো হওয়ায় গৃহীত বাতাসের ধূলাবালি ও রোগজীবাণুও আটকে যায়।
নাসাগহ্বর (ঘধংধষ পধারঃু) :
ভেস্টিবিউলের পরের গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হচ্ছে নাসাগহ্বর। নাসাগহ্বরের প্রাচীরে সূক্ষ্ণ ছোট ছোট লোমের মতো সিলিয়াযুক্ত, মিউকাস ক্ষরণকারী এবং ঘ্রাণ উদ্দীপক অলফ্যাক্টরী কোষ থাকে? এটি প্রশ্বাসের সাথে আগত বায়ুকে কিছুটা সিক্ত করে দেয়। সিলিয়াযুক্ত ও মিউকাস কোষগুলো ধুলাবালি এবং রোগজীবাণুও আটকে দেয় এবং অলফ্যাক্টরি কোষ ঘ্রাণ অনুভব করার প্রয়োজনীয় উদ্দীপনা মস্তিষ্কে প্রেরণ করে।
নাসাগলবিল (ঘধংড়ঢ়যধৎুহী) : নাসা গহ্বর দুটি পশ্চাৎ নাসারন্ধ্র নামে দুটি ছিদ্রের মাধ্যমে নাসাগলবিলে উন্মুক্ত হয় যেখানে বাতাস বাহিত হযয়ে থাকে। নাসা গলবিলের পরে রযয়েছে মুখ গলবিল (ঙৎড়ঢ়যধৎুহী) যেখানে বাতাস এবং খাদ্য দুটিই বাহিত হয়। ল্যারিঞ্জোফেরিঙ্কস নামে গলবিলের শেষ অংশে খাদ্যনালি ও শ্বাসনালিতে প্রবেশ করার জন্য খাদ্য এবং বাতাস বিভক্ত হয়ে যায়।
স্বরযন্ত্র (খধৎুহী) : এটি গলবিলের একেবারে নিচের অংশের ঠিক সামনের দিকের অংশ। স্বরযন্ত্র কয়েকটি তরুণাস্থি টুকরা দিয়ে গঠিত। এগুলোর মধ্যে থাইরয়েড তরুণাস্থি সবচেয়ে বড় এবং এটি পুরুষের গলার সামনে উঁচু হযয়ে থাকে, হাত দিলে এর অবস্থান বোঝা যায় এবং বাইরে থেকেও দেখা যায়, যেটি অফধস'ং অঢ়ঢ়ষব নামে পরিচিত। স্বরযন্ত্রে অনেক পেশি যুক্ত থাকে। এর অভ্যন্তর ভাগে থাকে মিউকাস আবরণী ও স্বররজ্জু ? টানটান অবস্থায় বাতাসের সাহায্যে স্বররজ্জু কম্পিত হয়ে শব্দ সৃষ্টি করে।
স্বরযন্ত্রের উপরে থাকে এপিগ্নটিস নামে ঢাকনার আকৃতির একটি ছোটো তরুণাস্থি। এপিগ্নটিস খাদ্য গলাধঃকরণের সময় স্বরযন্ত্রের মুখটি বন্ধ করে দেয় যেন খাদ্য স্বরযন্ত্রে প্রবেশ করতে না পারে, যখন এর বিচু্যতি ঘটে আমরা তখন বিষম খাই। অন্যসময় এটি শ্বসনের জন্য উন্মুক্ত থাকে?
বায়ু পরিবহণ অঞ্চল (অরৎ :ৎধহংঢ়ড়ৎঃ ুড়হব)
শ্বাসনালি (ডরহফঢ়রঢ়ব/ঞৎধপযবধ) : স্বরযন্ত্রের পর প্রায় ১২ সেমি, দীর্ঘ ও ২ সেমি, ব্যাসবিশিষ্ট ফাঁপা নলাকার অংশকে শ্বাসনালি বা ট্রাকিয়া বলে। ট্রাকিয়া চুপসে যায় না বলে সহজে এর মধ্য দিয়ে বায়ু চলাচল করতে পারে। এর আন্তঃপ্রাচীরের অতি ক্ষুদ্র সূক্ষ্ণ লোমের মতো সিলিয়া অবাঞ্ছিত বস্তুকে প্রবেশ করতে বাঁধা দেয়।
ব্রঙ্কাস (ইৎড়হপযঁং) : বক্ষগহ্বরে ট্রাকিয়ার শেষ প্রান্ত দুটি (ডান ও বাম) শাখায় বিভক্ত হয়, এদের নাম ব্রঙ্কাস (বহুবচন ব্রঙ্কাই, নৎড়হপযর)। ডান ব্রঙ্কাসটি অপেক্ষাকৃত ছোট কিন্তু প্রশস্ত এবং তিন ভাগে ভাগ হয় ডান ফুসফুসের তিনটি খন্ডে প্রবেশ করে। বাম ব্রঙ্কাসটি দুভাগে ভাগ হয়ে বাম ফুসফুসের দুটি খন্ডে প্রবেশ করে। ফুসফুসের অভ্যন্তরে প্রতিটি ব্রঙ্কাস পুনঃপুন বিভক্ত হয়ে অসংখ্য ক্ষুদ্রাকার ব্রঙ্কিওল নামে অসংখ্য সূক্ষ্ণ নালি গঠন করে।
ফুসফুস (খঁহমং) : ফুসফুস সংখ্যায় দুটি এবং এগুলো হালকা গোলাপি রঙের স্পঞ্জের মতো নরম অঙ্গ। বাম ফুসফুসটি আকারে ছোটো, এটি দুই লোববিশিষ্ট এবং ডান ফুসফুস আকারে বড়, এটি তিন লোববিশিষ্ট। নিঃশ্বাস- প্রশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসের লোব দুটি সংকুচিত এবং প্রসারিত হয়। এর ভিতরের অংশ পিচ্ছিল।
বিভাজিত ব্রঙ্কিওল নালিগুলো ফুসফুসের কার্যকরী একক ক্ষুদ্রকায় লোবিওল এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। লোবিওলগুলোর আকৃতি একগুচ্ছ অতিক্ষুদ্র বেলুনের মতো যেখানে প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা অক্সিজেন এবং শরীরে সৃষ্ট হওয়া কার্বন ডাইঅক্সাইডের বিনিময় ঘটে থাকে? অক্সিজেন রক্তে প্রবেশ করে এবং বর্জ্য হিসেবে কার্বন ডাইঅক্সাইড রক্ত থেকে বের হয়ে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীর থেকে নির্গত হয়ে যায়।