দ্বাদশ অধ্যায়
বিদু্যতের চুম্বক ক্রিয়া
আগের পরিচ্ছেদগুলোতে চুম্বক নিয়ে অনেক কিছু বলা হয়েছে কিন্তু এখনো একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি। সেটি হচ্ছে কেন বিশেষ কোনো কোনো পদার্থের চৌম্বক ধর্ম আছে অর্থাৎ সেগুলো চুম্বক দিয়ে আকর্ষিত হয় এবং তাদেরকে দিয়ে চুম্বক তৈরি করা যায়, যেমনু লোহা, কোবাল্ট বা নিকেল। আবার কেন কোনো কোনো পদার্থের চুম্বক ধর্ম নেই, যেমন-কাগজ, কাঠ বা পস্নাস্টিক।
বিদু্যৎ প্রবাহের সঙ্গে চুম্বকের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
বিদু্যৎ প্রবাহ আর চৌম্বকত্ব বুঝি পুরোপুরি আলাদা দুটি বিষয় নয়। বিদু্যৎ প্রবাহ আলাদা বিষয় মনে হতেই পারে। কিন্তু জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল নামে একজন বিজ্ঞানী ১৮৬৫ সালে দেখেছিলেন দুটি আসলে একই বিষয় এবং সেই থেকে বিদু্যৎ আর চুম্বক আর আলাদা বিষয় নয়।
সেটা নাম হয়েছে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিজম বা বিদু্যৎ চৌম্বকত্ব। কারণটি খুব সহজ, বিদু্যৎ প্রবাহ হলে সেটি তার পাশে একটি চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে। একটি স্থির চার্জ যেভাবে তার চারপাশে বিদু্যৎক্ষেত্র তৈরি করে বিদু্যৎ প্রবাহও ঠিক সেভাবে তার চারপাশে চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, অর্থাৎ চৌম্বকত্ব বলে আলাদা কিছু নেই, বিদু্যৎ প্রবাহের জন্য চৌম্বকত্ব তৈরি হয়। আর বিদু্যৎ প্রবাহ হচ্ছে চার্জের প্রবাহ। বিদু্যৎ প্রবাহের সময় সেখানে ইলেকট্রনের প্রবাহ হয়।
তোমাদের মনে এখন প্রশ্ন জাগতে পারে যদি বিদু্যৎ প্রবাহের কারণেই চৌম্বকত্ব তৈরি হয় তাহলে স্থায়ী চুম্বক দন্ডের ভেতর চৌম্বকত্ব কোথা থেকে আসে? তার ভেতরে তো কোনো বিদু্যৎ প্রবাহ হচ্ছে না! তোমরা জেনে নিশ্চয়ই অবাক হবে যে, পরমাণুর গঠনের সময় তোমরা যখন পড়েছ, পরমাণুর কেন্দ্র নিউক্লিয়াসকে ঘিরে ইলেকট্রন ঘুরতে থাকে সেই ঘূর্ণন হচ্ছে এক ধরনের চার্জের প্রবাহ বা বিদু্যৎ প্রবাহ-সেখান থেকেই চৌম্বক ক্ষেত্র তেরি হয়।
শুধু তাই নয় পরমাণুর প্রত্যেকটা ইলেকট্রনকেও একটা অতি ক্ষুদ্র চুম্বক হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। কাজেই সহজ করে বলা যেতে পারে প্রত্যেকটা পরমাণুর জন্য তার ইলেকট্রনগুলো চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ সবগুলো পরমাণু একটি করে অতি ক্ষুদ্র চুম্বক। সেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চুম্বকগুলো মিলে যখন একটা শক্তিশালী চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে আমরা সেটাকে বলি স্থায়ী চুম্বক।
ত্রয়োদশ অধ্যায়
এক বা একাধিক টিসু্য দিয়ে তৈরি এবং নির্দিষ্ট কাজ করতে সক্ষম প্রাণিদেহের অংশবিশেষকে অঙ্গ বলে। দেহের অঙ্গসমূহ নিয়ে জীববিজ্ঞানের যে শাখায় আলোচনা করা হয়, তাকে অঙ্গসংস্থানবিদ্যা বলে। অবস্থানভেদে মানবদেহে দু'ধরনের অঙ্গ আছে। চোখ, কান, নাক, হাত, পা, মাথা, এগুলো হচ্ছে বাহ্যিক অঙ্গ।
পাকস্থলী, ডিওডেনাম, ইলিয়াম, মলাশয়, হৃৎপিন্ড, অগ্ন্যাশয়, পস্নীহা, ফুসফুস, বৃক্ক, শুক্রাশয়, ডিম্বাশয়এগুলো হচ্ছে মানবদেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ। শরীরের বাইরের অঙ্গগুলো নিয়ে জীববিজ্ঞানের যে শাখায় আলোচনা করা হয়, তাকে বহিঃ অঙ্গসংস্থান আর ভিতরের অঙ্গগুলো নিয়ে যে শাখায় আলোচনা করা হয় তাকে অন্তঃঅঙ্গসংস্থান বলে।
তোমরা জানো পরিপাক, শ্বসন, রেচন, প্রজনন ইত্যাদি শারীরবৃত্তীয় কাজ করার জন্য প্রাণিদেহে কতগুলো অঙ্গের সমন্বয়ে বিভিন্ন তন্ত্র গঠিত হয়।
ত্বকতন্ত্র (ওহঃবমঁসবহঃধৎু ংুংঃবস)
আমাদের শরীরের একেবারে বাইরের আবরণটি হচ্ছে ত্বক। এই ত্বক আমাদের শরীরকে রোদ-তাপ, জীবাণুর আক্রমণ কিংবা আঘাত ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে। এটি শরীরের ভেতরকার জলীয় বাষ্পকে শরীরের ভেতরে সংরক্ষণ করে এবং আমাদের শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ত্বক আমাদের স্পর্শের অনুভূতি দেয় এবং আমরা উষ্ণ কিংবা শীতল তাপমাত্রার অনুভূতিও এই ত্বকের মাধ্যমে পেয়ে থাকি।
আমাদের শরীরের বাইরের আবরণ রয়েছে ত্বক, নখ, চুল, গ্রন্থি, ত্বকের ভেতরকার স্নায়ু এবং রক্তনালি এবং এসব মিলিয়ে গঠিত হয়েছে আমাদের ত্বকতন্ত্র। মানবদেহের সবচেয়ে বড় তন্ত্র হচ্ছে এই ত্বকতন্ত্র এবং নিচে এই তন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গাণুর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো।
ত্বক (ংশরহ)
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহ-ত্বকের ওজন প্রায় তিন কেজির কাছাকাছি। এটি প্রায় ২ মিলিমিটার পুরু; প্রয়োজনে কোথাও কম পুরু (যেমন চোখের পাতা) এবং কোথাও বেশ পুরু (যেমন- পায়ের তলা)।
মানুষের ত্বক বা চামড়া তিন স্তরে বিভক্ত :
ক) এপিডার্মিস : এটি একেবারে উপরের স্তর ত্বকের এই স্তরটিকে আমরা দেখতে পাই এবং স্পর্শ করতে পারি। এটি আমাদের গায়ের রং নির্ধারণ করে এবং শরীরের পানি প্রতিরোধক একটি আবরণ হিসেবে কাজ করে।
খ) ডার্মিস : এটি এপিডার্মিসের পরবর্তী স্তর। এই স্তরটি সবচেয়ে পুরু এবং এর মাঝে লোমের গোড়া, ঘাম ও তেলগ্রন্থি অবস্থিত।
গ) হাইপোডার্মিস : এটি হচ্ছে ত্বকের সবচেয়ে নিচের স্তর। এটি মূলত চর্বি দিয়ে গঠিত এবং এই স্তর আমাদের তাপমাত্রার তারতম্য থেকে রক্ষা করে।
নখ
আমাদের হাত ও পায়ের আঙুলকে সুরক্ষা দেয়।
নখ পাঁচ ভাগে বিভক্ত :
ক) নেল পেস্নট : নখের শক্ত অংশটুকু যেটা আমরা দেখতে পাই তাকে নেল পেস্নট বলে।
খ) নেল বেড : নখের নিচে চামড়ার আবরণটি হচ্ছে নেল বেড।
গ) কিউটিকল : নখের গোড়ার পাতলা চামড়াটিকে কিউটিকল বলা হয়।
ঘ) ম্যাট্রিক্স : নখের গোড়া যেটি নখের বৃদ্ধি ঘটায় সেটি হচ্ছে ম্যাট্রিক্স।
ঙ) লুনুলা : নখের সাদা অগ্রভাগকে লুনুলা বলা হয়।
চুল
আমাদের মাথার তাপমাত্রা সংরক্ষণে সহায়তা করে। চোখের ভুরু এবং পাতা চোখকে ধুলাবালি থেকে রক্ষা করে। চুল কেরাটিন নামক প্রোটিন দিয়ে তৈরি।
এটি তিন ভাগে বিভক্ত :
ক) হেয়ার শ্যাফট : চুলের এই অংশটুকু আমরা দেখতে পাই।
খ) হেয়ার ফলিকন : এটি হচ্ছে ত্বকে ক্ষুদ্র টিউবের মতো একটি গঠন, যেখানে চুলটি থাকে। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়