একাদশ অধ্যায়
মকরক্রান্তি রেখা (ঞৎড়ঢ়রপ ড়ভ ঈধঢ়ৎরপড়ৎহ)
এটি হচ্ছে বিষুব রেখার সাপেক্ষে ২৩.৫ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ রেখা প্রতি বছর ২২শে ডিসেম্বর সূর্যের আলো এই রেখার অন্তর্গত স্থানে দুপুর ১২.০০টায় লম্বভাবে পড়ে। এই তারিখে দক্ষিণ গোলার্ধে দিনের দৈঘ্য বা স্থায়িত্ব সবচেয়ে বেশি হয় এবং উত্তর গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য সবচেযয়ে কম হয়।
মেরু রেখা (চড়ষধৎ ঈরৎপষব)
উত্তর এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ৬৬.৫ ডিগ্রি দুটি অক্ষাংশকে যথাক্রমে উত্তর মেরুরেখা (অৎপঃরপ ঈরৎপষব) এবং দক্ষিণ মেরুরেখা (অহঃধৎপঃরপ ঈরৎপষব) বলে। কর্কটক্রান্তির উত্তরে এবং মকরক্রান্তির দক্ষিণে সূর্যের আলো কখনোই লম্বভাবে পড়ে না। এখানে গ্রীষ্মকালে অতিদীর্ঘ দিন এবং শীতকালে অতিদীর্ঘ রাত হয়।
সত্যি কথা বলতে কী, দিন দীর্ঘ হতে হতে প্রতি বছর ২১ জুন উত্তর মেরুরেখা ঘেরা উত্তরের এলাকায় ২৪ ঘণ্টাই সূর্যের আলো থাকে, অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা দিন থাকে। একইভাবে ২২শে ডিসেম্বর উক্ত স্থানে ২৪ ঘণ্টা রাত থাকে। অনুরূপভাবে দক্ষিণ মেরুরেখা এলাকায় ঠিক এর বিপরীত ঘটনা ঘটে।
অক্ষাংশের তাৎপর্য ও ব্যবহার
বিষুব রেখা বা তার কাছাকাছি অঞ্চলে সূর্যের আলো প্রায় লম্বভাবে পরে। ফলে তা তুলনামূলকভাবে কম দূরত্ব অতিক্রম করে এবং আলো কম ছড়ানোর ফলে ভূপৃষ্ঠ বেশি উত্তপ্ত হয়। অপরদিকে মেরু এলাকার কাছাকাছি সূর্যের আলো তির্যকভাবে পড়ে। ফলে তা বায়ুমন্ডলের মাঝে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে এবং ভূপৃষ্ঠে বেশি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার কারণে সূর্যরশ্মিও তীব্রতা বা তেজ কমে যায়। ফলে সেই সকল অঞ্চল শীতল হয়ে থাকে।
কোনো স্থানের ভৌগোলিক অবস্থান নির্ণযয়ের জন্য এবং আবহাওয়া ও জলবায়ু জানা কিংবা বোঝার জন্য সেই স্থানের অক্ষাংশ জানা জরুরি। আমরা জানি যে পৃথিবীর ঘুর্ণন অক্ষ তার কক্ষপথের সঙ্গে খাড়াভাবে (৯০ ডিগ্রি তে) না থেকে ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে হেলানো অবস্থা য়থাকে এবং এই অবস্থায় পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অক্ষাংশে সূর্য থেকে আসা তাপ ও আলোকশক্তি (ওহংড়ষধঃরড়হ) ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণে পাওয়া যায়। সূর্যের এই বিকিরণের তীব্রতা বিভিন্ন স্থানে ও বছরের সময়ে ভিন্ন হয় এবং এ কারণেই আমরা বিভিন্ন ঋতু উপভোগ করি।
যেহেতু কোনো স্থানের অক্ষাংশের উপর সেখানে সূর্যালোক কতটা আসবে তার পরিমাণ নির্ভর করে সেহেতু সেসব স্থানের তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণও এই অক্ষাংশের উপর নির্ভর করে। শুধু তাই নয় বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্র স্রোতের পরিবর্তনও অক্ষাংশ দিয়ে প্রভাবিত হয়। এমনকি কোনো জায়গার ভূমি কেমন হবে বা এর জীবজগতের বৈশিষ্ট্য কেমন হবে তার উপরেও অক্ষাংশের প্রভাব রয়েছে।
অক্ষাংশের ভিত্তিতে বিভক্ত বিভিন্ন অঞ্চলসমূহ
অক্ষাংশের ভিত্তিতে সমগ্র পৃথিবীকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করা হযয়েছে। এই সকল অঞ্চলে জলবায়ু, গাছপালা, পশুপাখি এমনকি ভূমিরূপও বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হযয়ে থাকে যা অন্য অঞ্চল থেকে আলাদা। গুরুত্বপূর্ণ অক্ষ রেখার ভিত্তিতে ভাগ করা অঞ্চলগুলো হচ্ছে বিষুবীয় অঞ্চল, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল এবং মেরু অঞ্চল। বিষুবরেখার উত্তর ও দক্ষিণের কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখার মাঝখানের অঞ্চলটি হচ্ছে বিষুবীয় অঞ্চল।
কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে উত্তর মেরুরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চল হচ্ছে উত্তর নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল। একইভাবে মকরক্রান্তি রেখা থেকে দক্ষিণ মেরুরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চল হচ্ছে দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল। দুইটি মেরু রেখার উত্তরে এবং দক্ষিণের অঞ্চলকে বলে মেরু অঞ্চল। আমাদের বাংলাদেশের ঠিক মাঝখান দিযয়ে কর্কটক্রান্তি গিযয়েছে তাই এই দেশের দক্ষিণাঞ্চল হচ্ছে বিষুবীয় অঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চল হচ্ছে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল।
প্রশ্ন : তুমি কি কখনো কর্কটক্রান্তি অতিক্রম করেছ? কর্কটক্রান্তির উপরে থাকলে ২১ জুন দুপুর ১২ টায় তোমার কোনো ছায়া পড়বে না, কথাটির অর্থ কী?
উত্তর: বাংলাদেশের উপর দিয়ে যে ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমারেখা অতিক্রম করেছে তাকে কর্কটক্রান্তি রেখা বলে। এ রেখাটি চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ি, ফরিদপুর ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কুমিলস্না, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির ভেতর দিয়ে অতিক্রম করেছে। এক্ষেত্রে আমি বিভিন্ন প্রয়োজনে এইসব অঞ্চল দিয়ে যাতায়াত করেছি। সে ক্ষেত্রে বলতে পারি আমি কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছ।
কর্কটক্রান্তি রেখা (ঞৎড়ঢ়রপ ড়ভ ঈধহপবৎ) হচ্ছে বিষুবরেখার সাপেক্ষে ২৩.৫ক্ক উত্তর অক্ষাংশ রেখা। বাংলাদেশের উপর দিয়ে এই রেখা অতিক্রম করেছে। প্রতি বছর ২১ জুন দুপুর ১২.০০ টায় এই রেখার অন্তর্গত সকল স্থানে সূর্যের আলো লম্বভাবে পড়ে। সূর্র্যের আলো লম্বভাবে পড়লে কোন কিছুর ছায়া পড়ে না। এই কারণে কর্কটক্রান্তির উপরে থাকলে ২১ জুন দুপুর ১২টায় আমার কোনো ছায়া পড়বে না।