একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র
প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আতাউর রহমান সায়েম, সহকারী শিক্ষক, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
আঠারো বছর বয়স
প্রশ্ন : আমরা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে কোন যুগের বিদ্রোহী কবি বলতে পারি?
উত্তর : আমরা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে রবীন্দ্র-নজরুলোত্তর যুগের বিদ্রোহী কবি বলতে পারি।
প্রশ্ন : কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের অকালমৃতু্য হয় কত বছর বয়সে?
উত্তর : কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের অকালমৃতু্য হয় ২১ বছর বয়সে।
প্রশ্ন : আঠারো বছর বয়স কী কারণে কালো?
উত্তর : সচেতন ও সচেষ্ট হয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে জীবন পরিচালনা করতে না পারার হাজারো ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাসে আঠারো বছর বয়স যেন এক কালো অধ্যায় রচনা করে।
প্রশ্ন : কবির মতে আঠারো বছর বয়স বেদনায় কেমন করে কাঁপে?
উত্তর : কবির মতে আঠারো বছর বয়স বেদনায় থরথর করে কাঁপে।
প্রশ্ন : 'আঠারো বছর বয়স' কবিতায় কবি সবকিছুর পরও কীসের জয়ধ্বনি শুনতে পান?
উত্তর : 'আঠারো বছর বয়স' কবিতায় কবি সবকিছুর পরও আঠারোর জয়ধ্বনি শুনতে পান।
প্রশ্ন : কোন সময় বা বয়স বিপদের মুখে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে?
উত্তর : আঠারো বছর বয়স বিপদের মুখে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
প্রশ্ন : শপথের কোলাহলে কারা আত্মাকে সমর্পণ করে?
উত্তর : যারা আঠারো বছর বয়সি তরুণ, তারাই শপথের কোলাহলে আত্মাকে সমর্পণ করে।
প্রশ্ন : কোন সময় হাল ঠিকমতো রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে?
উত্তর : দুর্যোগের সময় হাল ঠিকমতো রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন : আঠারো বছরের তরুণেরা কীসের মতো চলে?
উত্তর : আঠারো বছরের তরুণেরা বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে।
প্রশ্ন : 'পূর্বাভাস' কী ধরনের রচনা?
উত্তর : 'পূর্বাভাস' একটি কাব্যগ্রন্থ।
প্রশ্ন : আঠারো বছর বয়সে কীসের ঝুলি শূন্য থাকে না?
উত্তর : আঠারো বছর বয়সে প্রাণ দেয়া-নেয়ার ঝুলিটা শূন্য থাকে না।
প্রশ্ন : কোন বয়সে অবিশ্রান্ত আঘাত আসে?
উত্তর : আঠারো বছর বয়সে অবিশ্রান্ত আঘাত আসে।
প্রশ্ন : আঠারো বছর বয়স কী জানে না?
উত্তর : আঠারো বছর বয়স কাঁদতে জানে না।
অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন : কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে সুকান্ত ভট্টাচার্য কেন আঠারো বছর বয়সকে নির্ধারণ করেছেন?
উত্তর : কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আঠারো বছর বয়সকে তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
আঠারো বছর বয়স হচ্ছে কৈশোর থেকে তারুণ্যে পদার্পণের উপযুক্ত সময়। এই বয়সেই মানুষ নিজেকে বুঝতে শেখে, শাণিত করে তোলে নিজের অভিজ্ঞতাকে। এ বিষয়টি যেমন প্রবল উত্তেজনার, আবেগ ও উচ্ছ্বাসে ভরপুর, তেমনি এ সময়টি দুঃসাহসিক ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষেত্রেও উপযুক্ত বয়স। তাই এই বয়সের অদম্য সাহসী তরুণ যখন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবে, তখন দ্রম্নতগতিতে দেশের উন্নয়ন ঘটবে। পুরনো ও জরাজীর্ণতাকে ভেঙে ফেলে একটি নতুন সমাজ, একটি নতুন পৃথিবী গড়ে তুলতে তাই আঠারো বছর বয়সি তরুণের বিকল্প নেই। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য উলিস্নখিত বিষয় বিবেচনা করেই আঠারো বছর বয়সকে কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
প্রশ্ন : কোন বয়সকে মানবজাতির উত্তরণকালীন বয়স বলা হয় এবং কেন?
উত্তর : 'আঠারো বছর বয়স' হচ্ছে কৈশোর থেকে যৌবনে রূপান্তরিত হওয়ার সময়। তাই আঠারো বছর বয়সকে মানবজাতির উত্তরণকালীন সময় বলা হয়।
শৈশব ও কৈশোরের ছেলেখেলা ভুলে মানুষ ক্রমান্বয়ে পরিণত হতে থাকে। 'আঠারো বছর বয়স' হচ্ছে মানুষের যৌবনে পদার্পণের সময়। এই সময়ে মানুষের দৈহিক ও মানসিক গঠনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়। মানুষের মনোজাগতিক পৃথিবীতে এক ধরনের নীরব বিপস্নব সাধিত হয়। মানুষ হয়ে ওঠে সাহসী, আবেগী ও প্রবল উত্তেজনাসম্পন্ন। আর এই পুরো পরিবর্তনটির সূত্রপাত হয় আঠারো বছর বয়সে। এ সময়ে মানুষ ক্রমান্বয়ে অভিজ্ঞ ও মেধাসম্পন্ন হয়ে ওঠে। শৈশব কৈশোরের কাঁচা-মন এই বয়সে এসে আবেগ ও সাহসে ভরপুর হয়ে ওঠে। ফলে এই সময়কে মানবজাতির উত্তরণকালীন সময় বলা হয়।
প্রশ্ন : 'বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে'-কারা? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : 'বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো' চলে তরুণেরা।
তরুণেরা হচ্ছে দুর্বার গতির প্রতীক। তারা প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। দুঃসাহসিক প্রত্যয়ে জীবনের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে একমাত্র তারুণ্যের পক্ষেই সম্ভব বিজয় ছিনিয়ে আনা। তাই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তারুণ্যের দুর্বার গতিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে উপমা হিসেবে বাষ্পের বেগ ও স্টিমার শব্দগুলোর সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। তার মতে, তরুণরা যেন স্টিমারের গতিবেগের মতোই বাতাসের বেগে ছুটে চলে। জীবন ও জগতের কল্যাণ ও অকল্যাণকর উভয় ক্ষেত্রেই তরুণেরা তার এই গতিকে কাজে লাগাতে পারে। তবে কবির মতে, তরুণেরা এই গতিশক্তিকে শুধু কল্যাণকর কাজেই প্রয়োগ করবে।
প্রশ্ন : কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের 'আঠারো বছর বয়স' কবিতা অনুযায়ী তারুণ্যের আত্মত্যাগ কেমন হওয়া উচিত?
উত্তর : কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের 'আঠারো বছর বয়স' কবিতা অনুযায়ী তারুণ্যের আত্মত্যাগ হওয়া উচিত কল্যাণকর ও দেশসেবামূলক কাজে।
তারুণ্য এক অসীম এবং দুর্নিবার প্রাণশক্তির প্রতীক। তরুণেরা তার এই প্রাণশক্তিকে যেমন ধ্বংসাত্মক কাজে লাগাতে পারে তেমনি কল্যাণকর কাজেও লাগাতে পারে। দুর্বার গতিসম্পন্ন দুঃসাহসিক তরুণ ইতিবাচক ও নেতিবাচক- দুই ক্ষেত্রেই তার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে। কিন্তু কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের মতে, তরুণেরা কেবল দেশসেবামূলক ও কল্যাণকর কাজের ক্ষেত্রেই আত্মত্যাগ করবে। 'আঠারো বছর বয়স' কবিতায় কবি এই শুভবোধকেই প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি। সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হয়েই তরুণেরা তার সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। তাই তারুণ্যের আত্মত্যাগ হবে কেবল শুভ ও সুন্দর কাজে।
প্রশ্ন : কীভাবে আঠারো বছর বয়স জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে?
উত্তর : ইতিবাচক কর্মকান্ডের মাধ্যমেই 'আঠারো বছর বয়স' জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে।
হাজারো ইতিবাচক গুণের সমষ্টি হয়ে 'আঠারো বছর বয়স' এক বিশাল শক্তির প্রতীক হয়ে মানবজীবনের চলার পথে ভূমিকা রাখে। জড়, নিশ্চল, ব্যর্থ, জীর্ণ, পুরনো ও প্রথাবদ্ধ জীবনকে পায়ে ঠেলে নতুন জীবনের পথে এগিয়ে চলে 'আঠারো বছর বয়স'। নতুন স্বপ্নে উদ্দীপিত হয়ে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হয়ে আঠারো বছর বয়সী তরুণেরা তাদের উদ্দীপনা, সাহসিকতা ও চলার দুর্বার গতিকে যথোপযুক্তভাবে প্রয়োগ করতে পারে। আর এভাবেই সে হয়ে উঠতে পারে জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি। 'আঠারো বছর বয়স'-এর ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোকে কাজে লাগানোর মাধ্যমেই জাতীয় জীবনকে সচল করে তোলা সম্ভব।