শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ

হাবিবুর রহমান বাপ্পা, সহকারী শিক্ষক, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ

একাদশ অধ্যায়

তোমরা কি কখনো লক্ষ করেছ কোনো স্থান সম্পর্কে মানুষ কীভাবে একে অন্যকে জানায়? উদাহরণ দেয়ার জন্য বলা যায় কারো বাড়ি খুঁজে পেতে হলে শুধু এলাকার নাম বললে অনেক সময় বাড়ি খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন কোনো একটা বড়ো গাছ, দোকান, ভবন এরকম বিশেষ কিছুর অবস্থানের সাপেক্ষে বাড়ির অবস্থান বলতে হয়, যেটাকে আপেক্ষিক অবস্থান (জবষধঃরাব খড়পধঃরড়হ) বলা হয়।

এই পদ্ধতি কোনো একটি ছোট স্থানের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু পুরো পৃথিবী পৃষ্ঠের উপর কোনো কিছুর অবস্থান এভাবে জানানো বেশ কঠিন, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব। সেক্ষেত্রে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তা হচ্ছে ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক বা প্রকৃত অবস্থান (অনংড়ষঁঃব খড়পধঃরড়হ)।

ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক (এবড়মৎধঢ়যরপ এৎরফ)

পৃথিবীর কোনো স্থানের ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক বোঝার জন্য দুই ধরনের কাল্পনিক রেখা ব্যবহার করা হয়; সেগুলো হচ্ছে :

১. অক্ষ রেখা

২. দ্রাঘিমা রেখা

রেখাগুলো বোঝার আগে আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে, কাগজে আমরা যেভাবে একটা বৃত্ত এঁকে পৃথিবী বোঝানোর চেষ্টা করি বাস্তবে সেটা এরকম না। পৃথিবী বলের মতো একটা ত্রিমাত্রিক গোলক। কাজেই আমরা যদি একটা বল কিংবা গোলাকার কিছু নিযয়ে এর উপরে আড়াআড়িভাবে ডান থেকে বামে সমান্তরাল কিছু দাগ দিতে থাকি তাহলে দাগগুলো হবে কিছু বৃত্ত, পৃথিবীর বেলায় এটাই হবে অক্ষ রেখা।

এই বৃত্তগুলো গোলকের যতই প্রান্তের দিকে যাবে ততই ছোট হতে থাকবে। সবচেয়ে উপরে এবং সবচেয়ে নিচে সেটি হবে দুটি বিন্দু, পৃথিবীর বেলায় যেটি হবে যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু। এবার যদি লম্বালম্বিভাবে একই ধরনের কাজ করা হয়, অর্থাৎ উপর- নিচ করে দুই মেরু বরাবর দাগ দিতে থাকি তাহলে পৃথিবীর বেলায় সেটি হবে দ্রাঘিমা রেখা।

অর্থাৎ আড়াআড়ি রেখাগুলোকে বলা হচ্ছে অক্ষ রেখা যা পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম বরাবর গেছে। আর লম্বালম্বিগুলো হলো দ্রাঘিমা রেখা যেগুলো উত্তর দক্ষিণ বরাবর গিয়েছে।

পৃথিবীর স্থানাঙ্ক বোঝানোর জন্য অক্ষ রেখা এবং দ্রাঘিমা রেখার পাশাপাশি তোমরা অক্ষাংশ (খধঃরঃঁফব) আর দ্রাঘিমাংশের (খড়হমরঃঁফব) কথাও শুনে থাকবে, এই দুটির মাঝে পার্থক্য কী? প্রথমেই জেনে রাখো অক্ষ রেখা আর দ্রাঘিমা রেখা হচ্ছে রেখা, অক্ষাংশ আর দ্রাঘিমাংশ হচ্ছে কোণ।

একটা নির্দিষ্ট কোণের জন্য একটি নির্দিষ্ট অক্ষ রেখা আঁকা হয় তাই একটি অক্ষ রেখার প্রতিটি বিন্দুতে অক্ষাংশের মান সমান। একইভাবে, একটা নির্দিষ্ট কোণের জন্য একটি নির্দিষ্ট দ্রাঘিমা রেখা আঁকা হয় তাই একটি দ্রাঘিমা রেখার প্রতিটি বিন্দুতে দ্রাঘিমাংশের মান সমান। পৃথিবী পৃষ্ঠের যে কোনো স্থানের একটি অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ রযয়েছে এবং এই দুটি স্থানাঙ্ক জানলেই স্থানটি কোথায় সেটি সুনির্দিষ্টভাবে জানা যাবে।

কোনো স্থানের অক্ষাংশ বা দ্রাঘিমাংশের পরিমাপটি হচ্ছে দুটি সুনির্দিষ্ট প্রসঙ্গ রেখা থেকে তাদের কৌশিক দূরত্ব-কৌণিক দূরত্ব বলতে দুটি রেখা বা তলের অন্তর্গত কোণকে বোঝায়। যেহেতু এসব ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক গুলো কোণ দ্বারা পরিমাপ করা হয় তাই তার একক হচ্ছে ডিগ্রি। এখানে ৯০ ডিগ্রিতে এক সমকোণ, ৬০ মিনিটে ১ ডিগ্রি এবং ৬০ সেকেন্ডে ১ মিনিট। তবে এই সেকেন্ড আর মিনিটের সঙ্গে সময় পরিমাপের মিনিট এবং সেকেন্ডের কোনো সম্পর্ক নেই।

অক্ষাংশ (খধঃরঃঁফব)

পৃথিবীর কোনো স্থান বিষুবরেখা থেকে কতটা উত্তরে বা দক্ষিণে অবস্থিত তা অক্ষাংশ দ্বারা বোঝা যায় ু এই তথ্যটি বোঝার জন্য বিষুব রেখা কী তা ভালো করে জানা প্রয়োজন। উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু থেকে সমান দূরত্বে যে রেখা পৃথিবীকে ঠিক মাঝ বরাবর ঘিরে রযয়েছে বলে কল্পনা করা হয় তাকে বিষুব রেখা বা সমাক্ষরেখা বলা হয়। বিষুব রেখা পূর্ব-পশ্চিম বরাবর পৃথিবীকে ঘিরে রযয়েছে। অক্ষাংশ নির্ধারণের জন্য বিষুব রেখাকে প্রসঙ্গ রেখা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

বিষুব রেখা থেকেই যেহেতু অক্ষাংশের কোণ মাপা হয় তাই তার নিজের অক্ষাংশ হচ্ছে শূন্য ডিগ্রি। অক্ষাংশ উত্তর ও দক্ষিণে সর্বোচ্চ ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। (লেখা হয় যথাক্রমে ৯০ ডিগ্রি উত্তর বা উত্তর মেরু এবং ৯০ ডিগ্রি দক্ষিণ বা দক্ষিণ মেরু) তোমরা এর মাঝে জেনে গেছ যে প্রতিটি অক্ষাংশের অক্ষ রেখাগুলো একে অপরের সঙ্গে সমান্তরাল, সেগুলো পূর্ণবৃত্ত এবং এই বৃত্তগুলো যতই বিষুব রেখা থেকে মেরুর দিকে আসে তারা ছোট হতে হতে একেকটা বিন্দুতে পরিণত হয়। ফলে উত্তর এবং দক্ষিণ মেরু মূলত দুটি বিন্দু দ্বারা দেখানো হয়।

অক্ষাংশ কোণ দ্বারা প্রকাশ করা হয়, তাই স্বাভাবিকভাবেই আমরা প্রশ্ন করতে পারে কোন দুটি রেখা এই কোণ উৎপন্ন করে এবং সেই কোণটি কোথায় উৎপন্ন হয়। আমরা যে স্থানের অক্ষাংশ বের করতে চাই সেই স্থান থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র বরাবর একটি রেখা (ছবি) কল্পনা করে নাও এবং কেন্দ্র থেকে বিষুব রেখা বরাবর আরেকটি রেখা কল্পনা করে নাও।

দুটি রেখাই উত্তর দক্ষিণে একই তলে থাকতে হবে। (আমরা একটু পরেই দেখব, উত্তর দক্ষিণে একই তলে থাকার অর্থ একই দ্রাঘিমা রেখায় থাকা) এই দুটি রেখা যে কোণ তৈরি করে সেটাই হচ্ছে অক্ষাংশ।

বিষুব রেখা (ঊয়ঁধঃড়ৎ)

এটি হচ্ছে ০ ডিগ্রি অক্ষাংশ বিষুব রেখা পূর্ব-পশ্চিম বরাবর এবং এই রেখাটি পৃথিবীকে দুটি গোলার্ধে বিভক্ত করে যেগুলোকে যথাক্রমে উত্তর এবং দক্ষিণ গোলার্ধ বলে। এখানে লক্ষণীয় যে ২১ শে মার্চ এবং ২৩ শে সেপ্টেম্বর দুপুর ১২.০০ টায় সূর্যের আলো এই রেখা বরাবর সকল স্থানে লম্বভাবে পড়ে। এই দুই দিন পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য সমান হয়।

কর্কটক্রান্তি রেখা (ঞৎড়ঢ়রপ ড়ভ ঈধহপবৎ)

এটি হচ্ছে বিষুবরেখার সাপেক্ষে ২৩.৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ রেখা। বাংলাদেশের উপর দিযয়ে এই রেখা অভিক্রম করেছে। প্রতি বছর ২১ জুন দুপুর ১২.০০ টায় এই রেখার অন্তর্গত সকল স্থানে সূর্যের আলো লম্বভাবে পড়ে। এই তারিখে উত্তর গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য বা স্থায়িত্ব সবচেয়ে বেশি হয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম হয়।

পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে