একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র
প্রকাশ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আতাউর রহমান সায়েম, সহকারী শিক্ষক, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
ফেব্রম্নয়ারি ১৯৬৯
প্রশ্ন: রাজপথে শূন্যে ফ্ল্যাগ তোলে কে?
উত্তর : রাজপথে শূন্যে ফ্ল্যাগ তোলে সালাম।
প্রশ্ন :মরা, আধমরা, ভীষণ জেদিরা কী করে?
উত্তর : মরা, আধমরা, ভীষণ জেদীরা ফেটে পড়ে?
প্রশ্ন :আমাদের চেতনার রং কী?
উত্তর : একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনার রং।
প্রশ্ন :ঘাতকের আস্তানায় ভূলুণ্ঠিত কারা?
উত্তর : কবি ও কবির মতোই বহুলোক ঘাতকের আস্তানায় ভূলুণ্ঠিত।
প্রশ্ন :কৃষ্ণচূড়া থরে থরে কোথায় ফুটেছে?
উত্তর : কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে ফুটেছে।
প্রশ্ন:পথঘাট, সারাদেশ ছাড়াও সে রং আর কোথায় ছেয়ে গেছে?
উত্তর : পথ-ঘাট, সারা, দেশ ছাড়াও সে রঙে ঘাতকের অশুভ আস্তানাও ছেয়ে গেছে।
প্রশ্ন :চতুর্দিকে কী হচ্ছে?
উত্তর : চতুর্দিকে মানবিক বাগান আর কমলবন তছনছ হচ্ছে।
প্রশ্ন :গাঢ় উচ্চারণে কথা বলে কে?
উত্তর : গাঢ় উচ্চারণে কথা বলে বরকত।
প্রশ্ন : কোন ফুল শহরে নিবিড় হয়ে ফুটেছে?
উত্তর : কৃষ্ণচূড়া ফুল শহরে নিবিড় হয়ে ফুটেছে।
প্রশ্ন : কোন ফুল স্মৃতিগঞ্জে ভরপুর?
উত্তর : কৃষ্ণচূড়া ফুল স্মৃতিগঞ্জে ভরপুর।
প্রশ্ন :আমাদের চেতনার রং কীসের রঙের মতো?
উত্তর : আমাদের চেতনার রং কৃষ্ণচূড়ার রঙের মতো।
প্রশ্ন:পথঘাট কোন রঙে ছেয়ে গেছে?
উত্তর : যে রং সন্ত্রাস আনে, সে রঙে পথঘাট ছেয়ে গেছে।
প্রশ্ন:কার অশ্রম্নজলে ফুল ফোটে?
উত্তর : মায়ের অশ্রম্নজলে ফুল ফোটে।
প্রশ্ন :'হরিৎ উপত্যকা' অর্থ কী?
উত্তর : 'হরিৎ উপত্যকা' অর্থ সবুজ উপত্যকা।
প্রশ্ন কোথায় দিনরাত ভূলুণ্ঠিত?
উত্তর : ঘাতকের আস্তানায় দিনরাত ভূলণ্ঠিত।
অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন : লোকজন বিপস্নবে ফেটে পড়েছে কেন?
উত্তর : পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে লোকজন বিপস্নবে ফেটে পড়েছে।
পাকিস্তানি শাসকরা অন্যায়ভাবে শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বাঙালিদের বঞ্চিত করেছে। এছাড়াও নির্বিচারে হত্যা ও অত্যাচার করতে থাকে পাকিস্তানিরা। তাই প্রতিবাদ ছাড়া বাঙালির বিকল্প আর কোনো পথ খোলা ছিল না। নিজেদের অধিকার আদায় করার জন্যই বাঙালি বিপস্নবে ফেটে পড়েছিল।
প্রশ্ন :এখনো বীরের রক্তে দুখিনী মাতার অশ্রম্নজলে ফোটে ফুল বাস্তবের বিশাল চত্বরে হৃদয়ের হরিৎ উপত্যকায়-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বাঙালির বেঁচে থাকার ও দাবি-দাওয়ার স্বাভাবিক পরিবেশের অভাবের কথাই ব্যক্ত করা হয়েছে এখানে।
পাকিস্তানিরা বাঙালিদের সর্বদা অত্যাচার, শোষণ, নির্যাতন করেছে। তাদের কাছ থেকে যে-কোনো দাবি-দাওয়া আদায় করতে গিয়ে নির্বিচারে মরতে হয়েছে বাঙালিদের। ভাষার দাবিতে যেমন প্রাণ দিতে হয়েছে ১৯৫২ সালে বাঙালিদেরকে, ১৯৬৯ সালেও ছয় দফা দাবি আদায় করতে গিয়ে ঠিক তেমনই হয়েছে। এখনো বীরের রক্তে দুখিনী মাতার অশ্রম্নজলে ফোটে ফুল বাস্তবতার বিশাল চত্বরে হৃদয়ের হরিৎ উপত্যকায় কথাটি দ্বারা পাকিস্তানিদের শাসনামলে বাঙালির বৈরী সময়ের কথাই বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন :'আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে কেমন নিবিড় হয়ে।' কোন বিষয়টিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে?
উত্তর : 'আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে নিবিড় হয়ে কথাটি দ্বারা ভাষা আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
১৯৫২ সালের ফাগুন মাসে মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল এদেশে। ভাষা আন্দোলনের জন্য অনেক তাজা প্রাণ ঝরে গিয়েছিল। ফাগুন মাসে প্রস্ফুটিত কৃষ্ণচূড়া ফুল যেন শহীদদের সেই রক্ত ধারণ করে লাল হয়েছে। তাই পথের পাশে থরে থরে লাল কৃষ্ণচূড়া দ্বারা বায়ান্নর ভাষা শহীদদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
প্রশ্ন:কৃষ্ণচূড়াকে স্মৃতিগন্ধে ভরপুর বলা হয়েছে কেন?
উত্তর : কৃষ্ণচূড়াকে স্মৃতিগন্ধে ভরপুর বলা হয়েছে, কারণ কৃষ্ণচূড়া ভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদদের রক্তদানের স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়।
শহরের পথে থরে থরে কৃষ্ণচূড়া ফুটে থাকে। কিন্তু এই কৃষ্ণচূড়া কবির কাছে অন্য ফুলের মতো সাধারণ কোনো ফুল নয়। কৃষ্ণচূড়ার গাঢ় লাল রং যেন ভাষা আন্দোলনের জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের রক্তে রঞ্জিত। তাই কৃষ্ণচূড়াকে স্মৃতিগন্ধে ভরপুর বলা হয়েছে।
প্রশ্ন :'সারাদেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা'-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : 'সারাদেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা'-বলতে ভাষা আন্দোলনের চেতনাবিরোধীদের অপতৎপরতার কথা বোঝানো হয়েছে।
ভাষা আন্দোলনের চেতনা বাঙালিকে সংগ্রামী ও প্রতিবাদী হতে শেখায়। ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও সন্ত্রাসমুক্ত একটি দেশ গঠনের প্রত্যয়েও উজ্জীবিত করে তোলে। কিন্তু কবি লক্ষ করেছেন, কিছু মানুষের অশুভ তৎপরতায় ভাষা আন্দোলনের সেই অনন্য চেতনা ফিকে হয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসের অনাকাঙ্ক্ষিত রঙে ছেয়ে গেছে সমগ্র দেশ। ফলে সারাদেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানায় পরিণত হয়েছে।
প্রশ্ন :'চতুর্দিকে মানবিক বাগান, কমলবন হচ্ছে তছনছ' -ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : চতুর্দিকে মানবিক বাগান, কমলবন হচ্ছে তছনছ'-বলতে ঘাতকের অশুভ তৎপরতায় মানবিকতা ও সৌন্দর্যের বিনাশকে বোঝানো হয়েছে।
ভাষা আন্দোলনের চেতনাবিরোধী ঘাতক দল সারাদেশে অন্ধকারের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। এদের দৌরাত্ম্য দেশের মানুষ কেউ মরা কেউ বা আধমরা অবস্থায় আছে। ফলে মানবিকতারও মৃতু্য ঘটে যাচ্ছে। মানুষের সুন্দর ও মহৎ চিন্তা-চেতনার বিকাশ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই বিষয়টিকেই কবি মানবিক বাগান ও কমলবন তছনছ হওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
প্রশ্ন :'সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ'-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : 'সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ'-এখানে 'সেই ফুল' বলতে মুক্তি ও স্বাধিকার চেতনাকে নির্দেশ করা হয়েছে।
১৯৬৯-এর ফেব্রম্নয়ারি কবি দেশে কিছু লোকের অপতৎপরতা লক্ষ করেছেন। চারদিকে সন্ত্রাসের রং ছড়িয়ে পড়তে দেখেছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী বীর শহীদ সালাম ও বরকতকে আবারও রাজপথে নেমে আসতে দেখেন।
অর্থাৎ ভাষা-আন্দোলনের অবিনশ্বর সংগ্রামী চেতনায় এখনো মৃতু্য ঘটেনি। ফলে সেই বাস্তবতায়ও মুক্তি ও স্বাধিকার চেতনায় বাঙালি আবার উজ্জীবিত হয়। আর এই চেতনাই বাঙালির প্রাণ।
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়