নবম অধ্যায়
প্রশ্ন : প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা পাঁচটি বাক্যে লেখো।
উত্তর : প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। নিচে তা পাঁচটি বাক্যে লেখা হলো :
১. যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট, ই-মেইল, রেডিও, টেলিভিশন, টেলিফ্যাক্স ইত্যাদি প্রযুক্তি বিপস্নব সাধন করেছে।
২. প্রযুক্তির ফলে আমরা সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, পানিশক্তি ব্যবহার করতে পারি।
৩. যন্ত্র ও কলকারখানা মানুষের দৈহিক শ্রম লাঘব করেছে।
৪. চিকিৎসা ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এখন হৃদপিন্ড ও কিডনি স্থানান্তর সম্ভব।
৫. আধুনিক প্রযুক্তি মানুষের মৌলিক চাহিদা (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি) পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রশ্ন : প্রযুক্তির বিকাশ কেন ঘটে? বিজ্ঞানের অপব্যবহারের ৪টি উদাহরণ লেখো।
উত্তর : প্রযুক্তির বিকাশ সাধারণত সভ্যতার অগ্রগতির সাথে ঘটে এবং প্রয়োজনবোধে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবিত হয়। সুতরাং প্রয়োজনবোধে প্রযুক্তির উদ্ভাবনের মূল কারণ।
বিজ্ঞানের অপব্যবহারের ৪টি উদাহরণ :
১. গাড়ি হতে নির্গত গ্যাস ও ধোঁয়া পরিবেশকে দূষিত করছে।
২. জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক পানিতে মিশে জলজ পরিবেশ ধ্বংস করছে।
৩. রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর তৈরি করতে গিয়ে বনভূমি নষ্ট করা হচ্ছে, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে।
৪. বিভিন্ন যুদ্ধে অস্ত্রের ভয়াবহ প্রয়োগের ফলে মানবসভ্যতা ধ্বংস হচ্ছে।
প্রশ্ন : বর্তমান সময়ে খেলার মাঠে আর ছেলেমেয়েদের দেখা যায় না। এর জন্য আধুনিক প্রযুক্তি কতটা দায়ী বলে তুমি মনে করো ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : আধুনিক প্রযুক্তির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে বর্তমান সময়ে খেলার মাঠে আর ছেলেমেয়েদের দেখা যায় না।
আধুনিক প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় অবদান হলো- কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, টেলিভিশন ইত্যাদি। অনেক সময় এই প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহার নেশায় পরিণত হয়। ভালো কাজে যদি এগুলোর ব্যবহার করা না হয় তাহলে তা সময়ের অপচয় ঘটায়, নিয়মিত খেলাধুলা, ব্যায়াম ও মুক্তচিন্তার পথে বাধা সৃষ্টি করে। বর্তমানে উঠতি বয়সের অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা খেলার মাঠের চেয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোনে গেম খেলতে আগ্রহী। বিরতিহীনভাবে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে বিরক্তবোধ করে না। ফলে তারা হয়ে ওঠে অলস, পরিশ্রম ও কায়িকশ্রম সংশ্লিষ্ট খেলাধুলা বিমুখ। তাই বর্তমান সময়ে খেলার মাঠে যে ছেলেমেয়েদের দেখা যায় না এর জন্য আধুনিক প্রযুক্তি অনেকাংশে দায়ী বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন : জৈবপ্রযুক্তি কী? এ প্রযুক্তিকে তুমি কীভাবে জনকল্যাণে ব্যবহার করবে?
উত্তর : মানুষের কল্যাণে নতুন কিছু উৎপাদনে জীবের ব্যবহারই হলো জৈবপ্রযুক্তি।
জৈবপ্রযুক্তিকে আমি বিভিন্নভাবে জনকল্যাণে ব্যবহার করতে পারি। যেমন-
১. জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ, উন্নতমানের ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।
২. এর মাধ্যমে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ সৃষ্টি করা যায়।
৩. জৈবপ্রযুক্তি অধিক ফলনশীল উদ্ভিদ উৎপাদনে সহায়তা করে। অর্থাৎ জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আমি কৃষি উৎপাদন অধিকহারে বৃদ্ধি করতে পারি, যা জনকল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
প্রশ্ন : শিল্প বিপস্নব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সম্পর্কযুক্ত করেছে। এ ব্যাপারে তোমার মতামত ব্যক্ত করো।
উত্তর : শিল্প বিপস্নব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সম্পর্কযুক্ত করেছে- এ ব্যাপারে আমি একমত। কেননা, আঠারো শতকে শিল্পবিপস্নবের সময়কালে প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে শিল্পকারখানা, পরিবহণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত জলীয় বাষ্পের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ বাষ্পীয় ইঞ্জিন উদ্ভাবন করেছে। এই বাষ্পীয় ইঞ্জিন কলকারখানা, রেলগাড়ি ও জাহাজ চালাতে ব্যবহার করা হতো।
বিভিন্ন পণ্য এবং যন্ত্রপাতি উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীরা প্রযুক্তি জ্ঞান ব্যবহার করে থাকে। বিজ্ঞানীরা প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার সময়ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকেন। যেমন- দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা মহাকাশের বিভিন্ন বস্তু পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। খালি চোখে দেখা যায় না এমন জিনিস অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীরা অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। বর্তমানকালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন : আমাদের দেশে কৃষকরা ব্যবহার করেন এমন চারটি প্রযুক্তির নাম লেখো।
প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহার উলেস্নখ করো।
উত্তর : আমাদের দেশের কৃষকরা ব্যবহার করেন এমন চারটি প্রযুক্তির নাম হলো :র. লাঙল, রর. ট্রাক্টর, ররর. ডিপটিউবয়েল ও রা. ধান মাড়াই যন্ত্র।
এদের ব্যবহার :
ক. রাসায়নিক সার : বাড়তি ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকের সার ব্যবহার হয়।
খ. ট্রাক্টর : অতি অল্প সময়ে মাটি আলগা করতে ব্যবহার করতে হয়।
গ. ডিপটিউবয়েল : মাটির গভীর থেকে পানি তুলে সেচ কাজ করার জন্য ব্যবহার হয়।
ঘ. ধান মাড়াই যন্ত্র : শীষ থেকে ধানের বীজ আলাদা করার কাজের ব্যবহার হয়।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। সাম্প্রতিক সময়ে কৃষির অগ্রগতির কারণ কী? কৃষিপ্রযুক্তির অগ্রগতির পর্যায়গুলো লেখো।
উত্তর : কৃষির ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে প্রধানত দুটি কারণে। কারণ দুটি হলো :
১. রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার।
২. নতুন এবং অত্যাধুনিক কৃষিযন্ত্রের আবিষ্কার।
কৃষিপ্রযুক্তি অগ্রসর হয়েছে মোট তিনটি পর্যায়ে। পর্যায় তিনটি নিচে আলোচনা করা হলো :
প্রথম পর্যায়টি হলো কৃষিতে উন্নত যন্ত্র ব্যবহারের যুগ।
দ্বিতীয় পর্যায়টি হলো রাসায়নিক সার ব্যবহারের যুগ।
তৃতীয় পর্যায়টি হলো কৃষিতে জৈব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের যুগ।
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়