অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ

প্রকাশ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

হাবিবুর রহমান বাপ্পা, সহকারী শিক্ষক, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
নবম অধ্যায় ক্ষার (ইধংব) : ক্ষার হচ্ছে এমন এক ধরনের পদার্থ যার জলীয় দ্রবণ তিক্ত স্বাদযুক্ত হয়, লাল লিটমাস পেপারকে নীল করে এবং যা অ্যাসিডকে প্রশমিত (হবঁঃৎধষরুব) করতে পারে। চুনের পানি হচ্ছে এক ধরনের ক্ষার, এখানে রয়েছে ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড। তোমার কাছে যদি একটি লাল ও একটি নীল রঙের লিটমাস পেপার থাকে তাহলে তুমি আবার একটি পরীক্ষা করে দেখতে পারবে। তুমি যদি চুনের পানিতে নীল লিটমাস পেপার ডুবাও তুমি দেখবে তাহলে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় না, যার ফলে লিটমাস পেপারের রঙের কোনো পরিবর্তন হয় না। অন্যদিকে, যদি লাল লিটমাস পেপার চুনের পানিতে ডুবানো হয়, তখন লিটমাসের সাথে চুনের পানিতে থাকা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের বিক্রিয়ার ফলে লিটমাস পেপারের রঙের পরিবর্তন হয়ে নীল হয়ে যায়। এখানে চুনের পানিতে থাকা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড-এর মতো যে সকল রাসায়নিক পদার্থ লাল লিটমাস পেপারকে নীল করে তাদের আমরা কখনো কখনো ক্ষারক বলে থাকি কিছু ক্ষারক আছে যারা পানিতে দ্রবীভূত হয়। আবার কিছু কিছু ক্ষারক আছে যারা পানিতে দ্রবীভূত হয় না। যে সকল ক্ষারক পানিতে দ্রবীভূত হয়, তাদের ক্ষার বলে। সুতরাং, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড, অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড হচ্ছে ক্ষার জাতীয় ক্ষারক। অন্যদিকে, অ্যালুমোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড হচ্ছে ক্ষারক কিন্তু যেহেতু পানিতে দ্রবীভূত হয় না তাই এটি ক্ষারক হলেও ক্ষার নয়। অতএব, বলা যায় যে, 'সকল ক্ষার ক্ষারক হলেও সকল ক্ষারক ক্ষার নয়।' লবণ (ংধষঃ) দৈনন্দিন কথাবার্তায় লবণ বলতে আমরা সোডিয়াম ক্লোরাইড (ঘধঈষ) বা যে লবণ আমাদের খাওয়ার সময় ব্যবহার করে থাকি সেটা বুঝিয়ে থাকি, কিন্তু লবণ শব্দটি বিজ্ঞানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। লবণ হচ্ছে একটি আয়নিক যৌগ যেখানে একটি ধনাত্মক চার্জযুক্ত আয়ন (ক্যাটায়ন) ও ঋণাত্মক চার্জযুক্ত আয়ন (অ্যানায়ন) সংযুক্ত থাকে। বিভিন্ন অ্যাসিড এবং ক্ষারের মধ্যে প্রশমন বা নিরপেক্ষকরণ (হবঁঃৎধষরুধঃরড়হ) বিক্রিয়ার ফলে নানা ধরনের লবণ এবং একই সাথে পানিও উৎপন্ন হয়। লবণ একটি নিরপেক্ষ পদার্থ যার জলীয় দ্রবণ লিটমাস পেপারের রঙের কোনো পরিবর্তন করে না। সোডিয়াম ক্লোরাইড (ঘধঈষ) সবচেয়ে পরিচিত লবণের একটি উদাহরণ, এই লবণ খাদ্যে ব্যবহার ছাড়াও প্রতিদিন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজে লাগে। তোমরা হয়তো জানো যে, সমুদ্রের পানিতে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ক্লোরাইড (ঘধঈষ) রয়েছে এবং এই কারণে সমুদ্রের পানি নোনতা বা লবণাক্ত স্বাদযুক্ত হয়। অ্যাসিডের ব্যবহার ১. ভিনেগার বা এসিটিক অ্যাসিড খাবার সংরক্ষণ করতে ব্যবহার করা হয়। এসিটিক অ্যাসিড কালি এবং রঙের জন্য দ্রাবক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। ২. ফলমূল এবং সবজিতে যে সকল অ্যাসিড পাওয়া যায় তাদের জৈব অ্যাসিড বলে। যেমন- লেবু, কমলা এবং অন্যান্য সাইট্রাস (পরঃৎঁং) জাতীয় ফল এবং সবজিতে সাইট্রিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। খাদ্য শিল্পে কিছু কিছু নির্দিষ্ট খাবারের স্বাদ বাড়াতে এবং ক্ষতিকারক জীবাণুকে ধ্বংস করার জন্য সাইট্রিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়। জৈব অ্যাসিডের মধ্যে কোনো কোনোটি মানবদেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় যেমন, এসকরবিক অ্যাসিডকে (ধংপড়ৎনরপ ধপরফ) আমরা ভিটামিন সি বলে থাকি, এর অভাবে মানবদেহে স্কার্ভি রোগ হয়ে থাকে। ৩. আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং শিল্প কারখানায় বিভিন্ন ধরনের অ্যাসিডের ব্যবহার রয়েছে। টয়লেট পরিষ্কারের জন্য যে সমস্ত পরিষ্কারক ব্যবহার করা হয় তাতে অ্যাসিড থাকে। সোনার গহনা তৈরি করার সময় স্বর্ণকারগণ নাইট্রিক অ্যাসিড ব্যবহার করে থাকেন। এ ছাড়া অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সার উৎপাদনের জন্য নাইট্রিক অ্যাসিড প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খনি থেকে সোনার মতো মূল্যবান ধাতু আহরণে ও রকেটের জ্বালানির সাথে ব্যবহার করা হয়। ৪. আমরা যে খাবার খাই তা হজম করার জন্য পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (ঐঈষ) রয়েছে। এ ছাড়া ইস্পাত তৈরির কারখানা, ওষুধ, চামড়া শিল্পেও ঐঈষ ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন কোমল পানীয়তে অন্যতম উপাদান হিসেবে কার্বনিক অ্যাসিড ও অল্প পরিমাণ ফসফরিক অ্যাসিড থাকে। যেসব অ্যাসিড প্রকৃতিতে প্রাপ্ত নানা রকম খনিজ পদার্থ থেকে তৈরি করা হয় তাদের খনিজ অ্যাসিড (সরহবৎধষ ধপরফং) বলে। হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড, ইত্যাদি হলো খনিজ অ্যাসিডের উদাহরণ। এই অ্যাসিডগুলো খাওয়ার উপযোগী নয় এবং এরা মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এসব অ্যাসিড আমাদের ত্বকে লাগলে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতিসাধন হয়। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়