পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান

প্রকাশ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

রোমানা হাবিব চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, ব্রাইট ফোর টিউটোরিয়াল হোম, চট্টগ্রাম
সপ্তম অধ্যায় প্রশ্ন : সংক্রামক রোগ কী? সংক্রামক রোগ কীভাবে বিস্তার লাভ করে? উত্তর : বিভিন্ন জীবাণু যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ইত্যাদি শরীরে প্রবেশের ফলে সৃষ্ট রোগই হলো সংক্রামক রোগ। সংক্রামক রোগ বিভিন্নভাবে ছড়াতে পারে। যেমন- হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে। সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস, যেমন- গস্নাস, পেস্নট, চেয়ার, টেবিল, জামা-কাপড়, টয়লেট ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে। মশা, পোকা-মাকড় বা কুকুরের মতো প্রাণীর কামড়ের মাধ্যমে। এ ছাড়া দূষিত খাদ্য গ্রহণ ও দূষিত পানি পানের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। প্রশ্ন : সংক্রামক রোগ কী? সংক্রামক রোগ-প্রতিরোধে তোমার করণীয় কী? উত্তর : এমন কিছু রোগ আছে যেগুলো একজন থেকে অন্যজনে ছড়ায়, এগুলোকে সংক্রামক রোগ বলে। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে করণীয় হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, নিয়মিত গোসল করা, দাঁত মাজা, হাত-পায়ের নখ কাটা। ব্যবহার্য জামা-কাপড়, বালিশ, বিছানা, চাদর ইত্যাদি পরিষ্কার রাখা উচিত। এ ছাড়া যেখানে-সেখানে কফ, থুতু ইত্যাদি ফেলা যাবে না। কাশি বা হাঁচি হলে মুখে রুমাল বা হাত দিয়ে ঢাকতে হবে। প্রশ্ন : কীভাবে সংক্রামক রোগ-প্রতিরোধ করা যায় তার ৫টি উপায় লেখো। উত্তর : সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করার ৫টি উপায় হলো : ১. সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ২. নিজেকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জীবাণুমুক্ত রাখা। ৩. বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। ৪. হাঁচি-কাশির সময় টিসু্য, রুমাল বা হাত দিয়ে মুখ ঢাকা। ৫. সময়মতো প্রয়োজনীয় টিকা গ্রহণ এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করা। প্রশ্ন :সংক্রামক রোগ-প্রতিকারের উপায়গুলো কী? উত্তর : সংক্রামক রোগ-প্রতিকারের উপায় হলো- ১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া, ২. পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, ৩. প্রচুর পরিমাণ নিরাপদ পানি পান করা ও \হ৪. প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করা। প্রশ্ন : সংক্রামক রোগ কীভাবে ছড়ায় তা ব্যাখ্যা করো। উত্তর : বিভিন্ন জীবাণু যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ইত্যাদি শরীরে প্রবেশের ফলে সৃষ্ট রোগই হলো সংক্রামক রোগ। সংক্রামক রোগ বিভিন্নভাবে ছড়াতে পারে। যেমন- ১. কিছু কিছু রোগ হাঁচি-কাশির মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হয়। যেমন- সোয়াইন ফ্লু, হাম। ২. সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস ব্যবহারের মাধ্যমে জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। যেমন- ফ্লু, ইবোলা। ৩. মশার মতো পোকা-মাকড় বা কুকুরের মতো প্রাণীর কামড়ের মাধ্যমে সংক্রামক রোগ ছড়াতে পারে। যেমন- ডেঙ্গু, জলাতঙ্ক। দূষিত খাদ্য ও পানি গ্রহণও সংক্রামক রোগ ছড়ানোর অন্যতম কারণ। যেমন- ডায়রিয়া, কলেরা। প্রশ্ন : পানিবাহিত এবং বায়ুবাহিত রোগের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য কোথায়? উত্তর : পানিবাহিত ও বায়ুবাহিত রোগের সাদৃশ্য নিম্নরূপ : র. পানিবাহিত ও বায়ুবাহিত উভয় রোগের বাহক প্রয়োজন। রর. পানিবাহিত ও বায়ুবাহিত উভয় রোগই সংক্রামক রোগ। ররর. পানিবাহিত ও বায়ুবাহিত উভয় রোগই জীবাণুর মাধ্যমে ছড়ায়। পানিবাহিত ও বায়ুবাহিত রোগের বৈসাদৃশ্য নিম্নরূপ : র. বায়ুবাহিত রোগ হলো সেসব রোগ যা হাঁচি-কাশি বা কথাবার্তা বলার সময় বায়ুতে জীবাণু ছড়ানোর মাধ্যমে হয়ে থাকে। আর পানিবাহিত রোগ হলো সেসব রোগ যা জীবাণুযুক্ত দূষিত পানির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। রর. বায়ুবাহিত রোগের মধ্যে রয়েছে সোয়াইন ফ্লু, হাম, গুটিবসন্ত, যক্ষ্ণা, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি আর পানিবাহিত রোগের মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয় এবং টাইফয়েড। প্রশ্ন : হাঁচি-কাশির সময় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বা রুমাল ব্যবহার করে আমরা সংক্রামক রোগ-প্রতিরোধ করতে পারি। এ ক্ষেত্রে হাতের তালু ব্যবহার করার চেয়ে হাতের উল্টো পিঠ বা কনুই-এর ভাঁজ ব্যবহার করা ভালো কেন? উত্তর : হাঁচি-কাশির সময় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বা রুমাল ব্যবহার করে আমরা সংক্রামক রোগ-প্রতিরোধ করতে পারি। এ ক্ষেত্রে হাতের তালু ব্যবহার করার চেয়ে হাতের উল্টো পিঠ বা কনুই-এর ভাঁজ ব্যবহার করা ভালো। কারণ, হাঁচি-কাশির সময় হাতের তালু ব্যবহার করলে জীবাণু হাতের তালুতে লেগে যাবে। পরে ওই হাত দিয়ে খাদ্যদ্রব্য বা নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র স্পর্শ করলে তাতেও জীবাণু লেগে যাবে। ফলে খুব সহজেই জীবাণু সেখান থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে সংক্রমিত হবে। আর হাঁচি-কাশির সময় হাতের উল্টো পিঠ বা কনুইয়ের ভাঁজ ব্যবহার করলে রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকে। প্রশ্ন : বয়ঃসন্ধিকাল কী? এ সময় কী কী পরিবর্তন ঘটে তা চারটি বাক্যে লেখো। উত্তর : ছেলে ও মেয়েদের যে সময়ে শারীরিক, মানসিক ও আচরণের পরিবর্তন দেখা যায় সে সময়কে বয়ঃসন্ধিকাল বলে। বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলো নিচে উলেস্নখ করা হলো : ১. বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে শারীরিক, মানসিক আচরণের পরিবর্তন দেখা দেয়। ২. এ সময় ছেলে ও মেয়েরা দ্রম্নত লম্বা হয়, শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়। ৩. এ সময় একটু বেশি ঘাম হয়, ত্বক তৈলাক্ত হয়, ব্রণ ওঠে। ৪. ছেলে ও মেয়েরা এ সময় নিজেদের মতামত প্রকাশ করার চেষ্টা করে। প্রশ্ন : মনে করো তোমার বড় আপু সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত। তার ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছে। সুস্থ হওয়ার জন্য তাকে কী করতে হবে বলে তুমি মনে করো? উত্তর : ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি সংক্রামক রোগ। সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। আমার বড় আপু যেহেতু ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত, তাই সুস্থ হওয়ার জন্য তাকে নিচের পদক্ষেপগুলো নিতে হবে : ১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। ২. পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ৩. প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করতে হবে। ৪. যদি জ্বর ভালো না হয়, ক্রমাগত বমি হতে থাকে এবং মাথাব্যথা হয় তবে আপুকে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে। প্রশ্ন : রানা তোমার সহপাঠী। সে বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করছে। তুমি কি তার শরীরে কোনো পরিবর্তন দেখেছ? বর্ণনা করো। উত্তর : বয়ঃসন্ধিকালে শরীরে বেশকিছু পরিবর্তন দেখা যায়। আমার সহপাঠী রানার শরীরেও আমি কিছু পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। যেমন- ১. দ্রম্নত লম্বা হওয়া; ২. শরীরের গঠন পরিবর্তিত হওয়া; ৩. বেশি ঘাম হওয়া, ত্বক তৈলাক্ত হওয়া, ব্রণ ওঠা; ৪. শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাওয়া; ৫. গলার স্বরের পরিবর্তন হওয়া; ৬. মাংসপেশি সুগঠিত হওয়া এবং দাড়ি-গোঁফ গজাতে শুরু করা। প্রশ্ন : বয়ঃসন্ধি বলতে কী বোঝ? তোমার ও তোমার বড় আপুর উদাহরণ দিয়ে বোঝাও। উত্তর : বয়ঃসন্ধি হলো জীবনের এমন একপর্যায় যখন আমাদের শরীর শিশুর অবস্থা থেকে কিশোর অবস্থায় পৌঁছায়। সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধি ৮ থেকে ১৩ বছরে হয়। যেমন- আমার বড় আপু সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তার বয়স ১৩ বছর। এখন তার বয়ঃসন্ধি চলছে। অন্যদিকে ছেলেদের ক্ষেত্রে ৯ থেকে ১৫ বছর বয়সে শুরু হয়। যেমন- আমার বয়স ১১ বছর। আমার বয়ঃসন্ধি শুরু হয়েছে। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে শারীরিক, মানসিক ও আচরণিক পরিবর্তন হয়ে থাকে। যা আমার ও আপুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়