অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ
প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
হাবিবুর রহমান বাপ্পা, সহকারী শিক্ষক, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
অষ্টম অধ্যায়
দহন বিক্রিয়া (পড়সনঁংঃরড়হ ৎবধপঃরড়হ) :
দহন বিক্রিয়া হলো এমন এক ধরনের বিক্রিয়া যেখানে কোনো পদার্থ অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে আলো এবং তাপ উৎপন্ন করে। দহন বিক্রিয়ায় অবশ্যই অক্সিজেন (ঙ২) থাকতে হবে, যেখানে অক্সিজেন একটি বিক্রিয়ক হিসেবে কাজ করে। তোমরা তোমাদের চারপাশে সব সময়েই দহন প্রক্রিয়ার অনেক উদাহরণ দেখেছ, মোমবাতির জ্বলন, চুলার আগুন বা গাড়ির ইঞ্জিন চলা এগুলো সবই দহন বিক্রিয়ার উদাহরণ।
তোমরা যদি অন্ধকার ঘরে একটা মোমবাতি জ্বালাও তাহলে দেখবে তার আলোতে ঘর আলোকিত হয়ে উঠেছে, আলোর শিখার কাছে হাত নিলে তার তাপটাও অনুভব করবে। মোমটিকে ভালো করে লক্ষ করলে দেখবে মোমের কিছু অংশ গলে নিচে গড়িয়ে পড়ে ঠান্ডা হয়ে জমাট বেঁধে গেলেও বেশির ভাগ উৎপন্ন তাপে বাষ্পীভূত হয়ে যাচ্ছে। এই বাষ্পীভূত মোম দহন বিক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুর অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করছে যার ফলে তাপ ও আলোকশক্তি উৎপন্ন হচ্ছে।
মোমের পরিবর্তে যদি কখনো সালফার বা গন্ধককে উত্তপ্ত করা হয় তাহলেও তোমরা দেখতে পাবে যে, প্রথমে সালফার গলে যাবে; তারপর সেখানে নীল আগুনের শিখা দেখা যাবে। তাপ দেওয়ার ফলে একসময় সালফার (ঝ) বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে সালফার ডাইঅক্সাইড গ্যাস তৈরি করতে শুরু করবে।
রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তির রূপান্তর
শক্তির বিভিন্ন রূপ রযয়েছে, যেমন ু তাপ শক্তি, আলোক শক্তি, যান্ত্রিক শক্তি, স্থিতি শক্তি, বৈদু্যতিক শক্তি, রাসায়নিক শক্তি, শব্দ শক্তি ইত্যাদি। শক্তিকে সৃষ্টি কিংবা ধ্বংস করা যায় না, এটিকে কেবল এক ধরনের শক্তি থেকে অন্য ধরনের শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। এখানে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সরাসরি বিভিন্ন শক্তিতে রূপান্তরের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো :
তাপশক্তি :আমরা আমাদের চারপাশে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি তাপ শক্তিতে রূপান্তর দেখে অভ্যস্ত। যে কোন দহন প্রক্রিয়া হচ্ছে এর উদাহরণ। মোমবাতি কিংবা চুলায় এভাবে তাপ উৎপন্ন করা হয়, এমনকি আমাদের শরীরেও এভাবে তাপ শক্তি সৃষ্টি হয়ে থাকে। গাড়ির ইঞ্জিনেও রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে যে তাপ শক্তির সৃষ্টি হয় সেই শক্তি দিয়ে গাড়িকে চলমান করা হয়।
এখানে উলেস্নখ্য যে রাসায়নিক বিক্রিয়াতে বিপরীত প্রক্রিয়াও ঘটে থাকে যেখানে তাপ শক্তি গ্রহণ করে বিক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। যেমন- বেকিং সোডার মাঝে লেবুর রস দেওয়া হলে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস বুদবুদ আকারে বের হয়ে আসে, তখন এই বিক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য তাপ নিয়ে নেওয়ার কারণে মিশ্রণের তাপমাত্রা কমে যায়।
আলোক শক্তি : মোমবাতির শিখায় রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপ শক্তি সৃষ্টি করে সেই তাপ শক্তি থেকে আলোক শক্তি সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে কোন তাপ শক্তি সৃষ্টি না করে সরাসরি আলোক শক্তি সৃষ্টি করা যায়। তার সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ হচ্ছে জোনাকি পোকা, সেটি তার শরীরে লুসিফেরিন নামক রাসায়নিক পদার্থ অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে আলো সৃষ্টি করে।
বিদু্যৎ শক্তি :আমরা ব্যাটারিতে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে বিদু্যৎ শক্তি পেয়ে থাকি। সাধারণ শুষ্ক কোষে জিঙ্ক, এমোনিয়াম ক্লোরাইড এবং ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইডের বিক্রিয়ার মাধ্যমে এই বিদু্যৎ শক্তি তৈরি হয়ে থাকে। লিথিয়াম আয়ন জাতীয় রিচার্জ করার উপযোগী ব্যাটারিতে এর বিপরীত প্রক্রিয়াটি ঘটানো হয়, যখন বিদু্যৎ প্রবাহ করে বিপরীত রাসায়নিক বিক্রিয়া করে পরবর্তী সময়ে বিদু্যৎ শক্তি সৃষ্টি করার উপযোগী করে রাখা হয়।
নবম অধ্যায়
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে অম্স্ন বা অ্যাসিড, ক্ষার এবং লবণ রয়েছে। এসবের মধ্যে অনেক অ্যাসিড, ক্ষার এবং লবণ প্রাকৃতিকভাবেই (হধঃঁৎধষষু) পাওয়া যায়। যেমন- লেবুর রস ও কমলাতে রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড, তেঁতুলে থাকে টারটারিক অ্যাসিড এবং দুধে থাকে ম্যালিক অ্যাসিড। একইভাবে চুনের পানি হচ্ছে ক্ষার। সমুদ্রের পানিতে থাকে সোডিয়াম ক্লোরাইড যা পরিশোধিত করে আমরা খাবার লবণ হিসেবে ব্যবহার করি। এইসব অল্প, ক্ষার ও লবণের রাসায়নিক ধর্ম ভিন্ন, কাজেই ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এদের ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার রয়েছে।
অম্স্ন বা অ্যাসিড (অপরফ)
অ্যাসিড হচ্ছে এমন এক ধরনের পদার্থ, যার জলীয় দ্রবণ টক স্বাদযুক্ত, এটি নীল লিটমাস পেপারকে লাল করতে পারে এবং ক্ষারকে প্রশমিত (হবঁঃৎধষরুব) করতে পারে। লিটমাস পেপার হচ্ছে বিশেষ একধরনের কাগজ, যেখানে লাইকেন (ষরপযবহ) নামক এক ধরনের গাছ থেকে প্রাপ্ত রং মেশানো হয়। কোনো দ্রবণ অ্যাসিডিক না ক্ষারীয় তা পরীক্ষা করতে লিটমাস পেপার ব্যবহার করা হয়। অম্স্নীয় বা অ্যাসিডিক দ্রবণ নীল লিটমাস পেপারকে লাল করে এবং ক্ষারীয় দ্রবণ লাল লিটমাস পেপারকে নীল করে।
লেবুর রসে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে। তোমার কাছে যদি একটি লাল ও একটি নীল রঙের লিটমাস পেপার থাকে তাহলে তুমি দেখবে যদি লেবুর রসে লাল লিটমাস পেপার ডুবানো হয় তাহলে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় না, যার ফলে লিটমাস পেপারের রঙের কোনো পরিবর্তন হয় না। অন্যদিকে, যখন নীল লিটমাস পেপার লেবুর রসে ডুবানো হয়, তখন লিটমাসের সাথে লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ার ফলে কাগজের রঙের পরিবর্তন হয়ে লাল হয়ে যায়।
\হকিছু অ্যাসিডের নাম ও সংকেত
অ্যাসিডের নাম সংকেত
ভিনেগার বা অ্যাসেটিক অ্যাসিড ঈঐ৩ঈঙঙঐ
অক্সালিক অ্যাসিড ঐঈঙঙ- ঈঙঙঐ
সালফিউরিক অ্যাসিড ঐ২ঝঙ৪
নাইট্রিক অ্যাসিড ঐঘঙ৩
টেবিলে কয়েকটি অ্যাসিডের নামসহ সংকেত উলেস্নখ করা হয়েছে। টেবিলে উলেস্নখিত সবক'টি অ্যাসিডের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিল রয়েছে, সেটি হচ্ছে এই অ্যাসিডের সবগুলোর মধ্যেই এক বা একাধিক হাইড্রোজেন পরমাণু (ঐ) আছে এবং এরা প্রত্যেকেই পানিতে হাইড্রোজেন আয়ন তৈরি করে। কাজেই আমরা বলতে পারি, অ্যাসিড হলো ওই ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যাদের মধ্যে এক বা একাধিক হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে এবং যারা পানিতে হাইড্রোজেন আয়ন উৎপন্ন করে।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়