একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র

প্রকাশ | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

আতাউর রহমান সায়েম, সহকারী শিক্ষক, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
তাহারেই পড়ে মনে প্রশ্ন : 'তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান? ডেকেছে কি সে আমারে? শুনি নাই, রাখি নি সন্ধান।' - পঙ্‌িক্ত দুটি বুঝিয়ে লেখ। উত্তর : কবি অকাল বৈধব্যের শিকার। তার হৃদয় দুঃখে-শোকে মুহ্যমান। কবির সে শোকদগ্ধ মনে ঋতুরাজ বসন্তের অপরূপ সমারোহে আগমন কোনো আনন্দের বাণী নিয়ে আসেনি। কবি এতই আনমনা যে, তিনি খেয়ালই করেননি প্রকৃতিতে কখন ঋতুরাজের আগমন ঘটেছে। কবির চেতনা আজ বিমূঢ়। ফুলের সুবাস ও পাখির কলরব তাঁর চিত্তে পুলক শিহরণ জাগায়নি। তাঁর বিরহকাতর ব্যথাদীর্ণ হৃদয়ের অনন্ত হাহাকারের জন্যই কবি এসবের সন্ধান রাখেন না। কবি এত ফুলের সৌরভ, দখিনা সমীকরণ দেখে এতটুকুও আবেগকম্পিত হননি। অন্তরে তাঁর কোনো শিহরণ জাগেনি। তিনি মৌন, তিনি উদাসীন হয়ে আছে। কবির অনুরাগী জনৈক ভক্তের বসন্তকে বরণ করে নেয়ার মিনতি জানানোর পর কবি জানতে চাইলেন দিগন্তের পথ বেয়ে সৌন্দর্যের পসরা বোঝাই তরীখানি এসেছে কি না। বসন্তের কোনো আগমনী বাণী তিনি শুনতে পাননি। কেননা কবির মন শীতের ঋতুতেই আচ্ছন্ন হয়ে আছে। প্রশ্ন : 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতা অবলম্বনে সংক্ষেপে বসন্ত ঋতুর বর্ণনা দাও। উত্তর : সাধারণভাবে প্রকৃতির সৌন্দর্য মানব মনের অফুরন্ত আনন্দের উৎস। সেই অফুরন্ত আনন্দের উৎস হিসেবে পৃথিবীতে বসন্তের আবির্ভাব ঘটেছে। প্রকৃতিতে ঘটে গেছে এক অনিন্দ-হিন্দোল। দখিন দুয়ার খুলে গেছে। বাগানে ফুটেছে বাতাবি লেবুর ফুল। ফুটেছে আমের মুকুল। দখিনা সমীর গন্ধে গন্ধে অধীর-আকুল হয়েছে। নতুন ফুল প্রকৃতিকে সাজিয়েছে তার পূর্ণ রূপ মাধুর্য দিয়ে। মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ ছড়িয়েছে। দখিনা বাতাস বইতে শুরু করেছে। সঙ্গে এনেছে পৃথিবীর সমস্ত সৌরভ। আমের মুকুলে মৌমাছির গুঞ্জরণ, মাধবী ফুলের কুঁড়ির নাচন আর বনে বনে ফুলের আসরে নানা পাখ-পাখালীর কণ্ঠে বসন্তের এ আগমন যেন মানবমনকে আনন্দে শিহরণে উদ্বেলিত করে তুলেছে। বনভূমি নতুন পত্রপলস্নবে বিচিত্র ফুলের বাহারে হয়ে উঠেছে রঞ্জিত, নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে উঠেছে পুলকিত স্বচ্ছলতার এক প্রগাঢ় নিকুঞ্জ। প্রশ্ন : 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় শীতের রিক্ততার মধ্যে কবির অতীত জীবনের যে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় তা লেখ। উত্তর : শীত ঋতু প্রকৃতিতে দেয় রিক্ততার রূপ। শীতের প্রকোপে বৃক্ষলতা পত্রহীন, পুষ্পহীন পান্ডুর এবং শ্রীহীন হয়ে যায়। এমন রিক্ত নিঃস্ব প্রকৃতিকে তাই সংসার ত্যাগী সন্ন্যাসীর মতো মনে হয়। রিক্ত শীতের সাথে রিক্ত সন্ন্যাসীর অপূর্ব সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন কবি তাঁর প্রিয়জন হারানো রিক্ত নিঃস্ব অনিকেত জীবনে। শীতের রিক্ততার মত কবির হৃদয় বেদনাবিধুর। কারণ কবির সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামী নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃতু্যতে কবির অন্তরে অনির্বচনীয় শূন্যতা নেমে আসে। তাঁর কাব্য সাধনায় ছন্দপতন ঘটতে থাকে। এক দুঃসহ বিষণ্নতায় কবির মন আচ্ছন্ন হয়ে আছে রিক্ততার হাহাকারে। যে রিক্ততা রয়েছে শীত প্রকৃতিতেও। তাই কবি তাঁর অতীত জীবনের রিক্ততার আশ্চর্য সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন নিঃস্ব রিক্ত শীতের মধ্যে। প্রশ্ন :'কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে রিক্ত হস্তে !'-ব্যাখ্যা কর। উত্তর : বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। দখিনা দুয়ার আজ খোলা। চারদিকে প্রকৃতি সেজেছে নবোঢ়া কন্যার মতন। কবির পরিচয় এই বসন্তের গান গাওয়াতে বসন্তকে 'ঈড়সব, মবহঃষব ংঢ়ৎরহম! বঃযবৎপধষ সরষফহবংং! পড়সব'. এই বলে থমসন একদিন যে উক্তি করেছিলেন জগতের কবিকুলের তাই শাশ্বত ধ্যান-ধারণা। অথচ আমাদের কবি তা থেকে অন্যথা। কবিমন এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব এবং বসন্ত সমাগমনে ভ্রূক্ষেপহীনতার কারণ বিশ্লেষণ করে বলেছেন। কবি আজ বহুদিন ধরে প্রিয়জন বিরহিত। তাই শীতের জীর্ণতা আর রিক্ততার মাঝে কবি খুঁজে পান নিজের জীবনের সাদৃশ্য। কবির প্রথম জীবনের আলোর দিশারী, বর্তমান সম্পদপূর্ণ সুখী জীবনে আর নেই। যে দিয়েছে কবিকে অনুপ্রেরণা, কবিকে প্রস্ফুটিত ও বিকশিত করার জন্য যার আয়োজন ছিল ব্যাপক, সে রিক্ত শীতের মতন পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে হারিয়ে গেছে। কবির বসন্ত দিনে সেই সর্বশক্তি মাঘের সন্ন্যাসী গভীর বিষাদের রাগিনী ধ্বনিত করেছে দিক হতে দিগন্তে। তাইতো কবি বসন্ত বন্দনায় নিজেকে করেননি ব্যাপৃত। ফিরে গেছেন অতীত জীবনের স্মৃতির কাছে। প্রশ্ন : 'অলখের পাথার বাহিয়া তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?'-ব্যাখ্যা কর। উত্তর : প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে ফুলে-ফুলে সাজানো, সৌরভমুখর মাদকতাপূর্ণ প্রকৃতির প্রতিশ্রম্নতি নিয়ে। এসেছে বাতাবি লেবুর মন উদাস করা সুবাসে, পাখির গানে, ভ্রমরের গুঞ্জনে আর আম্রমুকুলের সুরভিতে। শীতের জরাজীর্ণতার হয়েছে অবসান। অথচ সাড়ম্বরে জেগে ওঠা প্রকৃতির এতসব আহ্বান কবির মনে জাগাতে পারেনি কোন আনন্দের সুর। আনেনি কোন শিহরণ। কেননা পুষ্পশূন্য, রিক্ত হস্তে কিছুকাল পূর্বেই শীত ঋতু বিদায় নিয়েছে। শীতের আগমন ও বিদায়ে প্রকৃতি থেকেছে নীরব। শীতের এ রিক্ত ও নিঃস্বভাব কবিচিত্তে যে বেদনার সঞ্চার করেছে তার আবেগেই তিনি নির্মোহ এবং নিশ্চল। কবির ভক্তকূল তাঁকে বসন্তের আগমনী সংবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু কবি উদাসীনভাবে বলেছেন, সত্যিই বসন্ত এসেছে কি না কিংবা বসন্তের আগমনী গান বেজেছে কি না তা তিনি জানেন না। কখন চুপিসারে তাঁর দ্বারে বসন্তের আবির্ভাব ঘটেছে তা তিনি লক্ষ্য করেননি। ফলে তিনি বসন্তকে স্বাগত জানাতে পারেননি। তাই কবির ব্যথাতুর হৃদয়ের বাণী-- 'অলখের পাথার বাহিয়া তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?'