শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র

আতাউর রহমান সায়েম, সহকারী শিক্ষক, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
  ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র

তাহারেই পড়ে মনে

প্রশ্ন : 'অলখের পাথার বাহিয়া'- চিত্রকল্পটির মর্মার্থ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : সুদূরতম ইঙ্গিত প্রদান করার লক্ষ্যে কবি 'অলখের পাথার বাহিয়া' চিত্রকল্পের অবতারণা করেছেন।

'অলখের পাথার বাহিয়া'-বাক্যটির আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় দৃষ্টিসীমার বাইরে সমুদ্রপথে ছুটে চলা কোনো কিছু। 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় স্মৃতিভারাক্রান্ত কবির মনে বসন্তের আগমনের দৃশ্যটির দূরত্ব বুঝাতে এই চিত্রকল্পটি ব্যবহৃত হয়েছে। কবির হৃদয়ে যেন বসন্তের আগমনের মতোই সুদূর সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে কোনো এক সুখকর স্মৃতি দুয়ারে এসে হানা দেয়। এখানে প্রিয়-মানুষটির চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টির প্রতিও ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে।

প্রশ্ন : 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় শীত ঋতুকে কীসের সাথে তুলনা করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় শীত ঋতুকে মাঘের সন্ন্যাসীর সাথে তুলনা করা হয়েছে।

শীত ঋতুতে চারদিকে নিঃস্বতা ও রিক্ততার যে ছবি দেখা যায় তাতে প্রকৃতিকে সন্ন্যাসীর মতো অলংকারহীন মনে হয়। কবি সুফিয়া কামাল 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় শীতের রিক্ত ও জরাজীর্ণতাকে বোঝাতে শীত ঋতুকে মাঘের সন্ন্যাসী বলে উলেস্নখ করেছেন। শীত ঋতুতে চারদিকে পাতাবিহীন গাছের যে প্রাকৃতিক নান্দনিকতা তৈরি হয়, তা দৃশ্যত সন্ন্যাসীর মতোই মনে হয়।

প্রশ্ন : প্রিয়জন হারানোর বেদনা কীভাবে মানুষের মনে ছায়াপাত করে?- 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতাবলম্বনে তা বর্ণনা করো।

উত্তর : প্রিয়জন হারানোর বিষাদঘন বেদনা মানুষকে তিলে তিলে কষ্ট দেয়।

কবি সুফিয়া কামাল 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় তাঁর ব্যক্তিজীবনের এক মর্মান্তিক বেদনার স্মৃতিকেই তুলে ধরেছেন। প্রিয়জন হারানোর বেদনা মানুষকে ক্রমান্বয়ে বিষণ্ন ও উদাস করে তোলে। কবি ও কবি-ভক্তের সংলাপে কবির নিরাসক্ত উদাস ভাবটি সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবি শীতের রিক্ততা ভুলতে পারেন নি। কারণ তাঁর মনোজগতে প্রিয়জন হারানোর ব্যথা গভীর হয়ে বার বার উঁকি দিচ্ছে। প্রিয় মানুষটিকে হারানোর বেদনা তাই কবিকে করে তুলেছে জীবনবিমুখ, নিরাসক্ত এক বিষণ্ন মানুষ।

প্রশ্ন : 'হে কবি নীরব কেন?' -কবি কোন কারণে নীরব?

উত্তর : প্রিয়জন হারানোর বিষাদময় স্মৃতি ভুলতে না পেরে নিঃস্ব কবিকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়।

প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন ঘটলেও কবির মনোজগৎ জুড়ে বিরাজ করছে শীতের রিক্ততা ও বিষণ্নতার ছবি। কবির মন দুঃখ-ভারাক্রান্ত। শীতের করুণ বিদায় কবির মনে যে বেদনার ছায়াপাত রেখে গেছে, তা কবি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না।

এখানে প্রকৃতি ও মানব মনের মিলের দিকটি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। কবির নীরবতার কারণটি যেন প্রকৃতির চিরাচরিত পরস্থিতির মাঝেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। মূলত প্রিয়জন হারানোর বেদনায় কাতর কবি স্বাভাবিকভাবেই নিঃস্ব, রিক্ত এবং নীরব হয়ে পড়েন।

প্রশ্ন : 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতাটি নাটকীয় গুণসম্পন্ন-সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : কবিতার মধ্যে যখন নাটকীয় গুণ থাকে তখন তাকে নাটকীয় গুণসম্পন্ন কবিতা বলে। নাটকীয় কবিতার মধ্যে একাধিক চরিত্র বা একাধিক ব্যক্তির মধ্যে ভাব ফুটে ওঠে। বেগম সুফিয়া কামালের 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় নাটকীয়তার ভাব সুস্পষ্ট।

গঠনরীতির দিক থেকে এটি একটি সংলাপধর্মী কবিতা। কবিতাটি নির্মিত হয়েছে কবি ও কবিভক্তের মধ্যে নাটকীয় সংলাপের ভিত্তিতে। এভাবে কবিতার সব ক'টি চরণ দ্বৈত ছন্দোবদ্ধ কথোপকথনের রীতিতে রচিত হয়েছে।

কবিতায় এ ধরনের নাটকীয়তা খুব কমই লক্ষ করা যায়। কবি সুফিয়া কামাল এ নাটকীয়তা সৃষ্টির মাধ্যমে কবিতাটিকে ভিন্নমাত্রায় ভূষিত করেছেন। কবিতায় নাটকীয় সংলাপের ভাব থাকায় একে নাটকীয় গুণসম্পন্ন কবিতা বলা যায়।

প্রশ্ন : 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় বসন্তের আগমনে কবি উদাসীন কেন?

উত্তর : বসন্তের নয়নলোভা সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও কবিমনে আজ তীব্র উদাসীনতা, আচরণে অনাকাঙ্ক্ষিত বিষণ্নতা। কেননা বসন্তের আগমনের কিছুকাল পূর্বেই যাবতীয় রিক্ততা, শূন্যতা আর নিঃস্বতা নিয়ে শীত ঋতু হারিয়ে গেছে পুষ্পশূন্য দিগন্তে। শীতের প্রকোপে বৃক্ষলতা হয়েছে পত্রহীন, পুষ্পীন, পান্ডুর এবং শ্রীহীন। এর আগমন ও বিদায়ে প্রকৃতি থেকেছে নীরব। শীতের এই উদার্য কবির কাছে শীতকে মহিমান্বিত করেছে। তাই কবি শীতকে ভুলতে পারেন নি।

শীতের রিক্ত ও নিঃস্বভাব কবিচিত্তে যে বেদনার সঞ্চার করেছে তার আবেগেই তিনি নির্মোহ এবং নিশ্চল। একটি চরম দুঃখবোধ বা কিছু হারানোর বিলাপ কবির মানসে পূর্ণ আসন দখল করেছে। তাই কখন চুপিসারে তাঁর দ্বারে বসন্তের আগমন ঘটেছে তা তিনি লক্ষ্য করেন নি। তিনি উদাসীনভাবে বসন্তকে উপেক্ষা করেছেন। ফলে বসন্তের আগমনকে তিনি স্বাগত জানাতে পারেন নি।

প্রশ্ন : 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য ও কবির মনের অবস্থার মধ্যে কোনটি প্রধান হয়ে উঠেছে বলে তুমি মনে কর? কেন?

উত্তর : এ কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ও তাৎপর্যময় অভিব্যক্তি লাভ করেছে। কবিতার বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করলে আপাতদৃষ্টিতে তাকে প্রকৃতি বিষয়ক কবিতা বলেই মনে হয়। নিঃস্বর্গ অর্থাৎ প্রকৃতি বিষয়ক কবিতার সমস্ত বৈশিষ্ট্য এতে রয়েছে।

কিন্তু প্রকৃতির মধুর রূপরাশির বর্ণনা করাই কবির একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। বসন্তের আবেদন তার হৃদয় দুয়ারে ব্যর্থ হয়ে গেছে। কবির মন দুঃখভারাক্রান্ত। তাঁর কণ্ঠ নীরব। শীতের করুণ বিদায়কে তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছে না। বসন্তের সৌন্দর্য তার অর্থহীন মনে কোন আবেদন জানাতে পারছে না।

প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য তার প্রথম স্বামী ও কাব্য সাধনার প্রেরণা পুরুষের আকস্মিক মৃতু্যতে কবির অন্তরে যে বিষণ্নতা জাগে তারই সুস্পৃষ্ট প্রভাব ও ইঙ্গিত এ কবিতায় ফুটে উঠেছে।

ঋতুরাজ বসন্ত এসেছে ফুলে ফুলে সাজানো, সৌরভমুখর মাদকতাময় প্রকৃতির প্রতিশ্রম্নতি নিয়ে। কিন্তু বসন্তের নয়নলোভা সৌন্দর্য কবিকে মুগ্ধ করতে পারেনি। কেননা কবি শীতের রিক্ততার জন্য বেদনাহত। শীতের প্রভাব তার হৃদয় থেকে মুছে যায়নি। তিনি উদাসীনভাবে বসন্তকে উপেক্ষা করছেন।

\হপরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে