কান্ড
আমাদের চারপাশে ছোট-বড় নানান রকমের গাছ আমরা দেখতে পাই। গাছের মাটির উপরের যে অংশটি আমরা দেখতে পাই, মূলত এটিই গাছের কান্ড। গাছের বাকল সাধারণত বাদামি বা ধূসর এবং কচি ডালপালা সবুজ বর্ণের বট হয়। গাছের কান্ড একটা গাছকে ১৬ তার কাঠামো প্রদান করে এবং না! পাতা, ফুল ও ফল ধারণের মতো না গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে।
বিভিন্ন চা গাছের জন্য কিংবা গাছের বিভিন্ন ১১ অঙ্গের জন্য এই কান্ড আবার বিভিন্ন এক রকম হতে পারে। ফুলের বোঁটা হিসেবে আমরা যা দেখি সেটিও মূলত এক ধরনের নরম কান্ড। প্রাথমিকভাবে কান্ড নরম হয়ে থাকে, ডালপালা দুর্বল হয় এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে পরবর্তী সময়ে অনেক গাছের কান্ড খুব শক্ত হয় যা কাঠ হিসেবে ব্যবহার উপযোগী। এদের বাইরে পুরু বাকল থাকে। কান্ড গাছকে একটি নির্দিষ্ট আকৃতি ও কাঠামো দেয়, সুরক্ষা প্রদান করে।
শুধু তাই না, গাছের ডালপালা বংশবিস্তারেও সাহায্য করে। এখানে মনে রাখতে হবে যে প্রতিটি ঋতুতে একটি গাছ শিকড়, ডগায় এবং পাশে বৃদ্ধি পায়। পাশের বৃদ্ধির কারণেই ডাটা, শাখা এবং কান্ড ঘন হয়ে যায় এবং এর মধ্যে দিয়ে আমরা গাছের কান্ডের প্রস্থচ্ছেদে যে রিংগুলো দেখি সেগুলো তৈরি হয়, একটি রিং যা ঋতুতে একটি চক্র বা এক বছরকে চিহ্নিত করে।
কিছু ভূগর্ভস্থ রূপান্তরিত কান্ড যেমন- আলু ও আদা খাদ্য সঞ্চয় করে ভিন্ন আকার ও আকৃতি ধারণ করে। সুমিষ্ট পানীয় আখের রস আমরা পাই আখের রসালো কান্ডে সঞ্চিত খাদ্য থেকে। আবার, কাটাযুক্ত ক্যাকটাস তাদের কান্ড পানি সঞ্চয়ের কাজে ব্যবহার করে।
মূল
গাছের যে অংশ মাটির সাথে যুক্ত থাকে, খাদ্য জমা রাখে, মাটি থেকে পানি ও খনিজ পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করে সেটি মূল বা শিকড় (জড়ড়ঃ) নামে পরিচিত। মূলের গায়ে ছোট ছোট চুলের মতো অংশ থাকে যাকে মূলরোম (জড়ড়ঃ যধরৎ) বলা হয়। মূলরোম এমনভাবে গঠিত হয় যেন খুব সহজেই সেগুলো মাটি থেকে বেশি পরিমাণে পানি ও দ্রবীভূত খনিজ লবণ শোষণ করে নিতে পারে।
প্রত্যেক মূলের আগায় থাকে মূলটুপি (জড়ড়ঃ পধঢ়), যেটি মূলত কোষের শক্ত আবরণ যা মূলকে আঘাত থেকে রক্ষা করে। উদ্ভিদের মূল সাধারণত দুই ধরনের হয়। মূলের যে অংশ মাটির গভীরে প্রবেশ করে সেটি হচ্ছে প্রধান মূল এবং ভূপৃষ্ঠতলের কাছাকাছি শাখামূল বিস্তৃত থাকে? এরা মাটি থেকে পানি ও খনিজ উপাদান শোষণের জন্য কাজ করে।
মাটি থেকে পানি ও খনিজ উপাদান মূলরোম, প্রশাখামূল, শাখামূল হয়ে প্রধান মূলে প্রবেশ করার পর মূলের কোষে তরলের চাপ সৃষ্টি হয়। প্রস্বেদন টানের ফলে পানি ও খনিজ উপাদান মূল হতে কান্ডের সাহায্যে উদ্ভিদের উঁচু শাখা-প্রশাখা ও পাতায় প্রবেশ করে।
৬ষ্ঠ অধ্যায়
আগের শ্রেণিতে আমরা একটি বিশেষ ধরনের গতির কথা জেনেছিলাম, সেটার নাম পর্যাবৃত্ত গতি (চবৎরড়ফরপ গড়ঃরড়হ), যেখানে গতিশীল বস্তুটি একই স্থানে বারবার ফিরে এসে তার গতির পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। সুতায় বেঁধে একটা পাথরকে ডানে-বাঁয়ে দুলতে দিলে সেটি হবে পর্যাবৃত্ত গতির একটি উদাহরণ, কারণ পাথরটা যেখান থেকে শুরু করে আবার সেখানে বারবার ফিরে আসে।
সরল স্পন্দন গতি
যদি ঘর্ষণ বা অন্য কোনোভাবে শক্তি ক্ষয় না হতো তাহলে পাথরটা অনন্তকাল একইভাবে দুলতে থাকত এই ধরনের গতিতে পাথরটির গতির পুনরাবৃত্তি হতে থাকে কারণ পাথরটির শক্তি ক্রমাগত বিভবশক্তি থেকে গতিশক্তি এবং গতিশক্তি থেকে বিভবশক্তিতে রূপান্তরিত হতে থাকে। প্রথমে পাথরটি ঝুলিয়ে দেওয়ার পর সেটি স্থির অবস্থায় ছিল, এটাকে সাম্য অবস্থা বলে সাম্য অবস্থায় পাথরটির মাঝে বিভবশক্তি বা গতিশক্তি কোনোটাই নেই।
এখন পাথরটিকে টেনে একপাশে একটু সরিয়ে নিলে সেটি একটু উপরে উঠে যায় বলে তার ভেতরে বিভবশক্তি সৃষ্টি হয়। এবারে পাথরটি ছেড়ে দিলে সুতা দিয়ে বাধা বলে সরাসরি নিচে নামতে পারে না, তাই সামনের দিকে এগিয়ে সর্বনিম্ন স্থানে পৌঁছাতে চায়, তখন বিভবশক্তি কমে সেটি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হতে থাকে।
যখন সেটি সবচেয়ে নিচে নেমে আসে অর্থাৎ পূর্বের সাম্য অবস্থার অবস্থানে আসে তখন তার ভেতরে কোনো বিভবশক্তি থাকে না, কিন্তু পুরো শক্তিটাই গতি শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার কারণে সবচেয়ে দ্রম্নত গতিতে যেতে থাকে। যেহেতু এখন পাথরটির মাঝে গতিশক্তি সৃষ্টি হয়েছে আমরা এখন আর এই অবস্থানকে সাম্য অবস্থা বলতে পারব না।
এই গতিশক্তির কারণে পাথরটি অন্যপাশে উপরে উঠতে থাকে এবং ধীরে ধীরে তার গতিশক্তি কমতে থাকে। যখন এটি তার সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায় তখন সেটি থেমে যায় বলে তার ভেতরে আর কোনো গতিশক্তি থাকে না, পুরোটাই বিভবশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
পাথরটা তখন দিক পরিবর্তন করে ধীরে ধীরে উল্টোদিকে গতিশীল হতে থাকে এবং এভাবে পুরো গতিচক্রের পুনরাবৃত্তি হতে থাকে, অর্থাৎ বিভবশক্তি এবং গতি শক্তির মাঝে শক্তির রূপান্তর হতে থাকে। এই ধরনের গতিকে সরল স্পন্দন গতি (ঝরসঢ়ষব ঐধৎসড়হরপ গড়ঃরড়হ) বলে। পৃথিবীতে যত ধরনের গতি আছে তাদের ভেতর এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গতির মাঝে একটি।
একইভাবে একটা ম্প্রিংয়ের সঙ্গে একটা ভর যুক্ত করে সেটাকে নিচে টেনে ছেড়ে দিলে যখন সেটা উপর-নিচ করতে থাকে, সেটিও এই সরল স্পন্দন গতির উদাহরণ ম্প্রিংটিকে তার সাম্য অবস্থা থেকে টেনে লম্বা করে যখন ভরটিকে সবচেয়ে নিচের অবস্থানে নামিয়ে আনা হয় তখন তার ভেতরে একটা বিভবশক্তির সৃষ্টি হয়।
ভরটিকে ছেড়ে দিলে এই বিভবশক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হতে থাকে এবং আগের উদাহরণের মতো গতিশক্তিটি সর্বোচ্চ মানে পৌঁছানোর পর পুরোটাই বিভবশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। স্প্রিংটি যখন তার সাম্য অবস্থা থেকে প্রসারিত এবং সংকুচিত হয়, এই দুই অবস্থাতেই তার ভেতরে বিভবশক্তির সৃষ্টি হয়। এভাবে ছবিতে দেখানো উপায়ে ভরটি বিভবশক্তি এবং গতি শক্তির মাঝে রূপান্তরিত হয়ে স্পন্দিত হতে থাকে।
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়