ভাজক টিসু্যর কাজ :
১. ভাজক টিসু্যর বিভাজনের মাধ্যমে উদ্ভিদ দৈর্ঘ্যে এবং প্রস্থে বৃদ্ধি পায়।
২. ভাজক টিসু্য থেকে স্থায়ী টিসু্য তৈরি হয়।
৩. ভাজক টিসু্য বিভাজনের মাধ্যমে ক্ষতস্থান পূরণ করে।
স্থায়ী টিসু্য
উদ্ভিদের ভাজক টিসু্য যখন পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হয়ে উদ্ভিদের নির্দিষ্ট স্থানে স্থায়ীভাবে অবস্থান নেয় এবং আর বিভাজিত হয় না তখন তাকে স্থায়ী টিসু্য বলে। এ টিসু্যর কোষগুলো পূর্ণভাবে বিকশিত এবং সঠিক আকার-আকৃতিবিশিষ্ট।
স্থায়ী টিসু্যর বৈশিষ্ট্য :
১. স্থায়ী টিসু্যর কোষগুলোর প্রাচীর অপেক্ষাকৃত স্কুল ও বেশ পুরু।
২. এই কোষের নিউক্লিয়াস স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট এবং সেটি কোষের একপাশে অবস্থান করে।
৩. কোষ গহ্বর অপেক্ষাকৃত বড়।
৪. স্থায়ী টিসু্যর কোষপ্রাচীরে নানা নকশা দেখা যায়।
স্থায়ী টিসু্যর কাজ :
পরিবহণ ও পরিচলনে অংশগ্রহণ করাই স্থায়ী টিসু্যর প্রধান কাজ। স্থায়ী টিসু্যকে আবার সরল ও জটিল এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
সরলটিসু্য
কিছু স্থায়ী টিসু্যর প্রতিটি কোষের আকার, গঠন এবং আকৃতি একরকম, এগুলো সরল টিসু্য নামে পরিচিত তিন ধরনের সরল টিসু্য রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে :
(ক) প্যারেনকাইমা টিসু্য : উদ্ভিদদেহের সব অংশে এই কোষগুলো পাওয়া যায়। এই টিসু্যর কোষগুলো জীবিত, পাতলা প্রাচীরযুক্ত এবং প্রোটোপস্নাজম দিয়ে পূর্ণ। এই টিসু্যতে আস্তঃকোষীয় ফাঁক থাকে। কোষপ্রাচীর পাতলা এবং সেলুলোজ দিয়ে তৈরি। প্যারেনকাইমা টিসু্যর প্রধান কাজ দেহ গঠন, খাদ্য প্রস্তুত, খাদ্য সঞ্চয় এবং পরিবহণ করা।
(খ) কোলেনকাইমা টিসু্য : এগুলো বিশেষ ধরনের প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে তৈরি। এ টিসু্যর কোষগুলোও সজীব, প্রোটোপস্নাজমপূর্ণ এবং লম্বাটে হয়। কোষপ্রাচীরে সেলুলোজ এবং পেকটিন নামক শর্করা থাকার কারণে কোলেনকাইমা টিসু্যর কোষপ্রাচীরগুলো পুরু হয়। এই টিসু্য উদ্ভিদদেহকে দৃঢ়তা এবং স্থিতিস্থাপকতা প্রদান করা এদের প্রধান করে যে কারণে উদ্ভিদের কান্ড না ভেঙে বাঁকা হতে পারে।
(গ) স্েক্লরেনকাইমা টিসু্য : এ টিসু্যর কোষগুলো শক্ত, অনেক লম্বা এবং পুরু প্রাচীরবিশিষ্ট হয়। সেক্লরেনকাইমা টিসু্য প্রোটোপস্নাজমবিহীন। প্রাথমিক অবস্থায় কোষগুলোতে প্রোটোপস্নাজম উপস্থিত থাকলেও খুব তাড়াতাড়ি সেগুলো নষ্ট হয়ে মৃত কোষে পরিণত হয়। এই টিসু্য লিগনিন নামক এক ধরনের জৈব পলিমারযুক্ত এবং যান্ত্রিক কাজের জন্য গঠিত। এই কোষ উদ্ভিদদেহে দৃঢ়তা প্রদান করে থাকে।
জটিল টিসু্য
কিছু কিছু স্থায়ী টিসু্য একাধিক প্রকার কোষ দিয়ে গঠিত হয় এবং সম্মিলিতভাবে একই রকম কাজ করে থাকে? এদেরকে জটিল টিসু্য বলা হয়। এরা উদ্ভিদে পরিবহণের কাজ করে বলে এদের পরিবহণ টিসু্যও বলা হয়। এ টিসু্য দুই ধরনের (ক) জাইলেম এবং (খ) ফ্লোয়েম। জাইলেম এবং ফ্লোয়েম একত্রে উদ্ভিদের পরিবহণ টিসু্যগুচ্ছ (াধংপঁষধৎ নঁহফষব) গঠন করে।
(ক) জাইলেম টিসু্য (ীুষবস) :
উদ্ভিদের দৃঢ়তা প্রদানকারী টিসু্যর মধ্যে অন্যতম হলো জাইলেম টিসু্য। জাইলেম টিসু মূল থেকে উদ্ভিদের কান্ড দিয়ে উপরে পাতায় পানি অন্যান্য খনিজ লবণ সরবরাহ করে থাকে।
(খ) ফ্লোয়েম টিসু্য (ঢ়যষড়বস) :
উদ্ভিদ কান্ডে এরা জাইলেমের সাথে একত্রে পরিবহণ টিসু্যগুচ্ছ তৈরি করে। জাইলেম যেমন খাদ্য প্রস্তুতের কাঁচামাল ও পানি সরবরাহ করে, তেমনি ফ্লোয়েম পাতায় প্রস্তুত খাদ্য উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন স্থানে পরিবহণ করে।
জাইলেম এবং ফ্লোয়েমের মধ্যবর্তী টিসু্যকে ক্যাম্বিয়াম (ঈধসনরঁস) বলে, এই টিসু্য ভাজক টিসু্য হিসেবে নতুন জাইলেম এবং ফ্লোয়েম টিসু্য তৈরি করে উদ্ভিদের কান্ড বৃদ্ধির কাজে সহায়তা করে থাকে।?
উদ্ভিদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও তাদের কাজের গুরুত্ব
উদ্ভিদের প্রধান গাঠনিক অঙ্গ হচ্ছে মূল, কান্ড ও পাতা যা বিভিন্ন টিসু্যর সমন্বয়ে তৈরি। উদ্ভিদের মূল ও কান্ড কেন প্রয়োজন? উঁচু দালানে এক ধরনের নলের মাঝ দিয়ে পানি যেরকম দালানের বিভিন্ন তলার নানা অংশে পরিবাহিত হয়, ঠিক সেভাবে উদ্ভিদের জৈবিক কাজ সম্পাদনের জন্য এর বিভিন্ন উপাদান উদ্ভিদের মাঝে পরিবহণের প্রয়োজন হয়।
যে সকল উদ্ভিদে ঠিক এরকম পরিবহণ করার টিসু্য আছে তাদেরকে সংবাহী (াধংপঁষধৎ) উদ্ভিদ বলে। এসব গাছ মূলের সাহায্যে মাটি থেকে পানি এবং খনিজ লবণ শোষণ করে। সেই পানি কান্ডের মধ্য দিয়ে উঁচু শাখা-প্রশাখা ও অন্যান্য অঙ্গে যায়। সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে পানি ও কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে উদ্ভিদ তার সবুজ পাতায় শর্করা জাতীয় উপাদান ও অক্সিজেন তৈরি করে।
উদ্ভিদ তার উৎপাদিত খাদ্য ফল, মূল পাতা কিংবা বীজে সংরক্ষণ করে যেটি অন্য জীব তাদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। উদ্ভিদের দেহে তৈরিকৃত শর্করা শ্বসনের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন হয়, উদ্ভিদ সেই অক্সিজেন ব্যবহার করে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অক্সিজেন পরিবেশে বিমুক্ত করে দেয়, যা এই পৃথিবীকে মানুষসহ অন্য সব প্রাণীর জন্য বাসযোগ্য করে রেখেছে।
কান্ড
আমাদের চারপাশে ছোট-বড় নানান রকমের গাছ আমরা দেখতে পাই। গাছের মাটির উপরের যে অংশটি আমরা দেখতে পাই, মূলত এটিই গাছের কান্ড। গাছের বাকল সাধারণত বাদামি বা ধূসর এবং কচি ডালপালা সবুজ বর্ণের বট হয়। গাছের কান্ড একটা গাছকে ১৬ তার কাঠামো প্রদান করে এবং না! পাতা, ফুল ও ফল ধারণের মতো না গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে।
বিভিন্ন চা গাছের জন্য কিংবা গাছের বিভিন্ন ১১ অঙ্গের জন্য এই কান্ড আবার বিভিন্ন এক রকম হতে পারে। ফুলের বোঁটা হিসেবে আমরা যা দেখি সেটিও মূলত এক ধরনের নরম কান্ড। প্রাথমিকভাবে কান্ড নরম হয়ে থাকে, ডালপালা দুর্বল হয় এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে পরবর্তী সময়ে অনেক গাছের কান্ড খুব শক্ত হয় যা কাঠ হিসেবে ব্যবহার উপযোগী। এদের বাইরে পুরু বাকল থাকে। কান্ড গাছকে একটি নির্দিষ্ট আকৃতি ও কাঠামো দেয়, সুরক্ষা প্রদান করে।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়