অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ
প্রকাশ | ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
হাবিবুর রহমান বাপ্পা, সহকারী শিক্ষক, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
চতুর্থ অধ্যায়
মাইটোসিসকোষ বিভাজনের ধাপসমূহ
মাইটোসিস কোষ বিভাজন একটি ধারাবাহিক পদ্ধতি। এই বিভাজন সাধারণত কয়েকটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়ে থাকে। মাইটোসিস প্রক্রিয়ার ধাপগুলো হচ্ছে :
(ক) প্রোফেজ : মাইটোসিসের প্রথম ধাপ হলো প্রোফেজ, এই ধাপে কোষের নিউক্লিয়াস আকারে বড় হয়, এই ধাপের শুরুতে কোষের প্রতিটি ক্রোমোজোমের সঙ্গে তার প্রতিলিপি সেন্ট্রোমিয়ারে যুক্ত থাকে এবং যেগুলোকে ক্রোমাটিড বলা হয়।
এই পর্যায়ে নিউক্লিয়াসের দুই মেরুতে তন্তুযুক্ত স্পিন্ডল যন্ত্র (ঝঢ়রহফষব ধঢ়ঢ়ধৎধঃঁং) গঠিত হতে শুরু করে। এদিকে নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে ক্রোমাটিডগুলো ক্রমাগত স্প্রিংয়ের ন্যায় কুন্ডলিত হয়ে খাটো ও মোটা হতে থাকে। এই পর্যাযয়ে নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ক্রমাগত বিলুপ্ত হতে থাকে।
(খ) মেটাফেজ : এ পর্যাযয়ে নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে নির্মিত দুই মেরুবিশিষ্ট তন্তুযুক্ত স্পিন্ডল যন্ত্রের ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় (বিষুবীয় অঞ্চলে) ক্রোমোজমগুলো বিন্যস্ত হয়। প্রতিটি ক্রোমোজমের সেন্ট্রোমিয়ার বিষুবীয় অঞ্চলে এবং ক্রোমাটিড বাহু দুটি মেরুমুখী হয়ে অবস্থান করে।
এ পর্যায়েই ক্রোমোজমগুলোকে সবচেয়ে খাটো ও মোটা দেখায়। এ পর্যায়ের শেষদিকে সেন্ট্রোমিয়ার বিভাজন ঘটে দুটি অপত্য সেন্ট্রোমিয়ার সৃষ্টি হয় এবং নিউক্লিয়ার মেমব্রেন সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
(গ) অ্যানাফেজ : কোষ বিভাজনের এ পর্যায়ে প্রতিটি ক্রোমোজমের সেন্ট্রোমিয়ার বিভক্ত হওয়ার ফলে ক্রোমাটিড দুটি আলাদা হয়ে পড়ে। ক্রোমাটিড দুইটিকে অপত্য ক্রোমোজম বলে এবং দুটিতেই একটি করে সেন্ট্রোমিয়ার সংযুক্ত থাকে। অপত্য ক্রোমোজম দুটি কোষের মধ্যবর্তী বা বিষুবীয় অঞ্চল থেকে বিপরীত মেরুর দিকে যেতে থাকে।
মেরুর দিকে যাওয়ার সময় অপত্য ক্রোমোজমের সেস্ট্রোমিয়ার অগ্রগামী থাকে এবং ক্রোমাটিড বাহুগুলো তাদের পেছন দিকে থাকে। এ পর্যায়ে স্পিন্ডল তন্তু প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। অপত্য ক্রোমোজমগুলো মেরুর কাছাকাছি পৌঁছালেই এ পর্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।
(ঘ) টেলোফেজ : মাইটোসিস কোষ বিভাজনের শেষ পর্যায় হলো টেলোফেজ। এই পর্যায়ে অপত্য ক্রোমোজমগুলো বিপরীত মেরুতে এসে পৌঁছায়। ক্রোমোজমগুলো ধীরে ধীরে আবার সরু ও লম্বা আকার ধারণ করে। নিউক্লিওলাস এবং নিউক্লিয়ার মেমব্রেনের পুনরাবির্ভাব ঘটে, যার ফলে দুই মেরুতে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। স্পিন্ডল যন্ত্রের কাঠামো ধীরে ধীরে অদৃশ্য হতে থাকে এবং সবশেষে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
(ঙ) সাইটোকাইনেসিস : যে প্রক্রিয়ায় বিভাজনরত কোষের সাইটোপস্নাজম দুভাগে বিভক্ত হয় তাকে সাইটোকাইনেসিস বলে। এই পর্যায়ে নিউক্লিয়াসের বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গে কোষের মধ্যবর্তী অংশে নিউক্লিয়ার মেমব্রেনের উভয় পাশ থেকে দুটি খাঁজ সৃষ্টি হয়। এ খাঁজ ক্রমান্বয়ে গভীর হয়ে মিলিত হয়ে দু'টি কোষে বিভক্ত হয়। সাইটোপস্নাজমিক অঙ্গাণুসমূহের সমবণ্টন ঘটার ফলে দুটি পরিপূর্ণ অপত্য কোষ (ফধঁমযঃবৎ পবষষ) সৃষ্টি হয়।
মাইটোসিস কোষ বিভাজনের নিয়ন্ত্রণ
মাইটোসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি এভাবে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। মাইটোসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়াটি জীবের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রভাবক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। জীবের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় অবস্থায় বিভিন্ন প্রভাবকের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির কারণে কোষের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনের ফলে টিউমার সৃষ্টি হয় যা পরবর্তীকালে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন রোগজীবাণু, রাসায়নিক পদার্থ কিংবা তেজস্ক্রিয়তা ইত্যাদি অনিয়ন্ত্রিত মাইটোসিস কোষ বিভাজনে বাহ্যিক প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। যকৃত, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, স্তন, ত্বক, কোলন এরকম প্রাণিদেহের প্রায় সকল অঙ্গে ক্যান্সার হতে পারে।
পঞ্চম অধ্যায়
জীবদেহের গাঠনিক একক হচ্ছে কোষ। সরল এককোষী উদ্ভিদদেহ একটি কোষ দিয়েই গঠিত হয়, এই শ্রেণির উদ্ভিদে সব ধরনের শারীরবৃত্তীয় কাজ এই একটিমাত্র কোষেই সম্পন্ন হয়। কিন্তু জটিল বহুকোষী উদ্ভিদের গঠন ও শারীরবৃত্তীয় কাজ অনেক জটিল, সেগুলো উদ্ভিদকে তার বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়।
বিভিন্ন অঙ্গের কাজও আলাদা, যেমন কোনো অঙ্গ পানি ও খনিজ উপাদান পরিবহণ করে, কোনোটি উদ্ভিদে দৃঢ়তা প্রদান করে আবার কোনোটি উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটিয়ে থাকে।
ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য কোষের আকারও ভিন্ন হয়। যেহেতু একটি কোষের পক্ষে এককভাবে সকল কাজ করা সম্ভব নয়, তাই অনেকগুলো কোষ একত্রিত হয়ে প্রয়োজনীয় শারীরতাত্ত্বিক কাজগুলো করে থাকে। যখন উদ্ভিদের কোনো কোষগুচ্ছ সম্মিলিতভাবে প্রয়োজনীয় শারীরতাত্ত্বিক কাজ সম্পাদন করে তখন তাদেরকেই টিসু্য বলে।
টিসু্য ও প্রকারভেদ
বীজ থেকে অঙ্কুরিত উদ্ভিদ ধীরে ধীরে বড় হয়। এ সময় পাতার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কান্ড বড় এবং দৃঢ় হয়, মূল তৈরি হয়। কোন ধরনের টিসু্য এই ধরনের কাজগুলো করে থাকে, তারা কি একই রকম নাকি আলাদা- আমরা এখন এই বিষয়গুলো একটু আলোচনা করব।
ভাজক টিসু্য
জীবদেহের কিছু কিছু কোষগুচ্ছে কোষের অবিরাম বিভাজনের ফলে জীবদেহের বৃদ্ধি ঘটে থাকে। যে কোষগুলো বিভাজিত হতে পারে সেগুলো হলো ভাজক কোষ। আর ভাজক কোষ দিয়ে গঠিত টিসু্যই হলো ভাজক টিসু্য।
ভাজক টিসু্যর বৈশিষ্ট্য :
১. ভাজক টিসু্যর কোষগুলো জীবিত ও অপেক্ষাকৃত ছোটো।
২. কোষের নিউক্লিয়াস তুলনামূলকভাবে বড় এবং সাইটোপস্নাজম ঘন হয়ে থাকে।
৩. টিসু্যর কোষগুলোতে সেলুলোজ দিয়ে তৈরি পাতলা কোষপ্রাচীর থাকে।
৪. ভাজক টিসু্যর কোষে সাধারণত কোষগহ্বর থাকে না।
৫. এই কোষগুলো সাধারণত আয়তাকার, ডিম্বাকার, পঞ্চভুজ বা ষড়ভুজাকার হয়।
৬. কোষগুলো ঘন সন্নিবিষ্ট হওয়ায় এদের মধ্যে আন্তঃকোষীয় ফাঁক থাকে না।
৭. কোষে কোনো প্রকার সঞ্চিত খাদ্য, ক্ষরিত বস্তু বা বর্জ্য পদার্থ থাকে না।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়