শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র

আতাউর রহমান সায়েম, সহকারী শিক্ষক, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
  ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র

বিদ্রোহী

৯. 'শির নেহারি' আমারি, নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির' ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : 'শির নেহারি' আমারি, নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির'' ু কথাটির মধ্য দিয়ে আত্মজাগরণে উন্মুখ কবির সদম্ভ আত্মপ্রকাশ ঘোষিত হয়েছে। আলোচ্য কবিতার কবি বীর ধর্মের অনুসারী। আত্মপ্রত্যয়ী বীরের চিত্র সর্বদাই সমুন্নত। সঙ্গত কারণেই কবির এই বীরসত্তা কোনো কিছুকে পরোয়া করে না : ধ্বংসের দামামা বাজিয়ে এগিয়ে যায় নতুন সৃষ্টির লক্ষ্যে। কবি মনে করেন, আত্মগৌরবে বলীয়ান তাঁর সেই সসম্ভ বিরোচিত রূপ অবলোকন করে হিমাদ্রি তথা হিমালয়ও যেন মাথা নত করে। প্রশ্নোত্ত চরণটির মধ্য দিয়ে এ বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।

১০. কবি নিজেকে পৃথিবীর অভিশাপ বলেছেন কেন?

উত্তর : সমাজে বিরাজমান অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে তাঁর বিধ্বংসী রূপ বোঝাতেই কবি নিজেকে পৃথিবীর অভিশাপ বলে উলেস্নখ করেছেন। পরাধীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ রাজশক্তি তখন জগদ্দল পাথরের মতো এদেশবাসীর ওপর চেপে বসেছে। অত্যাচারী এই শাসকগোষ্ঠীর অপশাসনে সমগ্র দেশই যেন নরকে রূপান্তরিত হয়েছে।

এদের ধ্বংস করতে হলে এক ভয়ানক রুদ্রের প্রয়োজন, যে এদের সাজানো বাগানকে তছনছ করে দিতে পারে। কবি নিজেই সেই রুদ্ররূপ ধারণ করে অত্যাচারীর জন্য মহাপ্রলয় আনতে চেয়েছেন। তিনি যেন সাক্ষাৎ অভিশাপ, যিনি অত্যাচারী ও শোষকের সাম্রাজ্যকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবেন। এমন মনোভাব থেকেই নিজেকে তিনি পৃথিবীর অভিশাপ বলেছেন।

বিদ্রোহী কবিতার কঠিন অংশের ব্যাখ্যা

১. বল বীর-

বল উন্নত মম শির!

শির নেহারি' আমারি, নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!

'নেহারি' শব্দের অর্থ- প্রত্যক্ষ করে আর 'হিমাদ্রি' হলো হিমালয়। এ অংশে কবির বীরোচিত আত্মদম্ভ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি মনে করেন, তাঁর এই উন্নত ও গর্বিত শির প্রত্যক্ষ করে হিমালয় চূড়াও মাথা নত করবে।

২. মহা-প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!

নটরাজ মহাদেব শিবের আরেক নাম। এই রূপে তিনি নৃত্যের ছন্দে সবকিছু ধ্বংস করেন। এ অংশে বিদ্রোহী কবি নিজেকে প্রলয় সৃষ্টিকারী দেবতা শিবের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

৩. আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,

আমি দ'লে যাই বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!

কবির বিদ্রোহ পরাধীনতা, অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে। আর তাই অসাম্য সৃষ্টিকারী সকল আইন বা নিয়ম-কানুন-শৃঙ্খলের বেড়াজালকে তিনি অতিক্রম করে চলেন।

৪. আমি ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর!

জটাধারী শিবের অপর নাম ধূর্জটি আর এলোকেশ হলো যার কেশ বা চুল এলানো। এখানে এলানো চুলের সাথে অকাল বৈশাখীর ঝড়ের তুলনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় চরণটিতে উলেস্নখিত 'সুত' শব্দের অর্থ পুত্র। কবি এখানে নিজেকে বিশ্ববিধাতার বিদ্রোহী পুত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন।

৫. মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ- তূর্য;

'তূর্য' হলো- প্রাচীন রণবাদ্য বিশেষ। এখানে 'বাঁকা বাঁশের বাঁশরী' কবির প্রেম ও সাম্যবাদী মনোভাবের ইঙ্গিতবহ আর 'রণ-তৃষ' তাঁর বিদ্রোহী সত্তার। অর্থাৎ কবি এখানে একইসঙ্গে প্রেম ও দ্রোহের প্রতিমূর্তি।

৬. আমি ইস্রাফিলের শিঙার মহা হুঙ্কার,

ইস্রাফিল হলেন পবিত্র কোরআনে উলিস্নখিত বিশিষ্ট ফেরেশতা। তাঁর শিঙার ফুঁকেই প্রলয় সংঘটিত হয়। প্রলয় সৃষ্টিকারী ফেরেশতার শিঙার প্রতীকে কবি এখানে তাঁর বিধবংসী রূপটিকে উন্মোচন করেছেন।

৭. আমি চক্র ও মহা শঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ প্রচন্ড

দেবতা বিষ্ণুর চার হাত। তাঁর এই চার হাতে থাকে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম। এখানে শঙ্খ মঙ্গলের প্রতীক। চক্র ও গদা বিধ্বংসী ক্ষমতার প্রতীক। এসকল অস্ত্র দিয়ে তিনি অপশক্তির বিনাশ ঘটিয়ে মঙ্গল প্রতিষ্ঠা করেন। আলোচ্য কবিতায় শঙ্খ ও চক্রের সঙ্গে নিজের তুলনা করে কবি শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে তাঁর দৃঢ় অবস্থানকে স্পষ্ট করেছেন।

৮. আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা, বিশ্বামিত্র-শিষ্য,

দুর্বাসা ও বিশ্বামিত্র প্রাচীন ভারতের দুই বিশিষ্ট মুনি ও ঋষি। ঋষি বিশ্বামিত্রের শিষ্য দুর্বাসা ছিলেন প্রচন্ড রাগী। আলোচ্য কবিতায় দুর্বাসার সঙ্গে নিজের তুলনা করে কবি অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের ক্রোধের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন।

৯. আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার

নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!

হিন্দু পুরাণের এক বিশিষ্ট চরিত্র পরশুরাম। তিনি বহুবার তাঁর কুঠার দিয়ে অত্যাচারী ক্ষত্রিয় রাজাদের ধ্বংস করেন। আলোচ্য অংশে পরশুরামের প্রতীকে অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে কবি তাঁর ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।

১০. আমি হল বলরাম-স্কন্ধে

আমি উপাড়ি ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে।

'হল' শব্দের অর্থ লাঙল। মহাভারতের অন্যতম চরিত্র বলরাম তাঁর হল বা লাঙলের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। এই লাঙল ছিল বিধ্বংসী ক্ষমতার অধিকারী। এ কবিতায় বলরামের হলের সঙ্গে নিজের তুলনা করে কবি অন্যায়ের ধ্বংস কামনা করেছেন। অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটিয়েই বৈষম্যমুক্ত নতুন পৃথিবী গড়তে চান তিনি।

জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন: কাজী নজরুল ইসলাম কত খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রশ্ন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় কখন?

উত্তর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয়।

প্রশ্ন: কাজী নজরুল ইসলাম কত নম্বর বাঙালি পল্টনে সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনে সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন।

প্রশ্ন: কখন বাঙালি পল্টন ভেঙে দেওয়া হয়?

উত্তর: ১৯২০ সালের শুরুতে বাঙালি পল্টন ভেঙে দেওয়া হয়।

প্রশ্ন: 'বিদ্রোহী' কবিতাটি সর্বপ্রথম কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?

উত্তর: 'বিদ্রোহী' কবিতাটি সর্বপ্রথম সাপ্তাহিক 'বিজলী' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

প্রশ্ন: কত খ্রিষ্টাব্দে কাজী নজরুল ইসলাম 'পদ্মভূষণ' উপাধিতে ভূষিত হন?

উত্তর: ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে কাজী নজরুল ইসলাম 'পদ্মভূষণ' উপাধিতে ভূষিত হন।

প্রশ্ন: কবি নিজেকে কীসের অভিশাপ হিসেবে ঘোষণা করেছেন?

উত্তর: কবি নিজেকে পৃথিবীর অভিশাপ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

প্রশ্ন: কবি কী মানেন না?

উত্তর: কবি কোনো আইন মানেন না।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে