অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ

প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

হাবিবুর রহমান বাপ্পা, সহকারী শিক্ষক, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
চতুর্থ অধ্যায় কোষ হলো জীবদেহের গঠনগত একক। জীবদেহ ব্যাকটেরিয়া, অ্যামিবা, পস্নাজমিডিয়াম এগুলোর মতো এককোষী হতে পারে। আবার মানুষ, বটগাছ, তিমি এগুলোর মতো বহুকোষী হতে পারে। এককোষী জীব ছাড়া অন্য সকল জীবদেহ অসংখ্য কোষ দিয়ে তৈরি হয়। প্রতিটি জীব কোষ বিভাজনের মাধ্যমে তাদের বংশবৃদ্ধি ও কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি করে থাকে। যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় একটি থেকে একাধিক কোষ তৈরি হয় তাকে কোষ বিভাজন বলে। কোষ বিভাজন একটি স্বাভাবিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। কোষ বিভাজনের মাধ্যমে একটি কোষ বিভাজিত হয়ে অসংখ্য কোষ তৈরির মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবে পরিণত হয়। আদি এককোষী জীব সাধারণত যে প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয় তাকে অ্যামাইটোসিস বলা হয়। বহুকোষী জীব যে দুটি প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয় সেগুলো হচ্ছে মাইটোসিস এবং মিয়োসিস। কোষ বিভাজনের গুরুত্ব জীবদেহের দৈহিক বৃদ্ধি, জনন ও পরিস্ফুটনের জন্য কোষ বিভাজন প্রয়োজন। সকল প্রকার কোষ তার পূর্ববর্তী কোষ থেকে বিভাজনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। জীবদেহ আঘাতপ্রাপ্ত হলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা সারিয়ে নিতেও কোষ বিভাজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবার জননকোষে কোষ বিভাজন জীবদেহের বংশবৃদ্ধির জন্য অন্যতম মাধ্যম। এর মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অপত্য (নতুন) কোষ তৈরি হয়, যা জীবের অভিযোজন, অভিব্যক্তি ও বংশপরম্পরা অব্যাহত রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কোষের গঠন যে কোষ ঝিলিস্ন দিয়ে তৈরি আবৃত কোষের মূল দুটি উপাদান হচ্ছে সাইটোপস্নাজম ও নিউক্লিয়াস। কোষের কেন্দ্রে ঘন অস্বচ্ছ অঙ্গাণুটি হচ্ছে নিউক্লিয়াস এবং নিউক্লিয়াসের বাইরে অবস্থিত এবং কোষ ঝিলিস্ন দিয়ে আবৃত বাকি অংশটি সাইটোপস্নাজম। নিউক্লিয়াসটি নিউক্লিয়ার ঝিলিস্ন দিয়ে আবৃত থাকে এবং তার ভেতরে রয়েছে জীবের বংশগতি পদার্থ ডিএনএ দিয়ে তৈরি ক্রোমোজোম। সাধারণ অবস্থায় দীর্ঘ ক্রোমোজোম হিস্টোন নামে প্রোটিন কণার উপর পেঁচিয়ে ক্রোমাটিন হিসেবে উন্মুক্ত জালিকার মতো থাকে বলে এটি আলাদাভাবে বোঝা যায় না। শুধু কোষ বিভাজনের সময় এটি কুন্ডলী পাকিয়ে সংকুচিত হয় বলে তখন এটি দৃশ্যমান হয়। এককোষী জীবদেহের কোষ বিভাজন: অ্যামাইটোসিস (ধসরঃড়ংরং) এককোষী আদিকোষী জীবগুলো সরাসরি বিভাজনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে থাকে, এই প্রক্রিয়াটি অ্যামাইটোসিস বা বাইনারি ফিশান নামে পরিচিত অ্যামিবা, ব্যাকটেরিয়া কিংবা নীলাভ সবুজ শৈবাল জাতীয় আদিকোষী জীবে এ ধরনের কোষ বিভাজন দেখা যায়। এককোষী জীবের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য এ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত কার্যকর, বিভাজনের জন্য কোষের বিশেষ কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না এবং এই পদ্ধতিতে দ্রম্নত কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অ্যামাইটোসিস ধরনের কোষ বিভাজনে কোষটি পরিপক্ব হলে প্রথমে নিউক্লিয়াসের ভেতর ক্রোমোজমের ডিএনএ'র প্রতিলিপন হয়। কোষের নিউক্লিয়াসটির আকৃতি পরিবর্তন হয়ে ডাম্বেলের আকৃতি ধারণ করে এবং প্রায় মাঝ বরাবর সংকুচিত হতে শুরু করে। সংকোচন শেষে মাতৃকোষের মূল দীর্ঘাকৃতির নিউক্লিয়াসটি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়ায় বিভাজিত দুইটি নিউক্লিয়াসে ডিএনএ সুনির্দিষ্ট এবং সমানভাবে বিভক্ত হওয়া পুরোপুরি নিশ্চিত নয়, কাজেই দুটি ভিন্ন হতে পারে। নিউক্লিয়াসের সঙ্গে সঙ্গে সাইটোপস্নাজমও মাঝ বরাবর সংকুচিত হতে হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটি কোষে পরিণত হয়। এ ধরনের 'বিভাজনে মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপস্নাজম সরাসরি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষ তৈরি করে, তাই একে প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলে। বহুকোষী জীবদেহের কোষ বিভাজন আমরা বহুকোষী প্রাণী। আমাদের শরীরে রয়েছে প্রায় এক ট্রিলিয়ন কোষ। আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের কোষ রয়েছে, যেমন- রক্তের কোষ, পেশি কোষ, ত্বকের কোষ, পাকস্থলীর কোষ ইত্যাদি। প্রতিটি ভিন্ন ধরনের কোষের নিজস্ব গঠন এবং কাজ রয়েছে। এইসব কোষ এসেছে স্টেম সেল বা স্টেম কোষ নামক এক বিশেষ ধরনের কোষ থেকে। সকল প্রাণীর ও উদ্ভিদের স্টেম কোষ প্রয়োজন। সম্পূর্ণরূপে বিকশিত না হওয়া প্রাণীকে ভ্রূণ বলে, ভ্রূণে স্টেম কোষগুলো বিভিন্ন ধরনের কোষে বিকশিত হতে পারে। সমস্ত স্টেম কোষের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে: স্টেম কোষ বিভক্ত হয়ে আরও স্টেম কোষ তৈরি করে। স্টেম কোষের বিভিন্ন ধরনের কোষে বিকশিত হওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে। একটি স্টেম কোষ দুটি অপত্য কোষে বিভক্ত হয়, প্রতিটি অপত্য কোষ হুবহু মূল কোষের মতো। পরিপক্ক হলে, এই কোষগুলোও বিভাজিত হয়। এভাবেই ভ্রূণে স্টেম কোষের সরবরাহ নিশ্চিত হয়। একটি ক্রমবর্ধমান ভ্রূণ এবং তার অঙ্গগুলোর বিকাশের জন্য প্রচুর স্টেম সেল প্রয়োজন গবেষণাগারে, কয়েকটি স্টেম সেল দিয়ে শুরু করে, কয়েক মাসের মধ্যে বিজ্ঞানীরা লক্ষ লক্ষ কোষ তৈরি করতে সক্ষম করেছেন। কীভাবে স্টেম কোষ অন্য ধরনের কোষে পরিবর্তিত হয় বিজ্ঞানীরা এই সমস্যা নিয়ে গবেষণা করছেন। বহুকোষী জীবদেহের কোষ বিভাজন বহুকোষী জীবদেহের দেহকোষ যে প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয় তাকে মাইটোসিস বলে। আবার যৌন 'জননকারী জীবের জনন মাতৃকোষ যে প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয় তাকে মিযয়োসিস বলে। উদ্ভিদদেহের মূল ও কান্ডের অগ্রভাগ, ভ্রণমুকুল, ভ্রণমূল ও পাতা ইত্যাদি বর্ধনশীল অঞ্চলের টিসু্যতে মাইটোসিস ঘটে, আবার সপুষ্পক উদ্ভিদের পরাগধানী ও ডিম্বকে মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় কোষ বিভাজিত হয়। মাইটোসিস বহুকোষী জীবদেহ গঠনের জন্য একটি মাতৃকোষ থেকে দুটি অপত্য কোষ তৈরির প্রক্রিয়াকে মাইটোসিস বলে। এ প্রক্রিয়ায় কোষের ভেতরের সাইটোপস্নাজম, নিউক্লিয়াস ও ক্রোমোজম উভয়ই সমানভাবে বিভক্ত হয় এবং ক্রোমোজমের সংখ্যা ও গুণাগুণ মাতৃকোষের অনুরূপ হয়। অর্থাৎ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি বিভাজন ক্ষমতাসম্পন্ন দেহকোষ বিভাজিত হয়ে হুবহু মাতৃকোষের অনুরূপ দুটি অপত্য কোষ তৈরি করে। এই বিভাজন প্রকৃত নিউক্লিয়াসযুক্ত জীবের দেহকোষে হয়ে থাকে এবং বিভাজনের ফলে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণী ও উদ্ভিদ দৈর্ঘ্যে এবং প্রস্থে বৃদ্ধি পায়। আদি-এককোষী জীবে মাইটোসিস হয় না। এ ছাড়া বহুকোষী জীবের জনন মাতৃকোষ, প্রাণীর স্নায়ুকোষ, স্তন্যপায়ী প্রাণীর পরিণত লোহিত রক্তকণিকা, অণুচক্রিকা এবং উদ্ভিদের স্থায়ী টিসু্যর কোষে মাইটোসিস বিভাজন দেখা যায় না। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়