শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান

রোমানা হাবিব চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, ব্রাইট ফোর টিউটোরিয়াল হোম, চট্টগ্রাম
  ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান

তৃতীয় অধ্যায়

৩. জীবের কেন পানি প্রয়োজন?

উত্তর : পানি ছাড়া জীব বাঁচতে পারে না। উদ্ভিদের দেহের প্রায় ৯০ ভাগ পানি। উদ্ভিদ খাদ্য তৈরিতেও পানি ব্যবহার করে। মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ ও বিভিন্ন অংশে পরিবহণের জন্য উদ্ভিদের পানি প্রয়োজন।

বেঁচে থাকার জন্য প্রাণীদেরও পানি প্রয়োজন। মানবদেহের ৬০-৭০ ভাগ পানি। অধিকাংশ প্রাণী পানি পান না করে অল্প কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারে। আমরা যখন খাদ্য গ্রহণ করি তখন সেই পানি খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। পুষ্টি উপাদান শোষণ ও দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গে পরিবহণের জন্য পানি প্রয়োজন। পানি আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৪. বাতাসে পানি আছে তা আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি?

উত্তর : বায়ুতে যে সবসময় কিছু পানি জলীয়বাষ্প অবস্থায় থাকে তা নিচের পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করা যায় :

একটি কাচের গস্নাসে কয়েক টুকরা বরফ নিই। কিছুক্ষণ রেখে দেখা গেল গস্নাসের বাইরের গায়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি জমেছে। গস্নাসের ভেতর থেকে পানি অবশ্যই বাইরে আসতে পারে না। তাই গস্নাসের বাইরের ফোঁটা ফোঁটা পানি গস্নাসের বরফ থেকে আসেনি।

বরফের ঠান্ডার কারণে গস্নাসটি ঠান্ডা হয়েছে। আর সে ঠান্ডার সংস্পর্শে বায়ুর জলীয়বাষ্প পানিকণায় পরিণত হয়ে গস্নাসের বাইরের গায়ে জমা হয়েছে। এ পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হয়, বায়ুতে সবসময়ই জলীয়বাষ্প তথা পানি থাকে।

৫. পুকুরের পানি থেকে আমরা কীভাবে নিরাপদ পানি পেতে পারি?

উত্তর : পুকুরের পানিকে ফুটিয়ে অথবা রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিরাপদ পানিতে পরিণত করা যায়। প্রথমে এ পানিকে ছাঁকন বা থিতানোর মাধ্যমে পরিষ্কার করে নিতে হয়। নিচে প্রক্রিয়াগুলো ব্যাখ্যা করা হলো-

ছাঁকন : পাতলা কাপড় বা ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে পানি পরিষ্কার করার প্রক্রিয়াই হলো ছাঁকন।

থিতানো : একটি কলসি বা পাত্রে পুকুরের পানি নিয়ে রেখে দিলে। কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে পাত্রের তলায় তলানি জমেছে। ওপরের অংশের পানি পরিষ্কার হয়েছে। পানিতে থাকা ময়লা যেমন : বালি, কাদা ইত্যাদি সরানোর এই প্রক্রিয়াই হলো থিতানো।

ফুটানো : পানি জীবাণুমুক্ত করার একটি ভালো উপায় হলো ফুটানো। জীবাণুমুক্ত নিরাপদ পানির জন্য ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে পানি ফোটাতে হবে।

রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধকরণ : এ ক্ষেত্রে ফিটকিরি, বিস্নচিং পাউডার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ইত্যাদি পরিমাণমতো মিশিয়ে আমরা পানি নিরাপদ করতে পারি।

৬. ঠান্ডা পানির গস্নাসের গায়ে লেগে থাকা পানির কণা এবং শিশির কেন একই রকম?

উত্তর : রাতে ঘাস, গাছপালা ইত্যাদির ওপর যে বিন্দু বিন্দু পানি জমে তাকে শিশির বলে। বায়ু যখন ঠান্ডা কোনো বস্তুর সংস্পর্শে আসে, তখন বায়ুতে থাকা জলীয়বাষ্প ঠান্ডা হয়ে পানির ফোঁটা হিসেবে জমা হয়। কাচের গস্নাসে বরফের টুকরা রাখলে গস্নাসটি ঠান্ডা হয়ে যায়। বাতাসের জলীয়বাষ্প ঠান্ডা গস্নাসের সংস্পর্শে এসে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে পানির কণায় পরিণত হয় এবং গস্নাসের বাইরের গায়ে তা বিন্দু বিন্দু পানি হিসেবে জমা হয়। গস্নাসের বাইরের গায়ে লেগে থাকা পানির কণা এবং শিশির একই রকম। কারণ উভয়ের মূল গঠন উপাদান পানি। বাতাসের জলীয় বাষ্প, গস্নাসের গায়ে লেগে থাকা পানি ও শিশির- পানির বিভিন্ন রূপ ছাড়া কিছুই নয়।

প্রশ্ন : পানিদূষণ কাকে বলে? পানিদূষণ প্রতিরোধের উপায়গুলো লেখ।

উত্তর : যেসব কারণে পানি পান করা ও অন্যান্য কাজে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়, তাকে পানিদূষণ বলে।

পানিদূষণ প্রতিরোধের উপায়গুলো হলো-

১. কৃষিতে কীটনাশক এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো;

২. রান্নাঘরের নিষ্কাশন নালায় ও টয়লেটে রাসায়নিক বর্জ্য এবং তেল না ফেলা;

৩. পুকুর, নদী, হ্রদ কিংবা সাগরে ময়লা-আবর্জনা না ফেলা;

৪. সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা ময়লা এবং হ্রদ কিংবা নদীতে ভাসমান ময়লা-আবর্জনা কুড়িয়ে পানিদূষণ রোধ কর।

প্রশ্ন : বরফ কীভাবে পানিতে পরিণত হয়? দুধ কেন তরল পদার্থ? তিনটি কারণ লেখ। কোনো কিছু দিয়ে না মুছে বোতলের ভেতরে লেগে থাকা পানি দূর করার ১টি উপায় লেখ?

উত্তর : বরফকে তাপ দেওয়ার কারণে অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে তা পানিতে পরিণত হয়। দুধ তরল পদার্থ কারণ :

র. দুধের তরল অবস্থায় আকার ঠিক থাকে না কিন্তু আয়তন ঠিক থাকে।

রর. দুধ তরল পদার্থ কারণ তাপ দিলে এমন অবস্থায় আনা যায় যাতে অণুগুলোর মধ্যে কোনো বন্ধন থাকে না।

ররর. এরা জায়গা দখল করে কিন্তু তা নির্দিষ্ট থাকে না।

কোনো কিছু দিয়ে না মুছে বোতলের ভেতরে লেগে থাকা পানি তাপ দিয়ে দূর করা যায়।

প্রশ্ন : পানিদূষণ বলতে কী বোঝায়? পানিদূষণের দুটি কারণ লেখ। খাবার পানি কীভাবে বিশুদ্ধ করবে সে সম্পর্কে দুটি বাক্য লেখ।

উত্তর : পানিদূষণ : যেসব কারণে পানি পান করা ও অন্য ব্যবহার অনুপযোগী হয়, তাকে পানিদূষণ বলে।

পানিদূষণের দুটি কারণ নিচে উলেস্নখ করা হলো-

১. পুকুর বা নদীর পানিতে বাসন-কোসন মাজা, গোসল করা, ময়লা কাপড় কাচা, গরু-মহিষ গোসল করানো, পাট পচানো, পায়খানা-প্রস্রাব করা, প্রাণীর মৃতদেহ ফেলা প্রভৃতি কারণে নদীনালা, খাল-বিল ও পুকুরের পানি দূষিত হয়।

২. কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, পানিতে ফেললে পানি দূষিত হয়। কারণ এই বর্জ্য পদার্থে ক্ষতিকর পদার্থ মিশে থাকে।

খাবার পানি যেভাবে বিশুদ্ধ করব তা নিচে উলেস্নখ করা হলো-

১. ময়লাযুক্ত পানিকে ছাঁকন বা থিতানোর মাধ্যমে পরিষ্কার করে ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করব।

২. বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসের সময় ফিটকিরি, বিস্নচিং পাউডার বা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মিশিয়ে পানি বিশুদ্ধ করব।

প্রশ্ন : পানিদূষণ রোধে তোমার প্রতিবেশীদের জন্য পাঁচটি পরামর্শ উলেস্নখ কর।

উত্তর : পানিদূষণ রোধে আমার প্রতিবেশীদের জন্য পাঁচটি পরামর্শ উলেস্নখ করা হলো-

১. গৃহস্থালি ও খাদ্যের আবর্জনা, বর্জ্য পদার্থ পানিকে দূষিত করে। তাই এসব ময়লা-আবর্জনা রান্না ঘরের নিষ্কাশন নালায় না ফেলে ডাস্টবিনে বা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে