শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ

হাবিবুর রহমান বাপ্পা, সহকারী শিক্ষক, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
  ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ

দ্বিতীয় অধ্যায়

বিভবশক্তি (চড়ঃবহঃরধষ ঊহবৎমু)

কোনো একটা বস্তুকে তুমি যদি একটা টেবিলের ওপর তুলে রাখতে চাও তবে তোমাকে সেটাকে টেনে উপরে তুলতে হবে, অর্থাৎ বস্তুটির ওপর বল প্রয়োগ করে সেটিকে টেবিলের উপরে তুলতে হবে। আমরা কাজের সংজ্ঞা থেকে জানি ওপরের দিকে বল প্রয়োগ করে একটা বস্তুকে যখন ওপরে নেওয়া হয় তখন সেখানে কাজ করা হয়।

এই বস্তুটাকে টেবিলের উপর তোলার পর তুমি যদি সেটাকে কিনারায় এনে ছেড়ে দাও তখন বস্তুটি নিজ থেকেই নিচে পড়ে যাবে, সেটিকে টেনে নামাতে হবে না। বস্তুটা যদি একটা স্প্রিংয়ের ওপর পড়ে তাহলে স্প্রিংটা চেপে ছোট হয়ে যাবে, একটু আগেই আমরা জেনেছি, স্প্রিং ছোট করতে (কিংবা লম্বা করতে) বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করে কাজ করতে হয়। অর্থাৎ, উপর থেকে নিচে পড়ার সময় সময় বস্তুটির মাঝে কাজ করার মতো একটি সক্ষমতা বা শক্তি সৃষ্টি হয়েছে।

এই শক্তি কোথা থেকে এসেছে? শুরুতে বস্তুটার উপর 'কাজ করে' যখন উপরে তোলা হয়েছিল, তখন এ কাজটুকুই বস্তুটিতে শক্তি হিসেবে জমা হয়েছে। বস্তুটিকে টেবিলের কিনারায় এনে ছেড়ে দিলে সেটি অভিকর্ষ বলের কারণে নিচে এসে পড়বে। তোমরা জান অভিকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ বলের উৎস হলো পৃথিবী, সেটি সবকিছুকে নিচের দিকে আকর্ষণ করে।

তাহলে, আমরা কিছু কিছু উদাহরণ থেকে জানতে পারলাম যে, বিশেষ বিশেষ বস্তুর ওপরে বল প্রয়োগ করে কাজ করলে, সেই কাজটুকু শক্তি হিসেবে জমিয়ে রাখা যায়। বিজ্ঞানের ভাষায় এই শক্তির সাধারণ নাম 'বিভবশক্তি'। স্প্রিঙের ক্ষেত্রে এই শক্তি এসেছে বস্তুর 'স্থিতিস্থাপক' ধর্মের বিরুদ্ধে করা কাজ থেকে তাই এর নাম 'স্থিতিস্থাপক বিভব শক্তি'। আবার, টেবিলে উঠিয়ে রাখা বস্তুর মাঝে শক্তি এসেছে 'অভিকর্ষ' বলের বিরুদ্ধে করা কাজ থেকে ? তাই এর নাম 'অভিকর্ষজ বিভব শক্তি'।

আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কোনো কিছুকে উপরে তোলা হলে তার মাঝে বিভবশক্তি জমা হয়, কিন্তু কতটুকু বিভবশক্তি জমা হয় সেটি কি বের করা সম্ভব? সেটা খুব কঠিন নয়, বস্তুটার উপরে যেটুকু কাজ করা হয় সেই কাজটুকুই বিভব শক্তি হিসেবে জমা হয়ে যায়। কাজের পরিমাপ কীভাবে করতে হয় এখন সেটাও আমরা জানি যেটুকু বল প্রয়োগ করেছি তার সঙ্গে যেটুকু উপরে তুলেছি সেই দুটো গুণ দিলেই কাজের পরিমাণ বের হয়ে যাবে।

প্রথমে বলের পরিমাণটা বের করা যাক বস্তুর ওজন আছে বলেই সবকিছু নিচে পড়তে থাকে, কাজেই বস্তুটার যেটুকু ওজন আমাদের ঠিক সেই পরিমাণ বল উপরের দিকে প্রয়োগ করা না হলে বস্তুটাকেটাকে উপরে তোলা যাবে না। আগের শ্রেণিতে ভর সম্পর্কে আলোচনা করার সমযয়ে তোমাদের বলা হয়েছিল যে বস্তুর ভরের উপর পৃথিবীর আকর্ষণটাই হচ্ছে ওজন অর্থাৎ যার ভর যত বেশি, তার ওজনও তত বেশি।

গতিশক্তি (কবরহবঃরপ ঊহবৎমু)

আমরা বল প্রয়োগ করে ইট ঠেলে সরিয়ে নেওয়ার উদাহরণে আরও একবার ফিরে যাই। কল্পনা করে নাও মেঝেতে স ভরের একটা ইট রয়েছে এবং ঋ বল প্রয়োগ করে তুমি সেটাকে বলের দিকে ঝ দূরত্বে সরিয়ে নিয়েছ। কাজেই বলতি ড = ঋঝ পরিমাণ কাজ করেছে।

কিন্তু আমরা এতক্ষণে জেনে গেছি যদি কোনো বস্তুর উপরে কাজ করা হয় তাহলে সেখানে কাজটা শক্তি হিসেবে জমা হয়ে থাকে। কিন্তু ইটটাকে ঠেলে সরিয়ে

নেওয়ার পর আমরা কিন্তু কোথাও শক্তি জমা হয়ে থাকার নিশানা দেখতে পাচ্ছি না! যদি মেঝেতে ঠেলে না নিযয়ে য উচ্চতায় তুলে নিতাম তাহলে ড কাজটা অন্তত সময পরিমাণ অভিকর্ষ জ বিভব শক্তি হিসেবে জমা হয়ে যেত।

একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে কাজটা আসলে বৃথা যায়নি, তুমি যখন ইটটাকে মেঝেতে ঘষে নিয়ে গেছ তখন ঘর্ষণের কারণে তাপ সৃষ্টি হয়েছে, হয়তো খানিকটা শব্দও তৈরি হয়েছে। কাজেই তুমি যে কাজ করেছ সেটি তাপ শক্তি কিংবা শব্দ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। শক্তির নিত্যতার কারণে সেটি কোনো না কোনো রূপে রূপান্তরিত হতেই হবে।

এবারে তুমি কল্পনা করে নাও কোনো একটি উপায়ে তুমি পুরোপুরি ঘর্ষণমুক্ত একটি মেঝে তৈরি করেছ, যে মেঝেতে একটা ইটকে ঠেলে নিতে কোনো ঘর্ষণ হয় না। এবারে তুমি যদি ঋ বল প্রয়োগ করে স ভরের ইটটাকে ঝ দূরত্বে নিয়ে যাও তাহলে তো তোমার করা কাজ কোনো তাপ কিংবা শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হবে না, তাহলে কাজ যে শক্তিটি তৈরি করবে সেটি আমরা কোথায় খুঁজে পাব?

একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে তুমি যখন বল প্রয়োগ করবে, তখন বস্তুটির ত্বরণ হবে এবং তার বেগ বাড়তে থাকবে। তুমি যখন ইটটাকে ছেড়ে দেবে সেটি থেমে না গিয়ে এই বেগে চলতে থাকবে।

একটি বস্তুর বেগের জন্য তার ভেতরে যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তাকে বলে গতিশক্তি এবং আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে শক্তিটি সবচেয়ে বেশি দেখে অভ্যস্ত, সেটি সম্ভবত এই গতিশক্তি। যেমন- একটা ইটের উপর একটা হাতুড়ি রেখে দিলে ইটটার কিছুই হয় না। কিন্তু তুমি যদি হাতুড়িটা প্রবল বেগে নিচে নামিয়ে আন তাহলে ইটটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যেতে পারে।

স্থির হাতুড়ির মাঝে কোনো শক্তিই নেই কিন্তু গতিশীল হাতুড়ির মাঝে অনেক শক্তি। আমরা ইচ্ছে করলে বেগের জন্য যে গতিশক্তি তৈরি হয় তার পরিমাণটাও বের করে ফেলতে পারি। তার জন্য আমাদের জানতে হবে একটি ভরের উপর বল প্রয়োগ করা হলে তার কত ত্বরণ হয়।

আমরা যখন অভিকর্ষজ বিভব শক্তি বের করেছি তখন দেখেছি ওজন বা অভিকর্ষ বলের পরিমাণ হচ্ছে সম, যেখানে স হচ্ছে ভর এবং ম হচ্ছে অভিকর্ষজ ত্বরণ। এটি শুধু অভিকর্ষ বল কিংবা অভিকর্ষ ত্বরণের জন্য সত্যি নয়, এটি সকল বল এবং সকল ত্বরণের জন্য সত্য।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে