দ্বিতীয় অধ্যায়
প্রশ্ন :পরিবেশ সংরক্ষণের ৪টি উপায় লেখো।
উত্তর : পরিবেশ সংক্ষণের ৪টি উপায় হলো-
(ক) প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কমানো।
(খ) গাড়ির ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ করা, গাড়ি কম ব্যবহার করে পায়ে হাঁটার অভ্যাস করা।
(গ) কলকারখানার বর্জ্য, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি পরিশোধন করে বাইরে ফেলা।
(ঘ) ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা।
প্রশ্ন : শব্দ দূষণের একটি কারণ লেখো। হঠাৎ উচ্চশব্দের কারণে মানবদেহে সৃষ্ট দুটি প্রভাব লেখো। শব্দদূষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার দুটি উপায় লেখো।
উত্তর : শব্দদূষণের একটি কারণ গাড়ির হর্ন। হঠাৎ উচ্চশব্দের কারণে মানবদেহে সৃষ্ট দুটি প্রভাব হলো :
র. শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি যেমন- শ্রবণশক্তি হ্রাস, কর্মক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি;
রর. মানসিক সমস্যা সৃষ্টি যেমন- ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি।
শব্দদূষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার দুটি উপায় হলো-
র. উচ্চশব্দ সৃষ্টি না করে (যেমন : উচ্চৈঃস্বরে গান, লাউড স্পিকার, মাইক ইত্যাদি না বাজিয়ে) শব্দদূষণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
রর. উচ্চৈঃস্বরে গাড়ির হর্ন না বাজিয়ে শব্দদূষণ থেকে রক্ষা পেতে পারি।
প্রশ্ন : মাহফুজদের স্কুলের কাছে হাইওয়ে রাস্তার পাশে কয়েকটি দোকানে সারাদিন উচ্চৈঃস্বরে মাইক বাজায়, এতে কোন ধরনের দূষণ ঘটে? এ দূষণ রোধে মাহফুজ ও তার বন্ধুরা মিলে কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে?
উত্তর : উচ্চৈঃস্বরে মাইক বাজানোর ফলে শব্দদূষণ ঘটে।
মাহফুজ ও তার বন্ধুরা মিলে শব্দদূষণ রোধে যেসব পদক্ষেপ নিতে পারে, তা নিচে উলেস্নখ করা হলো-
১. উচ্চশব্দে মাইক বাজানো বন্ধ করতে অনুরোধ করতে পারে।
২. নিজে উচ্চশব্দে সিডি পেস্নয়ার, টিভি না বাজিয়ে এবং অন্যকেও না বাজাতে উৎসাহিত করতে পারে।
৩. গাড়ির হর্ন যাতে বিনা প্রয়োজনে না বাজানো হয় তার জন্য পোস্টার লিখতে পারে।
৪. নিজে উচ্চৈঃস্বরে গোলমাল না করে, বন্ধু ও পাড়া-প্রতিবেশীদের এ সব থেকে বিরত থাকতে বলতে পারে।
প্রশ্ন :তোমার মতে কী কী কারণে বায়ু দূষিত হচ্ছে?
উত্তর : বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস, ধূলিকণা, ধোঁয়া, দুর্গন্ধ বায়ুতে মিশে বায়ু দূষিত হয়। যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া বায়ুদূষণের প্রধান কারণ। গাছপালা ও ময়লা-আবর্জনা পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ার মাধ্যমেও বায়ু দূষিত হয়। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা এবং মলমূত্র ত্যাগের ফলে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ায়। আর এভাবেই বায়ু দূষিত হয়। বৃক্ষনিধন ও জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কারণে বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এটাও বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ।
প্রশ্ন : কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশক, রাসায়নিক পদার্থ ও তেল ইত্যাদির ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে। উক্ত পদার্থগুলোর ব্যবহার পরিবেশে কোন ধরনের দূষণ ঘটাচ্ছে? এই দূষণ প্রতিরোধে চারটি উপায় লেখো।
উত্তর : কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশক, রাসায়নিক পদার্থ ও তেল মাটি দূষণ ঘটাচ্ছে। মাটি দূষণ প্রতিরোধে চারটি উপায় নিচে উলেস্নখ করা হলো :
১. কলকারখানার ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ যেন মাটিতে মিশে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এসব বর্জ্য পদার্থকে পরিশোধনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
২. বাড়িঘরের আবর্জনা, বর্জ্য ইত্যাদি যেখানে-সেখানে না ফেলে কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় গর্ত করে পুঁতে রাখতে হবে।
৩. পস্নাস্টিক, পলিথিন, কাচ এবং ধাতব জিনিস যেখানে-সেখানে ফেলা যাবে না। এদের পুনরায় প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে মাটি দূষণ অনেক কমে যাবে।
৪. কৃষি কাজে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে জৈবসার ও জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
প্রশ্ন : প্রকৃতিতে অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের স্থিতিশীলতা পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। এই স্থিতিশীলতা রক্ষায় কোনটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে? প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় তার চারটি ভূমিকা উলেস্নখ করো।
উত্তর : প্রকৃতিতে অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের স্থিতিশীলতা রক্ষায় গাছপালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় গাছপালার চারটি ভূমিকা হলো :
১. গাছপালা বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন ছাড়ে এবং বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে। এতে বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের ভারসাম্য রক্ষা পায়।
২. গাছপালা শিকড়ের সাহায্যে মাটিকে আটকে রেখে ভূমিক্ষয় রোধে সহায়তা করে।
৩. ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, নদীভাঙন, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে গাছপালা জনপদকে রক্ষা করে।
৪. গাছপালা আবহাওয়ার চরমভাব দূর করে।
প্রশ্ন : আমাদের দেশে কৃষকরা কৃষিকাজে কেন অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে? এর ফলে পরিবেশের তিনটি বিপর্যয় লেখো।
উত্তর : আমাদের দেশে জনসংখ্যা দ্রম্নত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হচ্ছে। অধিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য কৃষিজমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার বাড়ছে। এর ফলে পরিবেশে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে। নিচে তা বর্ণনা করা হলো :
১. সার ও কীটনাশক উভয়ই রাসায়নিক পদার্থ। এ রাসায়নিক পদার্থ বৃষ্টি ও বন্যার পানির সঙ্গে পুকুর, খাল, বিল ও নদীতে গিয়ে পড়ছে। ফলে পানি দূষিত হচ্ছে।
২. কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। ফলে ফসল উৎপাদন কমে যায়।
৩. জমিতে কীটনাশক ব্যবহারে অনেক উপকারী জীব মারা যাচ্ছে এবং দিন দিন তাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে কীটনাশকের ব্যবহার পরোক্ষভাবে পরিবেশকে দূষিত হতে সাহায্যে করছে।
তৃতীয় অধ্যায়
১. বরফসহ পানির গস্নাসের বাইরের অংশ কেন ভিজে যায় তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বরফসহ পানির গস্নাসের বাইরের অংশে বাতাসে থাকা জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জমা হয় বলে সে অংশ ভিজে যায়।
ঘনীভবন বাষ্পীভবনের বিপরীত প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় বাষ্পীভূত পানি তাপ হারিয়ে তরল পানিতে পরিণত হয়। বরফসহ পানির গস্নাসের বাইরের অংশ স্বাভাবিকভাবেই ঠান্ডা হয়। বায়ু যখন ওই ঠান্ডা গস্নাসের সংস্পর্শে আসে তখন বায়ুতে থাকা জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে বিন্দু বিন্দু পানিতে পরিণত হয়। ফলে গস্নাসের বাইরের অংশ ভিজে যায়।
২. পানিচক্র ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : যে প্রক্রিয়ায় পানি বিভিন্ন অবস্থায় পরিবর্তিত হয়ে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমন্ডলের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তাই পানিচক্র। এই চক্রের মাধ্যমে সর্বদাই পানির অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। সাগর ও নদীর পানি বাষ্পীভূত হয়ে জলীয়বাষ্পে পরিণত হয়। বাষ্পীভূত পানি উপরে উঠে ঠান্ডা ও ঘনীভূত হয়ে পানির বিন্দুতে পরিণত হয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানির বিন্দু একত্রিত হয়ে মেঘ সৃষ্টি করে। এই মেঘের পানিকণা বড় হয়ে বৃষ্টিপাত হিসেবে আবার ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। শীতপ্রধান দেশে তুষার ও মেঘ থেকেই পৃথিবীতে পড়ে। বৃষ্টির পানি সাধারণত মাটিতে শোষিত হয় অথবা নদীতে গড়িয়ে পড়ে। মাটিতে শোষিত পানি ভূগর্ভস্থ পানি হিসেবে জমা থাকে। নদীতে গড়িয়ে পড়া পানি সমুদ্রে প্রবাহিত হয় এবং বাষ্পীভূত হয়ে আবার বায়ুতে ফিরে যায়।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়