চট্টগ্রাম বিভাগ
৫. কুমিলস্না জেলা : প্রাচীনকালে এটি 'সমতট' জনপদের অন্তর্গত ছিল এবং পরে ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ হয়। 'কুমিলস্না' নামকরণের অনেক প্রচলিত লোককথা আছে, যার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য চৈনিক পরিব্রাজক ওয়াং চোয়াং কর্তৃক সমতট রাজ্য পরিভ্রমণের বৃত্তান্ত। তার বর্ণনায় কিয়া-মল-ঙ্কিয়া (করধসড়ষড়হশরধ) নামক স্থানের বর্ণনা রয়েছে তা থেকে কমলাঙ্ক বা কুমিলস্নার নামকরণ হয়েছে। ১৯৬০ সালে কুমিলস্না জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
৬. কক্সবাজার জেলা : আরব ব্যবসায়ী ও ধর্মপ্রচারকরা অষ্টম শতকে চট্টগ্রাম ও আকিব বন্দরে আগমন করেন। এই দুই বন্দরের মধ্যবর্তী হওয়ায় কক্সবাজার এলাকা আরবদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসে। নবম শতাব্দীতে কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম হরিকেলার রাজা কান্তিদেব দ্বারা শাসিত হয়। ৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে আরাকান রাজা সুলাত ইঙ্গ চট্টগ্রাম দখল করে নেয়ার পর থেকে কক্সবাজার আরাকান রাজ্যের অংশ হয়। ১৭৮৪ সালে বার্মারাজ বোধাপায়া আরাকান দখল করে নেয়। ১৭৯৯ সালে বার্মারাজের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রায় ১৩ হাজার আরাকনি কক্সবাজার থেকে পালিয়ে যায়। এদের পুনর্বাসন করার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একজন হিরাম কক্সকে নিয়োগ করে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই হিরাম কক্স মৃতু্যবরণ করেন। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় তার অবদানের জন্য কক্স-বাজার নামক একটি বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কক্স-বাজার থেকে কক্সবাজার নামের উৎপত্তি।
৭. ফেনী জেলা : ফেনী নদীর নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম রাখা হয় ফেনী। মধ্যযুগে কবি ও সাহিত্যিকদের কবিতা ও সাহিত্যে একটি বিশেষ নদীর গ্রোদধা ও ফেনী পারাপারের ঘাট হিসেবে আমরা ফনী শব্দটি পাই। ষোড়শ শতাব্দীতে কবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর পরাগলপুরের বর্ণনায় লিখেছেন, 'ফনী নদীতে বেষ্টিত চারিধার, পূর্বে মহাগিরি পার পাই তার'। সতের শতকে মির্জা নাথানের ফার্সি ভাষায় রচিত 'বাহরিস্থান-ই-গায়েরিতে' ফনী শব্দ ফেনীতে পরিণত হয়। আটারো শতকের শেষ ভাগে কবি আলী রেজা প্রকাশ কানু ফকির তার পীরের বসতি হাজীগাঁওয়ের অবস্থান সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন, 'ফেনীর দক্ষিণে এক বর উপাম, হাজীগাঁও করিছিল সেই দেশের নাম'। মোহাম্মদ মুকিম তার পৈতৃক বসতির বর্ণনাকালে বলেছেন, 'ফেনীর পশ্চিমভাগে জুগিদিয়া দেশ'। বলাবাহুল্য তারাও নদী অর্থে ফেনী শব্দ ব্যবহার করেছেন। মুসলমান কবি-সাহিত্যিকদের ভাষায় আদি শব্দ 'ফনী' ফেনীতে পরিণত হয়েছে।