দ্বিতীয় অধ্যায়
প্রশ্ন : পরিবেশ দূষণের প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর : পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষ, জীবজন্তু ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দূষণের কারণে মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যেমন- ক্যানসার, শ্বাসজনিত রোগ, পানিবাহিত রোগ, ত্বকের রোগ ইত্যাদি। পরিবেশ দূষণের ফলে জীবজন্তুর আবাসস্থল নষ্ট হয়। খাদ্যশৃঙ্খল ধ্বংস হয়। ফলে অনেক জীব পরিবেশ ক্রমেই হ্রাস পায়। পরিবেশ দূষণের ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে হিমবাহ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। যা বাংলাদেশের মতো সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলোর জন্য হুমকিস্বরূপ। শব্দদূষণের কারণে মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সৃষ্ট হয়। এর ফলে অবসন্নতা, শ্রবণশক্তি হ্রাস, ঘুমে ব্যাঘাত, কর্মক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন : পরিবেশ সংরক্ষণের ৫টি উপায় লেখো।
উত্তর : পরিবেশ সংরক্ষণের ৫টি উপায় হলো-
১. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো।
২. কাজ শেষে বাতি নিভিয়ে রেখে বিদু্যৎ অপচয় রোধ করা।
৩. গাড়িতে চড়ার পরিবর্তে পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে চলাচল করা।
৪. প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কমিয়ে পুনর্ব্যবহার ও রিসাইকেল করা।
৫. কারখানার বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ, তেল ইত্যাদি পরিবেশে ফেলার আগে পরিশোধন করা।
প্রশ্ন : পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষ, জীবজন্তু ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো হলো-
১. দূষণের কারণে মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। যেমন- ক্যানসার, শ্বাসজনিত রোগ, পানিবাহিত রোগ, ত্বকের রোগ ইত্যাদি।
২. দূষণের ফলে জীবজন্তুর আবাসস্থল নষ্ট হয়, খাদ্যশৃঙ্খল ধ্বংস হয়। ফলে অনেক জীব পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
৩. পরিবেশ দূষণের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। ফলে হিমবাহ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যায়। যা সমুদ্র তীরবর্তী দেশগুলোর জন্য হুমকিস্বরূপ। ৪. মাটি দূষণের ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয় এবং ফসলের পরিমাণ কমে যায়।
৫. শব্দ দূষণের ফলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। যেমন- অবসন্নতা, শ্রবণশক্তি হ্রাস, ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি, কর্মক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি।
প্রশ্ন : মাটি দূষণের কারণ ও প্রভাব উলেস্নখ করো।
উত্তর : বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর বস্তু মাটিতে মেশার ফলে মাটি দূষিত হয়। কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশক, গৃহস্থালি ও হাসপাতালের বর্জ্য, কলকারখানার বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও তেল ইত্যাদির মাধ্যমে মাটি দূষিত হয়।
মাটি দূষণের ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়। গাছপালা ও পশুপাখি মারা যায় এবং তাদের বাসস্থান ধ্বংস হয়। মাটি দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। দূষিত মাটিতে উৎপন্ন ফসল খাদ্য হিসাবে গ্রহণের ফলে মানুষ ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।
প্রশ্ন : আমরা কীভাবে শব্দদূষণ প্রতিরোধ করতে পারি?
উত্তর : শব্দদূষণ মানুষ ও জীবজন্তুর স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন করে। আমরা এ দূষণ রোধে কয়েকটি কাজ করতে পারি। যেমন--
১. বিনা প্রয়োজনে গাড়ির হর্ন না বাজানো।
২. উচ্চৈঃস্বরে গান না বাজানো।
৩. লাউড স্পিকার বা মাইক না বাজানো।
৪. কলকারখানার লোকালয় থেকে দূরে স্থাপন করা।
৫. বাসায়, ক্লাসে, অফিসে উচ্চৈঃস্বরে কথা না বলা।
প্রশ্ন : মাটি দূষণ কেন মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
উত্তর : বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর বস্তু মাটিতে মেশার ফলে মাটি দূষিত হয়। দূষিত মাটি থেকে উৎপন্ন ফসলে দূষক পদার্থ ও জীবাণু থেকে যায়। যা রান্নার পরও খাবারে বিদ্যমান থাকে। এসব খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষের ক্যানসারসহ অন্যটি জটিল ও দুরারোগ্য রোগ হয়। মাটি দূষণের ফলে জমির উর্বরতা হ্রাস পায় বলে ফসল উৎপাদন কমে গিয়ে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। আবার এ দূষণের ফলে গাছপালা, পশুপাখি মরে যায় ও আমরা পুষ্টিকর খাদ্যের উৎস হারিয়ে ফেলি, যা আমাদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে।
প্রশ্ন : জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কেন পরিবেশ দূষিত হয়?
উত্তর : জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশ দূষিত হয়। বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা মেটানোর জন্য মানুষ পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করছে। এতে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের পরিবর্তন হচ্ছে। যেমন- মানুষ তার খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য গাছপালা কেটে ফসল চাষ করছে। আসবাবপত্র, কলকারখানা তৈরির জন্য গাছপালা কাটা হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এ ছাড়া বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য জমিতে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। যা মাটিকে দূষিত করছে। এসব রাসায়নিক পদার্থ বৃষ্টির পানি দ্বারা বাহিত হয়ে জলাশয়ের পানি দূষিত করছে। বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা মেটা তো অতিরিক্ত যানবাহন ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে এ থেকে নির্গত ধোঁয়া দিয়ে বায়ুদূষণ হচ্ছে। যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের পরিবেশ দূষণ বাড়তেই থাকবে।
প্রশ্ন : মাটি এবং পানি দূষণের সাদৃশ্য কোথায়?
উত্তর : পানিতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত হয়ে পানি দূষিত হয়। মাটিও বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ দ্বারা দূষিত হয়। কীটনাশক, গৃহস্থালি ও হাসপাতালের বর্জ্য, কল-কারখানার বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও তেল দ্বারা মাটি এবং পানি উভয়ই দূষিত হয়। এক্ষেত্রে মাটি এবং পানি দূষণের সাদৃশ্য রয়েছে।
প্রশ্ন : পরিবেশ সংরক্ষণ কী?
উত্তর : প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা ও যথাযথ ব্যবহারই হলো পরিবেশ সংরক্ষণ। পরিবেশ সংরক্ষণ করতে হলে আমাদের পরিবেশের উপাদানগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। যেমন- বিদু্যৎ বা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো, কাজ শেষে বাতি নিভিয়ে রাখা, গাড়ির পরিবর্তে পায়ে হাঁটা ও সাইকেলে চলাচল করা, পানির অপচয় রোধ করা, কারখানার বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ, তেল ইত্যাদি পরিবেশে ফেলার আগে পরিশোধন করা, ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা। এ ছাড়া গাছ লাগিয়ে ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে আমরা পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি।
প্রশ্ন : আমরা কীভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি?
উত্তর : আমরা যেভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি তা হলো-
(ক) বিদু্যৎ বা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আমরা পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারি।
(খ) কাজ শেষে বাতি নিভিয়ে রেখে বিদু্যৎ অপচয় রোধ করতে পারি।
(গ) গাড়িতে চড়ার পরিবর্তে হাঁটা বা সাইকেল ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারি।
ঘ) প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কমিয়ে, পুনর্ব্যবহার করে এবং রিসাইকেল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারি।
(ঙ) ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে এবং গাছ লাগিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি।
পরিবেশ সংরক্ষণের অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।
প্রশ্ন : আমরা কীভাবে শব্দদূষণ রোধ করতে পারি?
উত্তর : শব্দদূষণ রোধে আমাদের করণীয়-
(ক) উচ্চৈঃস্বরে গান বাজানো যাবে না।
(খ) বিনা প্রয়োজনে গাড়ির হর্ন না বাজানো।
(গ) মাইক বা লাউড স্পিকার না বাজানো।
(ঘ) হাসপাতাল বা বিদ্যালয়ের পাশে উচ্চশব্দে কোনো কিছু না বাজানো।
(ঙ) জেনারেটরের শব্দ নিয়ন্ত্রণ করা।
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়