অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ
প্রকাশ | ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
হাবিবুর রহমান বাপ্পা, সহকারী শিক্ষক, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
প্রথম অধ্যায়
কোনো বস্তুর গতি বলতে আমরা সময়ের সঙ্গে বস্তুটির অবস্থানের পরিবর্তন বুঝিয়ে থাকি। নানাভাবে অবস্থানের পরিবর্তন হতে পারে- দ্রম্নত কিংবা ধীর, সরল অথবা বক্র, সম বা অসম ইত্যাদি। গতি যেরকমই হয়ে থাকুক, সেটি ব্যাখ্যা করতে হলে সময়ের সঙ্গে আমাদের বস্তুটির অবস্থান (ঢ়ড়ংরঃরড়হ) সুনির্দিষ্টভাবে পরিমাপ করতে হয়। সেটি করার জন্য আমাদের প্রয়োজন একটি স্থির বিন্দুর, যার সাপেক্ষে আমরা অবস্থান পরিমাপ করব।
তোমরা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছ প্রকৃত স্থিরবিন্দু পাওয়া সহজ নয়, পৃথিবীতে একটি বিন্দুকে আমরা স্থির ধরে নিতে পারি কিন্তু পৃথিবীটা শুধু যে নিজের অক্ষে ঘুরছে তা নয়, সেটি সূর্যকে ঘিরেও ঘুরছে। আমাদের পুরো সৌরজগৎ আবার আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্র ঘিরে ঘুরছে এবং পুরো গ্যালাক্সিটিই বিশ্বব্রহ্মান্ডের প্রসারণের কারণে ছুটে চলছে।
দূরত্ব ও সরণ (উরংঃধহপব ধহফ উরংঢ়ষধপবসবহঃ) :
আমাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য আমরা আমাদের আশপাশের কোনো একটি বিন্দুকে স্থির ধরে নিয়ে তার সাপেক্ষে বস্তুর অবস্থান পরিমাপ করতে পারি। এই বিন্দুটিকে বলা হয় প্রসঙ্গ বিন্দু এবং এই প্রসঙ্গ বিন্দুটি যে কাঠামোর অংশ তাকে বলা হয় প্রসঙ্গ কাঠামো শুধু তাই নয় প্রয়োজনে আমরা চলমান একটি কাঠামোকেও প্রসঙ্গ কাঠামো হিসেবে বিবেচনা করতে পারি তোমরা নবম শ্রেণিতে আপেক্ষিক সূত্র পড়ার সময় সেটি দেখতে পাবে।
প্রসঙ্গ বিন্দু নির্দিষ্ট করা হলে আমরা তার সাপেক্ষে একটি বস্তুর অবস্থান পরিমাপ করতে পারব। ধরা যাক, একটা মাঠে একটা খুঁটির সঙ্গে একটা ছাগল বেঁধে রাখা আছে, এখানে খুঁটিটি হচ্ছে প্রসঙ্গ বিন্দু। যদি বলা হয় ছাগলটি খুঁটি থেকে দুই মিটার দূরে বসে আছে তাহলে কিন্তু ছাগলটি ঠিক কোথায় আছে তুমি বলতে পারবে না।
কারণ ছাগলটি খুঁটি থেকে দুই মিটার দূরে যে কোনো দিকে থাকতে পারে! যদি বলা হয় ছাগলটি খুঁটি থেকে দক্ষিণ দিকে দুই মিটার দূরে বসে আছে তাহলে প্রসঙ্গ বিন্দুর সাপেক্ষে ছাগলটি কোথায় আছে তুমি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারবে। অর্থাৎ একটি বস্তুর অবস্থান জানতে হলে বস্তুটি প্রসঙ্গে বিন্দুর সাপেক্ষে একই সঙ্গে কোন 'দিকে' এবং কত 'দূরে' আছে দুটিই জানতে হবে।
একটি বস্তুর গতি সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে বস্তুর অবস্থান ছাড়াও দূরত্ব (উরংঃধহপব) ও সরণ (উরংঢ়ষধপবসবহঃঃ) এই দুটি রাশি বলতে কী বোঝানো হয় সেটি বুঝতে হবে। চলমান বস্তুর বেলায় একটি বস্তু যেটুকু জায়গা অতিক্রম করে তার দৈর্ঘ্যের পরিমাণ হচ্ছে দূরত্ব। সেটি সরল রেখায় হতে পারে আবার আঁকাবাঁকাও হতে পারে। দূরত্বের একটা পরিমাণ আছে কিন্তু কোনো দিক নেই।
অন্যদিকে বিজ্ঞানের ভাষায় সরণ হচ্ছে একটি বস্তু আগের অবস্থান থেকে নতুন অবস্থানে মোট কতটুকু সরে গেছে তার পরিমাপ। তুমি যদি উত্তর দিকে ১০ কিলোমিটার গিয়ে আবার দক্ষিণ দিকে ৫ কিলোমিটার ফিরে আস তাহলে সব মিলিয়ে তুমি ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছ কিন্তু তোমার সরণ হয়েছে উত্তর দিকে মাত্র ৫ কিলোমিটার। সরণের বেলায় সব সময় দিক নির্দিষ্ট করে দিতে হয়।
দ্রম্নতি ও বেগ (ঝঢ়ববফ ধহফ ঠবষড়পরঃু)
তোমার আশপাশে তাকালেই দেখবে পথে-ঘাটে গাড়ি, বাস, সাইকেল কিংবা পথচারী চলছে। সবাই কিন্তু একইভাবে চলছে না, কেউ অনেক দ্রম্নত, কেউ একটু ধীরে, যেটি বোঝানোর জন্য আমরা বলে থাকি কারও বেগ বেশি কিংবা কারও বেগ কম। কিন্তু বিজ্ঞানের ভাষায় বেগ কথাটির একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে এবং বেগ ছাড়া দ্রম্নতি নামেও একটি রাশি রয়েছে।
প্রথমে দ্রম্নতি বলতে কী বোঝানো হয় সেটি বলা যাক। আমরা দূরত্ব এবং সরণ এই দুটি রাশির সঙ্গে পরিচিত হয়েছি, একক সময়ে অতিক্রান্ত দূরত্ব হচ্ছে দ্রম্নতি। অর্থাৎ কোনো বস্তু যদি : সময়ে ফ দূরত্ব অতিক্রম করে তাহলে তার দ্রম্নতি হচ্ছে : া=ফ/ঃ
যেহেতু দূরত্বের কোনো নির্দিষ্ট দিক নেই তাই দ্রম্নতিরও কোনো নির্দিষ্ট দিক নেই, শুধু পরিমাণ আছে।
একটি বস্তু কতটুকু জায়গা অতিক্রম করল, তাকে বলে 'দূরত্ব'। দূরত্ব মাপতে আমরা ব্যবহার করি ইঞ্চি, ফুট, সেন্টিমিটার, মিটার ইত্যাদি।
একটি বস্তু কোন দিকে কতদূর গেল, তাকে বলে 'সরণ'। সরণ বোঝাতে আমরা ব্যবহার করি, উত্তর দিকে দুই কিলোমিটার, ডানদিকে পাঁচ ফুট, ওপর দিকে তিন সেন্টিমিটার, সামনের দিকে সাত মিটার ইত্যাদি।
তবে এখানে মনে রাখতে হবে এই দ্রম্নতিটি হচ্ছে পুরো সময়ের একটি গড় দ্রম্নতি, আমরা কিন্তু তাৎক্ষণিক দ্রম্নতি জানি না। বিশেষ অবস্থায় বস্তুটি যদি সম-দ্রম্নতিতে যায় শুধু তাহলে তার গড় দ্রম্নতির পরিমাণ আর তাৎক্ষণিক দ্রম্নতির মান সমান হবে।
আমরা যদি দ্রম্নতির ব্যাপারটা ঠিকভাবে বুঝে থাকি তাহলে এবারে খুব সহজেই বেগ বলতে কী বোঝায় সেটি বুঝে যাব। একটা চলন্ত বস্তুর দ্রম্নতির সাথে সঙ্গে সঙ্গে যদি তার দিকটাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় তাহলে সেটাকে বলে বেগ। অর্থাৎ 'একটি নির্দিষ্ট দিকে' একক সময়ে একটা বস্তু যেটুকু দূরত্ব অতিক্রম করে সেটা হচ্ছে তার বেগ।
কাজেই কোনো কিছুর বেগ বের করতে হলে তার পরিমাণের সঙ্গে সঙ্গে দিকটাও বের করে নিতে হয়। যদি আমরা শুধু সরল রেখায় গতি নিয়ে মাথা ঘামাই তাহলে বেগ আর দ্রম্নতির মাঝে কোনো পার্থক্য নেই, তখন বেগের পরিমাণটাকে আমরা বলব দ্রম্নতি।
মনে রেখ দ্রম্নতির বেলায় যেরকম বলেছিলাম, আমরা যদি অতিক্রান্ত দূরত্বকে সময় দিয়ে ভাগ করি যে, দ্রম্নতি বের করি সেটা হচ্ছে ওই সময়ের গড় দ্রম্নতি, বেগের বেলাতেও সেটা সত্যি। আমরা যদি কোনো একটি নির্দিষ্ট দিকে ধাবমান একটি বস্তুর সরণকে সময় দিয়ে বেগ বের করি তাহলে আমরা কিন্তু বস্তুটির তাৎক্ষণিক বেগ বের করি না, আমরা তার ওই সময়ের গড় বেগ বের করি। শুধু বস্তুটি যদি সমবেগে যায় তাহলে তার তাৎক্ষণিক বেগ আর গড় বেগের মান সমান হবে।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়