৫। নিচের শব্দগুলো নিয়ে গঠিত খাদ্যশৃঙ্খলের সঠিক ক্রম ব্যাখ্যা করো।
ঈগল, সূর্য, ঘাস, পোকামাকড়, সাপ, ব্যাঙ।
উত্তর : বাস্তুতন্ত্রের দুটি জীব উপাদান হলো উৎপাদক ও খাদক। সবুজ উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে বলে তাদের উৎপাদক বলা হয়। প্রাণীরা খাদ্য উৎপাদন করতে পারে না। এরা খাদক হিসেবে বিবেচিত। ঈগল, সূর্য, ঘাস, পোকামাকড়, সাপ, ব্যাঙ শব্দগুলো নিয়ে গঠিত খাদ্যশৃঙ্খলটি হলো-
সূর্য-ঘাস-পোকামাকড়-ব্যাঙ-সাপ-ঈগল।
সকল শক্তির উৎস সূর্য। এই শক্তি উৎপাদকের মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরের খাদকের দেহে পর্যায়ক্রমে সঞ্চারিত হয়। ঘাস সূর্যের আলো ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করে, পোকামাকড় ঘাস ও অন্যান্য উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকে, ব্যাঙ পোকামাকড় খায়। একইভাবে সাপ ব্যাঙ খায় এবং ঈগল সাপ খায়। এভাবে খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে শক্তিপ্রবাহ সূর্য থেকে ঈগল পর্যন্ত সঞ্চারিত হয়।
৬। বায়ুর উপর জীব কীভাবে নির্ভরশীল তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : বেঁচে থাকার জন্য জীব পরিবেশের বিভিন্ন জড় উপাদানের উপর নির্ভরশীল। জীবের অন্তর্ভুক্ত হলো মানুষ, অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ আর বায়ু গুরুত্বপূর্ণ একটি জড় উপাদান। বায়ুতে রয়েছে অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন ইত্যাদি গ্যাসীয় পদার্থ। বায়ুর এই উপাদানগুলোর জন্যই জীব বায়ুর উপর নির্ভরশীল। যেমন-
(র) প্রতিটি জীবের শ্বসন তথ্য শ্বাসের জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন। শ্বসনের ফলে উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড বায়ুতে নির্গত হয়।
(রর) সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরিতে বায়ুর কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করে।
(ররর) বায়ুতে থাকা নাইট্রোজেন উদ্ভিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান।
৭। উদ্ভিদের জন্য বীজের বিস্তরণ কেন গুরুত্বপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : নতুন নতুন উদ্ভিদ আবাস গড়ে তোলার জন্য উদ্ভিদের বীজের বিস্তরণ গুরুত্বপূর্ণ।
মাতৃ উদ্ভিদ থেকে বিভিন্ন স্থানে বীজের ছড়িয়ে পড়াই হলো বীজের বিস্তরণ। নতুন নতুন উদ্ভিদ আবাস গড়ে তুলতে বীজের বিস্তরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বীজের বিস্তরণ না ঘটলে কোনো উদ্ভিদ শুধু একটি নির্দিষ্ট স্থানেই জন্মাবে। অন্য কোথাও ওই উদ্ভিদকে আর পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ পৃথিবীর সব স্থানে শুধু একই ধরনের উদ্ভিদ জন্মাবে। ফলে অন্য উদ্ভিদের পুষ্টি ব্যাহত হবে। এ ছাড়া বীজের বিস্তরণ না ঘটলে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর খাদ্যের অভাব দেখা দেবে এবং পশুপাখির আশ্রয়স্থল ধ্বংস হবে। খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাবে অনেক প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটবে। ফলে জীববৈচিত্র্যে ভারসাম্য নষ্ট হবে। সুতরাং কোনো একটি উদ্ভিদের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে নতুন নতুন আবাস গড়ে তুলতে বীজের বিস্তরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৮। তোমার টেবিলের উপরে রাখা গাছটি মারা যাচ্ছে। তোমার বন্ধুরা গাছটিকে জানালার পাশে নিয়ে রাখার পরামার্শ দিল। কেন?
উত্তর : টেবিলে রাখা মরণাপন্ন গাছটির খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া চালু করার জন্য আমার বন্ধুরা গাছটিকে জানালার পাশে নিয়ে রাখার পরামর্শ দিল।
সবুজ উদ্ভিদ পাতায় থাকা ক্লোরোফিলের সাহায্যে মাটির পানি, বায়ুর কার্বন ডাইঅক্সাইড ও সূর্যালোকের উপস্থিতিতে শর্করাজাতীয় খাদ্য তৈরি করে। বাস্তুসংস্থানে থাকা উপাদানগুলোর মধ্যে একমাত্র সবুজ উদ্ভিদই খাদ্য উৎপাদক। কিন্তু সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে এ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে। তাই টেবিলের উপরে রাখা গাছটি মারা যাচ্ছিল। গাছটিকে জানালার পাশে নিয়ে এলে তা আবার সজীব হয়ে ওঠে।
৯। কীভাবে পরিবেশে খাদ্যশৃঙ্খল তৈরি হয়?
উত্তর : বাস্তুসংস্থানে খাদ্য উৎপাদক সবুজ উদ্ভিদ ও খাদ্য গ্রহণকারী অন্যান্য প্রাণীর (খাদক) পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে খাদ্যশৃঙ্খল তৈরি হয়।
সব প্রাণীর শক্তির জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদ সূর্যের আলো ব্যবহার করে নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করে। পোকা-মাকড় উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকে। আবার ব্যাঙ পোকা-মাকড়কে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। একইভাবে সাপ ব্যাঙ খায় এবং ঈগল সাপ খায়। এভাবেই শক্তি উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে প্রবাহিত হয়। বাস্তুসংস্থানে উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে শক্তিপ্রবাহের এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়াই হলো খাদ্যশৃঙ্খল। সবুজ উদ্ভিদ থেকে প্রতিটি খাদ্যশৃঙ্খলের শুরু।
১০। পরিবেশে কীভাবে খাদ্যজাল তৈরি হয়?
উত্তর : পরিবেশে একাধিক খাদ্যশৃঙ্খল একত্রিত হয়ে খাদ্যজাল তৈরি হয়।
যে কোনো বাস্তুসংস্থানে অনেক খাদ্যশৃঙ্খল থাকে। এসব খাদ্যশৃঙ্খল কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং বিভিন্ন খাদ্যশৃঙ্খল পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। বাস্তুসংস্থানের সব উদ্ভিদ ও প্রাণী কোনো না কোনো খাদ্যশৃঙ্খলের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- ঈগল, সাপ, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, ব্যাঙ ও অন্যান্য প্রাণী খেয়ে থাকে। এটি একটি খাদ্যশৃঙ্খল। আবার সাপ খরগোশ, ইঁদুর, ব্যাঙ ও অন্যান্য প্রাণী খায়। এটি আরেকটি খাদ্যশৃঙ্খল। এভাবে একাধিক খাদ্যশৃঙ্খল একত্রিত হয়ে খাদ্যজাল তৈরি করে।
১১। উদ্ভিদ ও প্রাণীর নির্ভরশীলতা কোন শক্তির কারণে গড়ে উঠেছে? উদ্ভিদ ও প্রাণীর পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ক্ষেত্র উলেস্নখ করো।
উত্তর : উদ্ভিদ ও প্রাণীর নির্ভরশীলতা সৌরশক্তির কারণে গড়ে উঠেছে।
উদ্ভিদ ও প্রাণীর পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ক্ষেত্র নিচে উলেস্নখ করা হলো-
(র) প্রতিটি জীব শ্বাসকার্যে অক্সিজেন ব্যবহার করে ও কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে। সবুজ উদ্ভিদ খাদ্য তৈরিতে এই কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করে ও অক্সিজেন ত্যাগ করে।
(রর) সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করে। প্রাণীরা খাদ্যের জন্য সবুজ উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। আবার মৃত জীবদেহ মাটিতে মিশে গিয়ে প্রাকৃতিকভাবে সারে পরিণত হয় এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। আর এ পুষ্টি উপাদানগুলো উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য একান্ত প্রয়োজন।
(ররর) কীট-পতঙ্গ, পাখি ইত্যাদি প্রাণীর মাধ্যমে উদ্ভিদের পরাগায়ণ ঘটে। পরাগায়ণের জন্য ফল সৃষ্টি হয়, যা প্রাণী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
(রা) অনেক প্রাণীর মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভিদের বীজ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং নতুন নতুন উদ্ভিদ আবাস সৃষ্টি হয়। আবার অনেক উদ্ভিদ আছে যেগুলো বিভিন্ন প্রাণী এবং কীটপতঙ্গের আবাসস্থল।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়