তৃতীয় অধ্যায়
প্রতিরোধ : ডায়রিয়া প্রতিরোধে ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো বিকল্প নেই। খাওয়ার আগে, বাথরুম ব্যবহারের পরে, বাইরে থেকে বাসায় ফিরে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। বাইরের খোলা বাসি খাবার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খাবার গ্রহণ ও নিরাপদ পানি পান করার মাধ্যমে আমরা ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে পারি।
টাইফয়েড : টাইফয়েড হলে অনেক দিন ধরে জ্বর থাকতে পারে। এ ছাড়া বমি, মাথাব্যথা, পেটব্যথা, ক্ষুধামন্দা ও ক্লান্তি ভাবও হতে পারে।
প্রতিকার : জ্বর যদি পাঁচ থেকে সাত দিনের বেশি থাকে তাহলে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে টাইফয়েড কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টাইফয়েডের চিকিৎসা করতে হবে।
প্রতিরোধ : টাইফয়েড ও ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায়গুলো একই। তাই টাইফয়েড প্রতিরোধ করার জন্য ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায়গুলো মেনে চলতে হবে।
ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া : এ সমস্ত রোগে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জ্বর, শরীর ব্যথা ও মাথাব্যথা হয়ে থাকে।
প্রতিকার : এ সমস্ত রোগে দ্রম্নত ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা না করালে বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
প্রতিরোধ : বর্ষাকালে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বৃষ্টির পানি যাতে তিন দিনের বেশি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দিনে ও রাতে যেকোনো সময় ঘুমালে মশারি টাঙাতে হবে। শিশুদের পুরো শরীর ঢেকে থাকে এ রকম জামাকাপড় পরানোও এ ধরনের রোগ প্রতিরোধের অন্যতম উপায়।
হিটস্ট্রোক : দীর্ঘক্ষণ ধরে সূর্যের আলোতে অধিক তাপমাত্রায় অবস্থান করলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। কোনো মানুষের শরীরের তাপমাত্রা যদি ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা তার উপরে উঠে যায়, তার মধ্যে অস্থিরতা, কথা বলার জড়তা, চিনতে না পারা, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে। বমি ভাব হতে পারে, দ্রম্নত শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হৃৎকম্পনের গতি বেড়ে যেতে পারে ও মাথাব্যথা হতে পারে।
প্রতিকার : হিটস্ট্রোকে সাধারণত জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। তা না হলে মস্তিষ্ক, হৃৎপিন্ড, কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত দ্রম্নত সম্ভব অধিক তাপমাত্রার স্থান থেকে ঠান্ডা ছায়াযুক্ত স্থানে আনতে হবে। এরপর তার জামাকাপড় ঢিলা করে, অতিরিক্ত কাপড় সরিয়ে শুইয়ে দিতে হবে। পা একটু উঁচু করে রাখা যেতে পারে।
প্রতিরোধ : তাকে ঠান্ডা পানির স্পঞ্জ করা যেতে পারে এবং ফ্যানের বাতাস বা হাত-পাখা দিয়ে বাতাস করতে হবে। গামছা বা কোনো কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে ঘাড়ের নিচে, বগলের মাঝখানে বা কুঁচকিতে রাখা যেতে পারে। সম্ভব হলে একটি কাঁথা বা কম্বল ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে তাকে ঢেকে দেওয়া যেতে পারে। অল্প পরিমাণ ঠান্ডা পানি খাওয়ানো যেতে পারে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে যত দ্রম্নত সম্ভব হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে আমাদের দীর্ঘক্ষণ রোদে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। গ্রীষ্মকালে ছাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রচুর নিরাপদ পানি পান করাতে হবে। খোলা মাঠে বা বাইরে কাজ করার সময় কিছুক্ষণ পরপর ঠান্ডা ছায়াযুক্ত স্থানে বিশ্রাম নিতে হবে।
অভিজ্ঞতা-২ (মূল বই : পৃষ্ঠা ৪১)
পরিবার এবং প্রতিবেশীদের সাথে আলোচনা করে তোমরা ঋতু পরিবর্তনজনিত সাধারণ রোগব্যাধিতে রোগ প্রতিকারের প্রচলিত উপায় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছ। এবার শ্রেণিকক্ষের অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকের পরামর্শ অনুযায়ী এই প্রচলিত উপায়গুলো নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা কর। আলোচনার ভিত্তিতেকোন উপায়গুলো সঠিক আর কোনগুলো সঠিক নয় তা উলেস্নখ কর। (স্বাস্থ্য সুরক্ষা বই : পৃষ্ঠা ৪১)
উত্তর : পরিবার এবং প্রতিবেশীদের সাথে আলোচনা করে আমরা ঋতু পরিবর্তনজনিত সাধারণ রোগব্যাধিতে রোগ প্রতিকারের প্রচলিত উপায় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছি। এবার শ্রেণিকক্ষে অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকের পরামর্শ অনুযায়ী এই প্রচলিত উপায়গুলো নিয়ে গভীরভাবে আলোচন করেছি। আলোচনার ভিত্তিতে আমাদের মতে কোন উপায়গুলো সঠিক আর কোনগুলো সঠিক নয় তা উলেস্নখ করা হলো :
কোন প্রচলিত উপায়টি সঠিক
-হিটস্ট্রোক রোগীকে দ্রম্নত ঠান্ডাযুক্ত স্থানে নিয়ে আসা।
-সর্দি-কাশির রোগীকে কুসুম গরম পানি খাওয়ানো হয়।
কোন প্রচলিত উপায়টি সঠিক নয়
-ডায়রিয়া হলে তরল খাবার খাওয়ানো বন্ধ রাখা হয়।
-কোথাও কেটে গেলে লেবু বা টকজাতীয় খাবার খাওয়ানো নিষেধ।
-জ্বর হলে গরম কাপড় দিয়ে গা ঢেকে দেওয়া হতো এবং ভাত খেতে দেওয়া হতো না।
-এইডস রোগকে ছোঁয়াচে রোগ মনে করা হয়।
কেন সঠিক বা কেন সঠিক নয়
-হিটস্ট্রোক রোগীর জন্য খোলা বা আলো-বাতাসযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন।
-সর্দি-কাশির রোগীকে কুসুম গরম পানি পান করলে শরীরে আরাম বোধ হয়।
-ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ বের হয়ে যায়, যা পূরণ রার জন্য তরল খাবারই বেশি প্রয়োজন।
-লেবুর মধ্যে ভিটামিন সি আছে, যা ঘা শুকানোর জন্য প্রয়োজন।
-জ্বর হলে যতটা সম্ভব গায়ে গরম কাপড় না রাখা। ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর মোছা এবং সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার খেতে দেওয়া।
-গবেষণায় দেখা গেছে এইডস কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়